Logo
Logo
×

বাংলার মুখ

যশোর জেনারেল হাসপাতালে দালাল চক্রের হাতে জিম্মি রোগী

বেতন নেই তবুও কাজ করছেন ১০২ স্বেচ্ছাসেবী * জনবলের অভাবে অসহায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

Icon

যশোর ব্যুরো

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

যশোর জেনারেল হাসপাতালে দালাল চক্রের হাতে জিম্মি রোগী

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল। ছবি: সংগৃহীত

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে বহির্বিভাগ ও অন্তবিভাগে প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজার রোগী সেবা নেন। বিপুলসংখ্যক রোগীর সেবার জন্য পর্যাপ্ত জনবল নেই। জনবল সংকটকে পুঁজি করে স্বেচ্ছাসেবী নামধারী ‘একদল দালাল’ জেঁকে বসেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ঘাড়ে। গোটা হাসপাতাল দালাল চক্রের কাছে জিম্মি। সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার শঙ্কায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও অসহায়। তাই স্বেচ্ছাসেবী, দালাল কিংবা বহিরাগতদের নানা অপকর্ম হাতেনাতে ধরা পড়লেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

দালাল চক্রের লাগাম টানার যেন কেউ নেই। এতে রোগী ও স্বজনদের পকেট কাটা যাচ্ছে। জানা যায়, ২৯ অক্টোবর যশোর জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী লুৎফর রহমানকে বেসরকারি ক্লিনিকে টেস্ট করাতে নিয়ে যাওয়ার সময় ধরে পড়েন হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবক অনুপম দাস ও ক্লিনিকের এক দালাল। পরে তারা মুচলেকায় ছাড়া পান।

২৬ অক্টোবর ভোরে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে সাদা অ্যাপ্রোন পরিহিত একদল নারী হাকডাক শুরু করেন। রোগীদের জাগিয়ে তুলে ফিজিওথেরাপি দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এ সময় ১১ জন নারীকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য।

এই চিত্র শুধু ওইদিনের নয়। প্রতিদিন ভোরে বাইরের বিভিন্ন ফিজিওথেরাপি সেন্টারের কর্মীরা হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি রোগীদের জোর করে ফিজিওথেরাপি দেয়। মাথাপিছু ৩শ টাকা ফি আদায় করে। হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবী ও দালাল চক্র ফিজিওথেরাপি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে। আটক ১১ নারীকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

২৩ অক্টোবর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নীলা মল্লিক নামে এক ভুয়া নার্স আটক হয়। তিনি নিজেকে ইন্টার্ন নার্স দাবি করেন। ওই নারীকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। একপর্যায়ে ভুল স্বীকার ও ক্ষমা চেয়ে মুক্ত হন। ৭ জুলাই হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারের সামনে আব্দুর রহমান জাকির নামে এক ভুয়া ইন্টার্ন চিকিৎসক আটক হয়। চিকিৎসকদের মতো সাদা এপ্রোন পরে নিজেকে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসাবে পরিচয় দিচ্ছিলেন। এ সময় তিনি পরীক্ষা করিয়ে দেওয়ার নামে এক নারীর কাছ থেকে ৫শ টাকা হাতিয়ে নেন।

হাসপাতালের তথ্য মতে, হাসপাতালের বহির্বিভাগে দুই হাজারের বেশি ও ভর্তি ৬ শতাধিক রোগী সেবা নেন। সক্ষমতার অতিরিক্ত রোগীর সেবা কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে নিতে হলে অন্তত ২৮৬ জন কর্মচারী প্রয়োজন। সেখানে ২৫০ শয্যার হাসপাতালের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী ১০৬টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৯০ জন কর্মচারী। সুইপার, স্ট্রেচার বেয়ারার, ওয়ার্ড বয়, আয়া, নিরাপত্তা প্রহরী, অফিস সহায়কের ১৮৬ জনবল ঘাটতি রয়েছে। 

জানতে চাইলে যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায় (ভারপ্রাপ্ত) ডা. হোসাইন শাফায়েত বলেন, বহিরাগত ও দালাল চক্রের বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সোচ্চার রয়েছে। মাঝেমাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়। বিকল্প জনবল না থাকায় হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবী ও অসাধু কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না।

হাসপাতালের জনবল সক্ষমতার দুর্বলতার সুযোগ নেয় অসাধু চক্রটি। হাসপাতালে কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হতে হয়। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের বাস্তবতার নিরিখে অর্গানোগ্রাম তৈরি করা উচিত। বেশি রোগীর হাসপাতালে কম জনবলের অর্গানোগ্রাম দিয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়।’

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম