Logo
Logo
×

বাংলার মুখ

ঠিকাদারের কাণ্ডে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজ বন্ধ, ব্যাহত চিকিৎসা সেবা

কয়রায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজ বন্ধ * চিকিৎসা সেবায় চরম সংকট

Icon

রিয়াছাদ আলী, কয়রা (খুলনা)

প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঠিকাদারের কাণ্ডে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজ বন্ধ, ব্যাহত চিকিৎসা সেবা

খুলনার কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা। জায়গা সংকট ও অবকাঠামোগত দুরবস্থার কারণে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

৫০ শয্যার অনুমোদন থাকলেও হাসপাতালটি বর্তমানে ১৯ শয্যার ভবনে পরিচালিত হচ্ছে, ফলে প্রতিদিনই সেবা ব্যাহত হচ্ছে। সরেজমিন দেখা গেছে, নির্মাণাধীন ভবনের জায়গায় খোঁড়া গর্তে ময়লা-আবর্জনা জমে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

বেড সংকটের কারণে অনেক রোগী হাসপাতালের ছাদে নির্মিত টিনসেড ঘরে বা মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রতিদিনই অনেককে ১০০ কিলোমিটার দূরের খুলনা শহরে যেতে হচ্ছে।

জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে আমাদী ইউনিয়নের জায়গীরমহল গ্রামে ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি স্থাপিত হয়। ২০১১ সালে ১৯ শয্যার ভবন নির্মিত হয় এবং পরে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ২০২২ সালে ৩১ শয্যার পুরোনো ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে অপসারণ করা হয়। একই বছরের ১৬ আগস্ট ৩১ শয্যার তিনতলা নতুন ভবন নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

৯ কোটি ৭৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকায় কাজটি পায় মেসার্স জিয়াউল ট্রেডার্স ও মেসার্স শামীম আহসান ট্রেডার্স। কার্যাদেশ পাওয়ার পর দুই বছরে মাত্র ১৮ শতাংশ কাজ করে। খুলনা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কাজের মেয়াদ দুই দফা বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হলেও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করেনি। এ কারণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ১ কোটি ৭২ লাখ টাকা তুললেও ভবনের কাজ অচল অবস্থায় পড়ে আছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির পেছনে স্থানীয় এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার সম্পৃক্ততা ছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তারা আত্মগোপনে চলে যায়।

এদিকে, স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা আরও নাজুক। ২৯ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে মাত্র ৯ জন চিকিৎসক কর্মরত আছেন, এর মধ্যে একজন প্রশিক্ষণে রয়েছেন। সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া ২ জন জুনিয়র কনসালটেন্টও এখনো যোগ দেননি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় সিজারিয়ানসহ সব ধরনের অপারেশন তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। নেই পর্যাপ্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধাও। গাইনি, সার্জারি, মেডিসিনসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে কোনো কনসালটেন্ট না থাকায় রোগীদের সামান্য চিকিৎসার জন্যও খুলনা যেতে হচ্ছে।

অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আবাসন সমস্যা দেখিয়ে কয়রায় অবস্থান না করে খুলনা থেকে মাঝে মধ্যে এসে মাসিক বেতন তুলছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, পুরোনো ভবন ভেঙে ফেলার পর থেকেই শয্যা সংকট প্রকট হয়েছে। সীমিত জায়গায় রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। খুলনা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ইখতেয়ার হোসেন বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ না করায় কার্যাদেশ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। নতুন প্রকল্প অনুমোদনের জন্য বারবার প্রস্তাব পাঠানো হলেও এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম