রেলসেবা অ্যাপেও কালোবাজারি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সক্রিয় ৩০ সদস্যের প্রতারকচক্র
মো. ফজলে রাব্বি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
রেলের ই-টিকিটিং সিস্টেম (রেলসেবা অ্যাপ) চালু হওয়ার পরও টিকিট কালোবাজারি বন্ধ হয়নি। অনলাইনে টিকিট কাটার এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) জালিয়াতির মাধ্যমে নতুন কৌশলে ব্যবসা চালাচ্ছে একটি চক্র। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন রেলস্টেশনে টিকিট কালোবাজারি লাগামহীনভাবে চলছে। অনিয়মের মাধ্যমে অপ্রাপ্তবয়স্ক যাত্রীদের টিকিটও বিক্রি হচ্ছে। পূর্বাঞ্চল রেলের ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কসবা, আখাউড়া ও আজমপুর স্টেশনে নিয়মিতভাবে কালোবাজারির ঘটনা ঘটছে। তথ্য অনুযায়ী, চক্রটি অন্তত ৩০ সদস্যের এবং তারা বিভিন্নজনের এনআইডি জালিয়াতি করে টিকিট সংগ্রহ করে বিক্রি করছে। প্রতিদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট রুটে প্রায় ৪শ’ টিকিট বিক্রি হয়। এসব টিকিট কালোবাজারিরা দ্বিগুণ বা তারও বেশি দামে সোশ্যাল অ্যাপ ও সরাসরি বিক্রি করছে। আখাউড়া রেলওয়ে থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ মাসে থানায় টিকিট কালোবাজারির মামলা হয়েছে ১০টি। এসব মামলায় এজাহার নামীয় আসামি করা হয়েছে ৩২ জনকে। এই সময়ে ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাদের কাছ থেকে ৭০টি টিকিট উদ্ধার করা হয়। জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কসবা ও আজমপুর স্টেশনের টিকিট কালোবাজারির মূলহোতা কসবার ধর্মপুর গ্রামের তানভীর আহমেদ পাঠান ওরফে রাজীব পাঠান। তার এজেন্টরা প্রতিদিন তিনটি স্টেশনে ২শ’ টিকিট বিক্রি করে থাকে। পরিচিতজন ছাড়াও স্থানীয় গ্রামবাসীর এনআইডি নম্বর চুরি করে ব্যবহার করা হচ্ছে। কসবার বুগীর গ্রামের সোহেরা বেগম কখনো ট্রেনে ওঠেননি এবং স্মার্টফোনও নেই। তবুও তার এনআইডি ব্যবহার করে টিকিট কেটে বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এনআইডি জালিয়াতির শিকার রেজাউল হক রিপন ভূঁইয়া বলেন, তার এনআইডি ব্যবহার করে টিকিট বিক্রি হওয়ায় তিনি নিজে রেলসেবা অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে কালোবাজারি থেকে টিকিট কিনছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালোবাজারিচক্রের এক সদস্য জানান, ভোটার তালিকা ও ফটোকপির দোকান থেকে এনআইডি নম্বর সংগ্রহ করা হয় এবং প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকার টিকিট বিক্রি করা হয়। তবে রাজীব পাঠান কালোবাজারি চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, তিনি টিকিট দেননি বা বিক্রি করেননি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী মাস্টার মো. সাকির জাহান বলেন, ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’-নীতি অনুযায়ী ট্রেনে নিয়মিত চেকিং চালানো হয়। তবে অনলাইনে কালোবাজারি শনাক্ত করা সম্ভব নয়। আখাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি এসএম শফিকুল ইসলাম জানান, স্টেশনে কালোবাজারি প্রবেশ রোধে পুলিশ সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছে।
বেশ কয়েকটি মামলা ও গ্রেফতারির ঘটনা ঘটেছে এবং রাজীব পাঠানের এজেন্টদের ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে এবং যে কোনো সময় গ্রেফতার করা হতে পারে। তদন্ত ও অভিযান চলমান থাকায় রেলভ্রমণকারীদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি এনআইডি ও টিকিট সংক্রান্ত প্রতারণার বিষয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
