Logo
Logo
×

আনন্দ নগর

জুটি নয়, এখন গল্পে রসায়ন খোঁজেন দর্শক

সিনেমার স্বর্ণালি দিন এখন শুধুই অতীত ও রূপকথার গল্প। নব্বই দশক পর্যন্ত ঢাকাই সিনেমার জৌলুস ছিল। ওই সময় শুধু গল্প নয়, নায়ক নায়িকার জুটি নিয়েও আলোচনা ছিল। গড়ে উঠেছিল জনপ্রিয় সব জুটি। কিন্তু বর্তমানে যুগ বদলের হাওয়ায় জুটি প্রথায়ও এসেছে পরিবর্তন। এখন জুটি রসায়নের চেয়ে, দর্শক গল্প খোঁজেন বেশি।

Icon

রিয়েল তন্ময়

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এক সময় ঢাকাই সিনেমায় নায়ক-নায়িকার শক্ত জুটি ছিল। বিশেষ করে সত্তর, আশি ও নব্বই দশকে সিনেমায় জুটিপ্রথা ছিল দারুণ জনপ্রিয়। এমনও হয়েছে, দর্শকদের চাপের মুখে তাদের পছন্দের জুটি নিয়ে সিনেমা বানাতে বাধ্য হয়েছেন অনেক নির্মাতা। এক থেকে অর্ধশতাধিক সিনেমাও একসঙ্গে করেছেন এমন উদাহরণও রয়েছে। দর্শক এসব জুটির রসায়ন দেখতেই প্রেক্ষাগৃহে ছুটে যেতেন। রাজ্জাক-শাবানা ছিলেন বাংলা সিনেমার ইতিহাসে তেমনই জনপ্রিয় এক জুটি। পর্দায় তাদের চোখের ভাষা, সংলাপ, গান-সব ছিল এক ধরনের প্রেমের শপথ। ফারুক-ববিতা ছিলেন গ্রামের সহজ-সরল প্রেমের গল্পের সেরা জুটি। আলমগীর-শাবানা জুটি ছিল পারিবারিক ট্র্যাজেডি রোমান্সের জাদুকর। এক সময় প্রযোজকরা সিনেমার গল্প ঠিক করার আগে জুটি ঠিক করতেন। দর্শক হলে গিয়ে টিকিট কাটত এই বিশ্বাসে যে, রাজ্জাক-শাবানা মানেই গলার ভেতর কাঁটা ফেলার মতো প্রেম, কান্না আর অভিমানের এক গল্প। কোন জুটির সিনেমা কেমন হবে, এটি দর্শক আগেই অনুমান করতে পারতেন। বলা যায়, জুটির জন্যই অনেক সিনেমা হিট হতো। জুটি প্রথায় দর্শকের এক ধরনের আস্থা ছিল তখনকার সময়। কিন্তু এখন আর সেই আলোচিত জুটি দেখা যায় না।

এখন যুগ বদলেছে, সিনেমার গল্পেও এসেছে পরিবর্তন। বদলেছে দর্শকের রুচি। নব্বই দশকের শুরুতে কয়েক বছর সালমান শাহ-শাবনূর, পরবর্তী সময়ে শাবনূর-রিয়াজ বা শাবনূর-ফেরদৌসের মতো কিছু জুটি চেষ্টা করেছে সেই রাজ্জাক-শাবানা ম্যাজিক ফিরিয়ে আনতে। বিশেষ করে সালমান শাহ-শাবনূর জুটি দর্শকদের রোমাঞ্চিত করেছে, পুরোনো আবেগে ভাসিয়েছেন। কিন্তু অন্যরা খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। শাকিব-অপু বিশ্বাস যুগে আবার সেই পুরোনো ধারা ফিরেছিল কিছুটা, যেখানে তাদের অফস্ক্রিন রসায়নও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কিন্তু তবুও সময় পালটেছে। এখন এক জুটি নিয়ে একাধিক সিনেমা নির্মাণে নির্মাতারাও অনাগ্রহ দেখান। এ ছাড়া যারাই নায়ক-নায়িকা হিসাবে কাজ করছেন, তারাও দর্শক ধরে রাখতে পারছেন না। আজকের দিনে দর্শক এক নায়ক নায়িকার প্রেম দেখতে প্রেক্ষাগৃহে যায় না। গল্প দেখতে যান। গল্পে রসায়ন খোঁজেন। প্রধান চরিত্রের শিল্পীরা এক সিনেমায় রোমান্স করবেন, অন্য সিনেমায় শত্রু হবেন, দর্শক এটাই চায়। এখনকার প্রযোজকরাও এক জুটি ধরে সিনেমা বানানোর চেয়ে ভালো গল্প খোঁজেন। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে তো এই জুটি ফর্মুলা আরও শিথিল। দর্শক গল্পের জন্য সাবস্ক্রাইব করে, তারকা দেখতে নয়। এক সময়ের সিনেমা গানের দৃশ্য মানেই ছিল নায়ক-নায়িকার প্রেম,লাজুক চাহনি, ছুটে যাওয়া, ফুল, পাখি, বৃষ্টি। বর্তমানে তা দেখা যায় না। গল্পে প্রেম থাকলেও সেটা ‘জুটি ফর্মুলা’ নয়, বরং চরিত্রের প্রয়োজনে রসায়ন। দর্শক এখন চায় চরিত্রে সত্যি প্রেম, যেটা গল্পের সঙ্গেই গড়ে ওঠে। পরিচালকরাও চান অভিনয় শিল্পীরা ফর্মুলা ভেঙে অভিনয় করুক। এক নায়িকা যেন এক নায়কের স্থায়ী পর্দা-বউ না হয়। এক নায়ক যেন এক নায়িকার সঙ্গেই আজীবন প্রেমিক না হয়। এতে গল্পের বৈচিত্র্য বাড়ে। নায়করা এখন নিজের চরিত্রের জন্য উপযুক্ত নায়িকা খুঁজে নেন, প্রযোজক চায় নতুন কেমিস্ট্রি। স্বর্ণালি যুগের মতো অটল জুটির রোমান্স আজকাল আর তৈরি হয় না, কিন্তু তার মানে রসায়ন হারিয়ে গেছে তা নয়। বরং এখনকার সিনেমা, ওয়েব ফিল্ম জুটি রসায়নের সংজ্ঞা বদলে দিয়েছে। স্ক্রিনে একবার শত্রু, একবার বন্ধু, একবার প্রেমিক-সবই সম্ভব। দর্শক এখন চায় অভিনয় ও গল্প, ফর্মুলা সেই জুটি প্রথা নয়। তাই ঢাকাই সিনেমায় নায়ক-নায়িকার যুগ বদল মানে শুধু নতুন মুখ নয়, নতুন গল্প বলার সাহস। সেই সাহসেই আজকের নির্মাতারা জুটির সংজ্ঞা নতুন করে লিখছেন। আর দর্শকও শিখছে জুটি মানে শুধু দুই তারকার প্রেম নয়, বরং গল্পের ভেতর থেকে জন্ম নেওয়া সম্পর্ক। প্রেম, দ্বন্দ্ব, বন্ধুত্ব-সবই এখন জুটির নতুন রূপ।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম