Logo
Logo
×

বাংলার মুখ

লোহাগাড়ায় গণ-অভ্যুত্থান মামলার আসামি

কর্মচারী থেকে কোটিপতি

Icon

নাজিম উদ্দীন রানা, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম)

প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কর্মচারী থেকে কোটিপতি

ছবি: যুগান্তর

লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের জারিকারক বাবুল কান্তি নাথ। তিনি তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারী হয়ে ও নানা অপকর্ম, অনিয়মে জড়িয়ে গড়ে তুলেছেন কোটি টাকার সম্পদ। গণ-অভুত্থানে ছাত্র জনতার ওপর হামলায় দায়ের করা মামলার আসামি তিনি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার চাকরি হয়। ২০১১ সালে চাকরিতে যোগদানের পর থেকে বেশির ভাগ সময় পার করেছেন নিজ উপজেলা লোহাগাড়ায়। দীর্ঘ একযুগের অধিক সময় নিজ উপজেলায় চাকরির সুবাদে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য তৈরি করেছেন। শুধু তাই নয়, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলায় মোমেন হোসেন জয়ে লোহাগাড়া থানায় করা ১৭(৮)২৪নং মামলার এজাহারনামীয় আসামি ও বাবুল। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, বিস্ফোরণ মামলার আসামি হয়েও কীভাবে নির্বিঘ্নে করছেন তিনি? প্রশাসনের নীরবতার বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, তিন বছর পূর্ণ হলে অন্যত্র বদলি হওয়া বাধ্যতামূলক হলেও বাবুল নানা কৌশলে দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে রয়ে গেছেন। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব ও মোটা অঙ্কর ঘুসের বিনিময়ে তিনি বদলি ঠেকিয়ে রেখেছিলেন। বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর তাকে চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় বদলি করা হলে ও বদলির কিছু দিন পর সংযুক্তিতে আবার যোগদান করেন লোহাগাড়া উপজেলায়। যোগদানের পর আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেন তিনি।

অভিযুক্ত বাবুল কান্তি নাথ(৪২) উপজেলার কলাউজান ইউনিয়নের পশ্চিম কলাউজানের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা শ্যামাচরণ নাথের পুত্র। বাবা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সুবাদে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তার সরকারি চাকরি হয়।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পরিবারটি ছিল একটি আতঙ্কের নাম। তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জমি, মৎস্য ঘের দখল এমনকি মানুষকে জিম্মি করে মারধরের অভিযোগও রয়েছে। অনিয়ম, তদবির-বাণিজ্য, অবৈধ বালু, পাহাড় কাটা ও ইটভাটা মালিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়ার মাধ্যমে গড়েছেন বিশাল সম্পদের পাহাড়। কোটি টাকা খরচ করে করেছেন আলিশান বাড়ি, একাধিক স্থানে নামে-বেনামে জায়গা কিনে করেছেন দোকানপাট, মৎস্য খামার, গবাদি পশুর খামার, ওয়ার্কশপ ও গ্যারেজ। রয়েছে দুটি স্ক্যাবেটর ও দুটি ডাম্পার গাড়ি। সব মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে যান বাবুল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ওই পরিবার এখন আঙুল ফুলে কলাগাছ। অনিয়ম ও-দুর্নীতি ছাড়া একজন সরকারি কর্মচারীর এত সম্পদ অর্জন সম্ভব নয় বলে ও মন্তব্য করেন অনেকেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জারিকারক বাবুল কান্তি নাথ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন আমাকে দেশ থেকে চলে যাওয়ার একটা ব্যবস্থা করে দেন, আমার টাকার প্রতি সবার লোভ পড়েছে। বদলি প্রসঙ্গে তিনি জানান, আদেশ আসার পরেও না ছাড়ার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভালো জানবেন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. সাইফুল ইসলামের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল করে কল রিসিভ করেননি, এমনকি খুদেবার্তা পাঠিয়েও উত্তর পাওয়া যায়নি।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে লোহাগাড়া থানার ওসি আরিফুর রহমান জানান, মামলাটির তদন্ত চলমান, তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম