Logo
Logo
×

বৈশাখ সংখ্যা

বাংলা সন : উৎপত্তি, বিবর্তন ও কিছু কথা

Icon

আসাদুল্লাহ্

প্রকাশ: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

উৎপত্তি : বঙ্গাব্দের বা বাংলা সনের জন্মসন ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ। মজার বিষয় হলো-জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই বাংলা সনের বয়স দাঁড়ায় ৯৬৩ বছর; আর তার প্রচলন ঘটে আরও ২৯ বছর পর। বঙ্গাব্দের জন্মস্বভাব হচ্ছে কৃষক ও শস্য সংলগ্নতা। এ সহজাত স্বভাবের নিরিখে বাংলা সনকে বলা হয় ফসলি সন। ৯৬৩ বছর বয়সে জন্মগ্রহণ করে ইসলামি ঐতিহ্যের ধারক বাহক হয়ে ওঠে বাংলা সন। বাংলাদেশের মাটি মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির স্মারকে বিবর্তিত হয় ফসলি সন বঙ্গাব্দ। বাংলা সনের জন্ম প্রক্রিয়ায় মহামতি সম্রাট আকবরের অমর স্মৃতিবিজড়িত। খাজনা আদায় ও কৃষকের সুবিধার্থে ভারতবর্ষে কয়েকটি অঞ্চলভিত্তিক ফসলি সন চালু করেন আকবর। বাংলা সন তার অন্যতম। সাম্রাজ্যবাদী শাসক হলেও আকবর অনেক জনহিতকর কাজ করেছেন। প্রজাসাধারণের আর্থিক সামর্থ্য থাকলে তো খাজনা পরিশোধ করবে। আকবর তা অনুধাবন করেন। ঘরে ফসল ওঠার মৌসুমে তা বিক্রি করে সহজেই কর পরিশোধ করা সম্ভব। নবরত্নের বাইরের অন্যতম পণ্ডিত আমির ফতে উল্লাহ সিরাজি সম্রাটের নির্দেশে উদ্ভাবন করেন বঙ্গাব্দ। প্রশ্ন হলো কোথায় দিল্লির সিংহাসনে আসীন আকবর; কোথায় বাঙালির বাংলা। ইতিহাস জানান দেয়-১৫৭৫ সালের মধ্যে বাংলা মুলুকের অধিকাংশ অঞ্চল মুঘল শাসনাধীন হয়। যার নাম দেওয়া হয় সুবে বাংলা। তারও নয় বছর পর সুবে বাংলায় খাজনা আদায় নিয়ে বাস্তবিক বড় সমস্যা দেখা দেয়। মুঘলরা মুসলিম হিসাবে হিজরি সন অনুসরণ করত। হিজরি চান্দ্রসন; যার ব্যাপ্তি ৩৫৪ দিন। সৌরবর্ষ ৩৬৫ দিনের; অর্থাৎ চান্দ্রসনের চেয়ে ১১ দিনের বড়। বর্ষ পরিক্রমার এ ধারায় সৌর সনের চেয়ে হিজরি সন প্রতি তিন বছরে এক মাস এগিয়ে আসে। ১৫৮৪ সালে অর্থাৎ নয় বছরে (১৫৮৪-১৫৫৬= ৯) তিন মাসকাল ব্যবধান হওয়ায় ফসল ওঠার মৌসুম আসার আগেই খাজনা আদায়ের সময় চলে আসে। তাই সহজে রাজস্বার্থে রাজস্ব আদায় এবং প্রজাদের কষ্টের লাঘব-এ দুয়ের সমন্বয়ে রাজদরবারের জ্যেতিষশাস্ত্রবিদ পণ্ডিত আমির ফতে উল্লাহ সিরাজির বঙ্গাব্দের উদ্ভাবন। সম্রাটের স্বার্থ ও প্রজার প্রয়োজন সিরাজিকে দিয়ে বঙ্গাব্দের উদ্ভাবন ঘটাল। পূর্ব প্রচলিত শকাব্দের মাস ও দিনের নামগুলো সিরাজি হুবহু বাংলা সনে ঠিক রাখলেন। আকবর ১৫৮৫ সাল থেকে সুবে বাংলায় পুরোপুরি বঙ্গাব্দ চালু করেন। যা স্থানীয় পরিবেশের অনুকূল ও গণ-উপযোগী হওয়ায় অতিদ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এ কারণে আকবরের অর্থমন্ত্রী টোডরমল কর্তৃক সুবে বাংলায় চালুকৃত ইলাহী সন পরিত্যাজ্য হয় এবং বাংলা সন প্রতিষ্ঠা পায়।

আকবর সিংহাসনে বসেন ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে। সেই স্মৃতিকে অমর করে রাখার মহৎ উদ্দেশ্যে বাংলা সন উদ্ভাবনে ১৫৫৬ সালকে ফতে উল্লাহ ভিত্তি বছর ধরেন। মুঘলরা ছিলেন সুন্নি বর্ণের মুসলমান। বিশ্ব মুসলিম আরবীয় ইসলামি ঐতিহ্যকে লালন করে। আরবীয় হিজরি সন মহানবি মুহাম্মাদ (সা.)-এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পুণ্যস্মৃতিবিজড়িত। সুপণ্ডিত সিরাজি সেই ঐতিহ্যকে আত্তীকরণ করে ১৫৫৬ সালে চলমান ৯৬৩ হিজরিকে গণ্য করেন ৯৬৩ বঙ্গাব্দ। তাই ৯৬৩ বছর বয়সে বঙ্গাব্দের জন্ম। বাংলা সনের উদ্ভাবনে মুসলিম ঐতিহ্য বিশেষ করে মহানবি মুহাম্মাদ (সা.)-এর পবিত্র স্মৃতির মিশেল ফতে উল্লাহ সিরাজির গবেষণা ও উদ্ভাবনের শীর্ষ সাফল্য। এভাবেই বাংলা সনের শরীরে হৃৎপিণ্ড হচ্ছে হিজরি সন। আমির ফতে উল্লাহ সিরাজির বৈজ্ঞানিক গবেষণার আরেক শীর্ষ সাফল্য এই যে, বাংলা সনের ভ্রূণ হিজরি সন হলেও বেড়ে ওঠা ও পূর্ণতায় তা সৌরবর্ষ। গ্রেগরিয়ান বা রোমান ক্যালেন্ডারের (বহুল কথিত ইংরেজি বর্ষ) মতো বাংলাবর্ষও ৩৬৫ দিনের। লিপইয়ারে হয় ৩৬৬ দিন। বঙ্গাব্দের ভিত্তি বছর ৯৬৩ হিজরিতে অর্থাৎ ৯৬৩ বাংলা সনে ছিল ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দ। ব্যবধান (১৫৫৬-৯৬৩) ৫৯৩ বছর; যা অপরিবর্তনীয়। তাই মজার অঙ্ক হলো হিজরির সঙ্গে ৫৯৩ যোগ করলে খ্রিষ্টাব্দ এবং খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৫৯৩ বিয়োগে পাওয়া যায় বাংলা সন। তবে জানুয়ারি মাস পৌষের মাঝামাঝি শুরু হওয়ায় বঙ্গাব্দ ও হিজরি সনের যোগফলের সঙ্গে ১ যোগ করে নিলে হুবহু খ্রিষ্টাব্দ মিলে যায়। যেমন চলতি সালের জানুয়ারিতে বাংলা সন ১৪৩১ চলমান; তার সঙ্গে ৫৯৩ যোগ করলে হয় ২০২৪ এবং উপরোক্ত সূত্রে ১ যোগে ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ পাওয়া গেল। এপ্রিলের মাঝামাঝি নতুন বাংলা বর্ষ শুরু হয়। তাই এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৫৯৩ বিয়োগ করলে বঙ্গাব্দ মিলে যায়। যেমন ২০২৫ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হবে ১৪৩২ বঙ্গাব্দ। সে ক্ষেত্রে ২০২৫-৫৯৩=১৪৩২ অর্থাৎ বাংলা বর্ষ। বাংলা সনের মাসগুলোর নামের সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন নক্ষত্রের নামপ্রভাব। গ্রহের নামস্মৃতি মিশে আছে সপ্তাহের দিনগুলোয়। আর বাংলা সনের জন্ম বা উৎপত্তিতে মিশ্রিত হিজরি-আতরের সৌরভ। বস্তুত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একটি অসাম্প্রদায়িক অব্দ হচ্ছে বঙ্গাব্দ।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলার প্রথম স্বাধীন রাজা হিসাবে অনেকে রাজা শশাঙ্কের বঙ্গাব্দ প্রচলনের কথা বলেন। তা ইতিহাসসম্মত নয়; কিংবদন্তিমাত্র। শশাঙ্কের বাংলা সন চালুর পক্ষে অকাট্য বা অগ্রাহ্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ মধ্যযুগের স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহকে বাংলা সনের প্রবর্তক মনে করেন। কিন্তু তার রাজত্বকাল ১৪৯৩-১৫১৯ সাল। সে সময় শকাব্দ তো ছিলই; রাজা লক্ষ্মণ সেনের লক্ষ্মণাব্দ বা লক্ষ্মণ সংবত (সংক্ষেপে লসং) চালু ছিল। মোদ্দাকথা পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষে এবং ষোড়ষ শতাব্দীর তিন দশক অর্থাৎ ১৫৩০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত হোসেনশাহী বঙ্গাব্দের ব্যবহারের বিশ্বাসযোগ্য ও অগ্রাহ্য প্রমাণের ইতিহাস নেই। সম্রাট আকবরই বঙ্গাব্দের ঐতিহাসিক প্রবর্তক। বাঙালির সর্বজনীন বর্ষপঞ্জী এই বাংলা সন। বাঙালি জাতিসত্তায় শঙ্কর; বাংলা সনও এক শঙ্করসন। বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্যের স্মারক ও অনন্য জাতিগত বাঙালিয়ানার নাম বঙ্গাব্দ। পহেলা বৈশাখ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত যা বাঙালি ও বাংলাদেশের গৌরব বৈ কি।

বিবর্তন : আজকের বাংলা সন এক আধুনিক বর্ষপঞ্জী এবং প্রায় পাঁচশ বছরের বিবর্তনের ফসল। অতীতে পৌষ মাস হতো ২৯ দিনের। কোনো মাস ৩০ বা ৩১ দিনের ছিল। জৈষ্ঠ্য ও আষাঢ় মাস ৩২ দিনের হতো। নির্দিষ্ট নিয়মের ধারাবাহিকতা ও বৈজ্ঞানিক শৃঙ্খলা ছিল না। প্রকাশনায়ও দুরকমের পঞ্জিকা পাওয়া যায়-লোকনাথ পঞ্জিকা ও মোহাম্মদী পঞ্জিকা। লিপ-ইয়ারে ফেব্রুয়ারি মাসে একদনি বৃদ্ধি পায়। যা বাংলা বর্ষপঞ্জীতে সন্নিবেশিত ছিল না। এসব কারণে বর্ষপঞ্জীর সংস্কার আশু প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ১৯৬৩ সালে (তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে) ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ-এর নেতৃত্বে ‘বাংলা পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি’ একটি সংস্কার প্রস্তাব প্রণয়ন করে সরকারের কাছে পেশ করে। তারও আগে ভারত সরকারের নির্দেশে বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা ১৯৫২ সালে বর্ষপঞ্জীর সংস্কার করেন; যা সরকার ১৯৫৭ সালে গ্রহণ করে। বিজ্ঞানী সাহা শকাব্দ অনুসরণে চৈত্র থেকে ফাল্গুন পর্যন্ত বর্ষ গণনা করেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা সন গণনা করেন বৈশাখ থেকে চৈত্র পর্যন্ত। বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা ও মুহম্মদ শহীদুল্লাহ মাসের দিন সংখ্যা ও লিপ-ইয়ার গণনার বিষয়েও সুনর্দিষ্ট সুপারিশ প্রদান করেন। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ভারত দুদেশেই বর্ষপঞ্জীর আরও সংস্কার ও বিবর্তন ঘটেছে। বাংলা একাডেমি কর্তৃক সর্বশেষ সংস্কার অনুযায়ী মহান একুশ ও ৮ ফাল্গুন (যা ১৯৫২ সালে ঘটেছিল) মিলে গেছে। তারও আগে ১৯৯৫ সালে গঠিত টাস্কফোর্স বাংলা বর্ষপঞ্জী সহজিকরণে কিছু সিদ্ধান্ত নেয়; যার অন্যতম দুটি সিদ্ধান্ত হচ্ছে-গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডারের লিপ-ইয়ারে বাংলা সনের (৪ দ্বারা বিভাজ্য না হলেও) ফাল্গুন মাস ৩১ দিন গণনা করা এবং আন্তর্জাতিক রীতির অনুসরণে রাত ১২টায় তারিখ পরিবর্তন হবে। বাংলা একাডেমি কর্তৃক সংস্কার তথা বঙ্গাব্দের সর্বশেষ বিবর্তন অনুযায়ী বৈশাখ থেকে আশ্বিন ৬ মাস ৩১ দিনের; কার্তিক থেকে মাঘ ও চৈত্র ৫ মাস ৩০ দিনের এবং ফাল্গুন মাস ২৯ দিনে গণনা করা হয়। অধিবর্ষে ফাল্গুন ৩০ দিনে গণ্য। বাংলা সনের আরও সংস্কারের সুযোগ আছে। বিদ্যমান বর্ষ গণনায় অধিবর্ষে ফাল্গুন মাসের ৩০ তারিখ হয় ২৯ ফেব্রুয়ারির ১৪ দিন পরে। এতে বিগত ৩ বছরের ১৫ ফাল্গুনে ১ মার্চের ধারাবাহিকতার ব্যতিক্রম ঘটে। কিন্তু ২৯ ফেব্রুয়ারির জন্য যদি এমন একটি বাংলা তারিখ নির্ধারণ করা যায়-যা বিগত ৩ বছর ছিল না। যেমন ২৯ ফেব্রুয়ারি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ধারাবাহিক অর্থাৎ ২৮ তারিখের পর ২৯। বিদ্যমান বর্ষপঞ্জী মতে ১৫ মার্চ হয় ১ চৈত্র। লিপ-ইয়ারে ১৫ মার্চে ৩০ ফাল্গুন। ফলে ১ চৈত্র হবে ১৬ মার্চে; যা গত ৩ বছরের ব্যতিক্রম। কিন্তু নামাজ ইফতার সেহরির স্থায়ী ক্যালেন্ডারের সময়ের মতো রোমান ও বাংলা বর্ষের তারিখ স্থির সমান্তরাল বা প্রতিষঙ্গী করা সম্ভব। যদি ২৯ ফেব্রুয়ারিতে সম্পূর্ণ পৃথক ও পৃতীকী আংকিক বর্ণ ‘৯৯’ অর্থাৎ ‘লী’ নির্ধারণ করা হয়; তাহলে ১৫ মার্চে ১ চৈত্র স্থির (constant) থাকে। ৯৯ বা দীর্ঘ ‘লী’ বাংলা বর্ণমালার একটি বর্ণ যা বর্তমানে অপ্রচলিত। বর্ণটির অবয়ব ৯৯ সংখ্যার মতো। ৯৯ মাসের কোন তারিখ হতে পারে না; কেননা মাসের শেষ তারিখ হয় সর্বোচ্চ ৩১। ২০২৮ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারিতে যদি ফাল্গুনের তারিখ নির্দেশে লেখা হয়-৯৯/১১/১৪৩৫ বঙ্গাব্দ তাহলে তা যে অধিফাল্গুনের দিন সেটা বুঝা কঠিন নয়। প্রয়োজন সংস্কারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা। আর নিশ্চিত তা হবে বাংলা বর্ষপঞ্জী গণনায় আরেক ধাপ উত্তরণ; বিবর্তন।

কিছু কথা : আকবরি ফসলি সনের সঙ্গে সাজুয্য রেখে তৎকালীন ভারতবর্ষের অর্থমন্ত্রী জেমস উইলসন প্রথম বাজেট পেশ করেন ৭ এপ্রিল, ১৮৬০ সালে। পরে তা ১ এপ্রিল থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত কার্যকর হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর ভারত সরকার অর্থবছর আগের মতোই রাখে। যা আজো বিদ্যমান। পাকিস্তান সরকার জুলাই থেকে জুন অর্থবছর চালু করে। স্বাধীন বাংলাদেশে আজো তা বিদ্যমান। যা কৃষকের ফসল ওঠা এবং গ্রামবাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে যায় না। বিশ্বের ১৬০-এর বেশি দেশ জানুয়ারি টু ডিসেম্বর অর্থবছর হিসাবে অনুসরণ করে নিজেদের জাতীয় সুবিধা ও সংস্কৃতির টানে। ভারত কানাডা যুক্তরাজ্য ও জাপানসহ ৩৬টি দেশে অর্থবছরের ব্যাপ্তি এপ্রিল টু মার্চ। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানসহ মাত্র ১৯টি দেশের অর্থবছর জুলাই টু জুন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডসহ ১১টি দেশে অক্টোবর টু সেপ্টেম্বর অর্থবছর প্রচলিত। শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত ও মা-বোনেদের সম্ভ্রমের শানে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে পাকিস্তানের নাগপাশ থেকে। অথচ পাক শাসকদের চালুকৃত অর্থবছর জুলাই-জুন আজো বহাল। ইসলাম মোটর হয়েছে বাংলামোটর; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল হয়েছে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল; জিন্না হল হয়েছে মাস্টারদা সূর্যসেন হল এবং আরও কত কি। দুষ্ট পাকস্মৃতি বর্তমান অর্থবছর বাংলাদেশের উপযোগী নয়। জুলাইতে ঝড় বৃষ্টিসহ বানবর্ষার কারণে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নেও নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা থাকে। বাংলাদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, ঋতু ও ফসলের মৌসুমসহ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের নিরিখে বৈশাখ থেকে চৈত্র পর্যন্ত অর্থবছর হলে অধিকতর উপযোগী ও কল্যাণকর হয়। সেক্ষেত্রে বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বৈশাখ-চৈত্রের আকবরি ফসলি সনে ফিরে যাওয়াটাও হবে আরেক বিজয় ও গৌরবের।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম