Logo
Logo
×

বাংলার মুখ

কুতুবদিয়ায় ১৪৩ প্রকল্প

ইউএনও-পিআইওর কমিশন বাণিজ্য

Icon

মো. শাহ জামাল, কুতুবদিয়া, (কক্সবাজার)

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইউএনও-পিআইওর কমিশন বাণিজ্য

বাম দিক থেকে পিআইও কাউছার আহমেদ ও ইউএনও ক্যথোয়াইপ্রু মারমা। ছবি: যুগান্তর

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কুতুবদিয়ায় টিআর কাবিখা-কাবিটা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চাল এবং গমের বাজার মূল্যসহ ৩ কোটি ৬০ লাখ ৫৭ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়। এ বরাদ্দে ইউএনও এবং পিআইওর স্বাক্ষরে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ১৪৩টি প্রকল্প অনুমোদন নিয়েছেন। প্রতিটি প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে শতকরা ১৩ টাকা করে কমিশন আদায় করেন ইউএনও ক্যথোয়াইপ্রু মারমা এবং পিআইও কাউছার আহমেদ। মোট বরাদ্দ থেকে কমিশন বাণিজ্য করে ৪৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা নিজেদের পকেটে ভরেছেন তারা। এছাড়াও নামে বেনামে প্রকল্প অনুমোদন নিয়েও সরকারি বরাদ্দ লুটপাট করেছেন এ দুই কর্মকর্তা।

ইতোমধ্যে তাদের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে ৭ আগস্ট যুগান্তরে কুতুবদিয়া ইউএনও এবং পিআইও যোগসাজশে ‘বরাদ্দের অর্ধকোটি টাকা লোপাট’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য গত ১২ অক্টোবর কুতুবদিয়া তদন্তে যান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উপসচিব কাজী মো. বদরুজ্জামান। প্রকল্প লুটপাটে সরেজমিন তদন্ত করে যাওয়ার এক মাস পার হয়ে গেছে। কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন এখনও হিমঘরে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বরাদ্দের কাগজে দেখা যায়, ৫ মার্চ কক্সবাজারের সাবেক জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলমের স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে কুতুবদিয়া উপজেলার জন্য ১ম ও ২য় কিস্তির অনুকূলে ৯৩ লাখ ৭৩ হাজার ৯৮০ টাকা ও ১ কোটি ১ লাখ ৩১ হাজার ১১৯ টাকা এবং ৭২ মেট্রিক টন চাল (যার বাজার মূল্য ২৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা) ও ৭২ মেট্রিক টন গম(যার বাজার মূল্য ২১ লাখ ১৬ হাজার টাকা) বরাদ্দ দেওয়া হয়। এছাড়া তৃতীয় কিস্তির অনুকূলে ৯৭ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা এবং ২৮ মেট্রিক টন চাল (যার বাজার মূল্য ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা) ও ২৮ মেট্রিক টন গম(যার বাজার মূল্য ৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা) বরাদ্দ দেওয়া হয়।

জানা গেছে, ১ম ও ২য় কিস্তির বরাদ্দে টিআর ৯৩ লাখ ৭৩ হাজার ৯৮০ টাকা বরাদ্দ থেকে ৪৭টি প্রকল্প, কাবিখা-কাবিটা প্রকল্পের নগদ ১ কোটি ১ লাখ ৩১ হাজার ১১৯ টাকা বরাদ্দ থেকে ২৫টি প্রকল্প, ৭২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ থেকে ৭টি প্রকল্প এবং ৭২ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ থেকে ১০টি প্রকল্প। এছাড়া ৩য় কিস্তিতে টিআর ৪৬ লাখ ৮৬ হাজার ৯৯০ টাকা বরাদ্দে ৩০টি প্রকল্প, কাবিটা ৫০ লাখ ৬৫ হাজার ৫৫৯ টাকা বরাদ্দ থেকে ১০টি প্রকল্প, কাবিখা ২৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ থেকে ৭টি প্রকল্প এবং ২৮ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ থেকেও ৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। সেই হিসেবে মোট বরাদ্দ থেকে ১৪৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন তারা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ও একাধিক প্রকল্প সভাপতির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিআইও অফিস থেকে আমাদের যেসব প্রকল্প দেওয়া হয় প্রতি প্রকল্পের মূল বরাদ্দ থেকে ১৩ শতাংশ হারে ভ্যাট এবং আয়কর কেটে নেওয়া হয়। বিল পাস হওয়ার পর এ টাকা পিআইও অফিসে দিয়ে না আসলে অফিসের কার্য সহকারী মনিরুজ্জামান রাগারাগি করে। তাই আমাদেরও বাধ্য হয়ে এ টাকা পরিশোধ করে আসতে হয়।

এ ব্যাপারে জানতে কুতুবদিয়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কাউছার আহমেদের মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হয়েছে তিনি কল ধরেননি। পরে তার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে টেক্স পাঠানো হলেও তিনি কোন জবাব দেননি। এ ব্যাপারে জানতে কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্যথোয়াইপ্রু মারমার মোবাইলে কল দেওয়া হলেও না ধরায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম