হার্লি-ডেভিডসনের ‘ভুল হিসাব’
গ্লোবাল আইকনের লোকাল ব্যর্থতা
তানজিমা হালিম
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
একশ বিশ বছরেরও বেশি ইতিহাস থাকা হার্লি-ডেভিডসনের মতো একটি আইকনিক ব্র্যান্ডের ব্যর্থতা কল্পনা করাই কঠিন। স্বাধীনতার প্রতীক, গর্জন করা ইঞ্জিন আর ভারী ক্রুজার বাইকের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে আলাদা এক পরিচয় গড়ে তুলেছিল এ আমেরিকান মোটরসাইকেল নির্মাতা। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রমাণ হয়েছে, ব্র্যান্ড যত বড়ই হোক প্রতিটি বাজারের বাস্তবতা এক নয়। ভারতের ক্ষেত্রেও হার্লি-ডেভিডসনের গল্পটা ঠিক তেমনই। ২০১০ সালের জুলাইয়ে ভারতের হায়দ্রাবাদে প্রথম শোরুম খোলার মাধ্যমে দেশটিতে যাত্রা শুরু করে হার্লি-ডেভিডসন। একইসঙ্গে হরিয়ানার বাওয়ালে গড়ে তোলে ৭০ হাজার বর্গফুটের একটি ‘কমপ্লিট নক-ডাউন (সিকেডি) অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্ট’। যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন, পেনসিলভানিয়া ও মিসৌরির কারখানা থেকে আনা যন্ত্রাংশ জোড়া দিয়ে ভারতে বাইক তৈরি করায় আমদানি শুল্ক কমে আসে এবং দামও তুলনামূলক সহনীয় করার চেষ্টা করা হয়। আমেরিকার বাইরে এটি ছিল হার্লির দ্বিতীয় বড় উদ্যোগ। প্রথমটি ছিল ব্রাজিলে। এক দশক ধরে ব্যবসা করার পর ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ভারত ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয় হার্লি-ডেভিডসন। এ পুরো সময়ে তারা বিক্রি করতে পেরেছিল মাত্র ২৭ হাজার বাইক। অথচ একই সময়ে ভারতের বাজারে রাজত্ব করছিল রয়াল এনফিল্ড, যারা প্রতি মাসেই হার্লির বার্ষিক বিক্রির কাছাকাছি বাইক বিক্রি করত। সমস্যার মূল ছিল বাজারের সঙ্গে পণ্যের অমিল। ২০১৯ সালে ভারতে এক কোটি ৭০ লাখের বেশি বাইক ও স্কুটার বিক্রি হলেও এর ৯০ শতাংশের ইঞ্জিন ছিল ১৫০ সিসির নিচে। সেখানে হার্লির সবচেয়ে ছোট মডেলটির ইঞ্জিনই ছিল ৭৫০ সিসি। বড়, ভারী ও উচ্চমূল্যের এই বাইকগুলো ভারতের যানজটপূর্ণ রাস্তা, জ্বালানি ব্যয় ও সাধারণ ক্রেতার চাহিদার সঙ্গে মানানসই ছিল না।
এর ওপর রয়াল এনফিল্ড ছাড়াও ট্রায়াম্ফ, জাওয়া ও নর্টনের মতো ব্র্যান্ডগুলো স্থানীয় অংশীদারত্বের মাধ্যমে তুলনামূলক সাশ্রয়ী ও ব্যবহারিক বাইক বাজারে আনছিল। ফলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে হার্লি।
শেষ ধাক্কা আসে কোভিড-১৯ মহামারিতে। ২০১৯ সালেই বিক্রি ও আয় কমতে থাকা কোম্পানিটি ২০২০ সালে প্রথমবারের মতো টানা লোকসানের মুখ দেখে। বৈশ্বিক পুনর্গঠন পরিকল্পনা ‘রিওয়্যার’-এর অংশ হিসাবে শেষ পর্যন্ত বাওয়াল প্ল্যান্ট বন্ধ করে ভারত থেকে বিদায় নেয় হার্লি-ডেভিডসন।
