গাড়ির জগতে বিস্ময়
দ্রুতগতির ‘কোয়েনিগসেগ জেসকো অ্যাবসলুট’
মো. আবদুস সালিম
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিশ্বজুড়ে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দ্রুতগতির গাড়ির চাহিদা। কোন কোম্পানির কোন মডেল সবচেয়ে বেশি গতিতে ছুটতে পারে-এ নিয়ে গাড়িপ্রেমীদের আগ্রহও তুঙ্গে। তাদের আলোচনার কেন্দ্রে এখন সুইডিশ গাড়িনির্মাতা কোয়েনিগসেগের তৈরি ‘কোয়েনিগসেগ জেসকো অ্যাবসলুট’। দ্রুতগতি, আরাম ও নিরাপত্তার সমন্বয়ে এ হাইপারকার ইতোমধ্যেই স্থাপন করেছে নতুন মানদণ্ড। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের দাবি, জেসকো অ্যাবসলুট ঘণ্টায় প্রায় ৫০০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে সক্ষম। তাই গতির তালিকায় এটিকে এখন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগামী গাড়িগুলোর শীর্ষে রাখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু একটি গাড়ি নয়, বরং গতি, প্রযুক্তি ও প্রকৌশলের এক অনন্য উদাহরণ। হাইপারকারের জগতে এটি সূচনা করেছে এক নতুন অধ্যায়ের। এর বৈশিষ্ট্য ও কারিগরি সক্ষমতা বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়, কেন এটি এত দ্রুত গাড়িপ্রেমীদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।
এরোডাইনামিক ডিজাইন : এ গাড়িকে যথেষ্ট হালকা ও বায়ুগতিশীল করা সম্ভব হয়েছে এর মসৃণ জিজাইন, লো-ড্র্যাগ বডি ও সম্পূর্ণ কার্বন ফাইভার সমন্বয়ের মাধ্যমে। এতে আরও রয়েছে দীর্ঘ বা লং-টেইল আকৃতি। এটা কয়েক বছর আগে তৈরি জেসকো মডেলের থেকে প্রায় ৮৫ মিলিমিটার বেশি লম্বা। চলার সময় বায়ুপ্রবাহের বাধা সরিয়ে দেয় এই অতিরিক্ত দৈর্ঘ্য বা লম্বা ডিজাইন। এর ড্র্যাগ কো-এফিশিয়েন্ট বা টানার সক্ষমতা প্রায় ০.২৭ মাত্রা, যা খুবই উপযোগী এ ধরনের হাইপারকারের বেলায়।
শক্তিশালী ট্রান্সমিশন : এ গাড়িতে রয়েছে কোয়েনিগসেগ-এর লাইট স্পিড ট্রান্সমিশন বা এলএসটি। যার কারণে এটা পড়েছে ৯-স্পিড মাল্টি-ক্লাচ সিস্টেমে। এটা গতানুগতিক ট্রান্সমিশনের থেকে অনেক বেশি উন্নত বা আধুনিক। যার কারণে গিয়ার পরিবর্তন করা যায় মাত্র ২৫ মিলিসেকেন্ডের মধ্যে। তার মানে চালক চাইলে গাড়িটির গতি তাৎক্ষণিকভাবে বাড়াতে-কমাতে পারেন। হাইপারকারের বিশ্বরেকর্ড গড়ার ক্ষেত্রে এটা হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড বা বিষয়।
অভ্যন্তরীণ দিক : এ গাড়ির ভেতরে রয়েছে আরামদায়ক কার্বন ফাইবার আসন, যা চলার সময় কম ঝাঁকুনি অনুভূত হয়। আরও আছে ডিজিটাল ড্রাইভার ডিসপ্লে। যার কারণে চালক এর গতি, জ্বালানির পরিমাণ বা অবস্থা, ইঞ্জিনবিষয়ক সতর্কতা ইত্যাদি সহজে বুঝতে ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আছে ৯ ইঞ্চি টাচস্ক্রিন ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেম। যার মাধ্যমে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ব্যবস্থার মাধ্যমে গান শোনা, ভিডিও দেখা, পথ চলা, গাড়ির সেটিংস ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। গাড়িটিতে পাশাপাশি আছে স্মার্টফোন কানেক্টিভিটি। রয়েছে প্রিমিয়াম বা উন্নতমানের চামড়া ও শক্তিশালী কার্বন ফাইবার ফিনিশিং। যার কারণে এর ভেতরের দিকটার সৌন্দর্য দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
এ গাড়ি একটি টুইন টার্বোচার্জড ভি৮ ইঞ্জিন দ্বারা পরিচালিত। ইঞ্জিনের জ্বালানি ধারণ ক্ষমতা পাঁচ লিটার। এটা পেট্রোল এবং B85 জৈব জ্বালানিতে চলতে পারে। উচ্চ অকটেন রেটিংয়ের কারণে B85 বেশি শক্তি জোগান দেয়। এ গাড়ির রং কালো, নীল। দাম তিন মিলিয়ন ডলার থেকে শুরু। গাড়ির দুটি সংস্করণের একটি সাধারণ সড়কে চলাচলের জন্য বেস মডেল এবং অপরটি কেবল ট্র্যাকের জন্য। গাড়িটির তিনটি প্রকার যেমন, এবসলুট, অ্যাটাক ও সাদাইরস স্পিয়ার। ২০২২ সালে এ গাড়ি টপ গিয়ার হাইপারকার হিসাবে সেরা পুরস্কার পায়। কোম্পানি জানিয়েছে, আপাতত তাদের আর কোনো অতিরিক্ত দ্রুততম গাড়ি তৈরির পরিকল্পনা না থাকলেও আরও আধুনিক বৈদ্যুতিক এবং উচ্চ কর্মক্ষমতাসম্পন্ন সুপারকার উন্নয়নের কাজ চলছে।
