চিলমারীতে কৃষকের তালিকায় নয়ছয়
ধান সংগ্রহ অভিযান
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে সরকারি খাদ্যগুদামে কৃষকদের লটারিকৃত নামের তালিকায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। সরকারিভাবে প্রান্তিক কৃষকদের নিকট থেকে স্বচ্ছভাবে ধান সংগ্রহ করতে অনলাইন (ডিজিটাল) প্রক্রিয়া চালু করা সত্ত্বেও তালিকায় কিভাবে ভুয়া নাম অন্তর্ভুক্ত হয় সে প্রশ্নে প্রকৃত প্রান্তিক কৃষদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রান্তিক কৃষকদের দাবি, তালিকায় অনিয়মের বিষয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে প্রতি কেজি ধান ৩২ টাকা দরে এ্যাপস এ আবেদনের ভিত্তিতে লটারির মাধ্যমে ২২৯ জন প্রান্তিক কৃষকের নিকট থেকে ৬৮৮ মে. টন ধান, প্রতিকেজি চাল ৪৫ টাকা দরে কেনা হবে। এছাড়া উপজেলায় ৪০ জন মিলারের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৬ মে. টন চাল ও প্রতি কেজি ৩৪ টাকা দরে ৯০ মে. টন গম ক্রয় করা হবে। যা গত ৭ মে তারিখে শুরু হয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলার কথা। নিয়মানুযায়ী খাদ্য শস্য সংগ্রহের নির্দিষ্ট এ্যাপসের মাধ্যমে উপজেলার প্রান্তিক কৃষকরা আবেদন করবেন। আবেদনের সময় শেষ হলে উপজেলা কৃষি অফিসার আবেদনকারীদের তালিকা ধান সংগ্রহ কমিটির সভায় উপস্থাপন করে লটারি করবেন। লটারির মাধ্যমে কাম্যসংখ্যক কৃষককে বাছাই করে তাদের নিকট থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহ করা হবে। সংশ্লিষ্টদের দাবি সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ২২৯ জন কৃষকের তালিকা সাঁটানো হয়েছে যারা প্রত্যেকে ৩ মে. টন করে ধান সরকারি গুদামে দিতে পারবেন।
উপজেলা খাদ্যগুদামে সাঁটানো তালিকা ধরে উপজেলার থানাহাট, রমনা, রাণীগঞ্জ, নয়ারহাট, অষ্টমীর ও চিলমারী ইউনিয়ন সমুহের তালিকাভুক্ত কৃষকদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা অনেকেই চিলমারী উপজেলার বাসিন্দা নন বলে জানান। উপজেলার অষ্টমীর চর ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত কৃষক মোছা. শাপলা বেগম যার এনআইডি নং ৯১২০২২৮৮৪৭ তাকে ফোন করা হলে তিনি সাতক্ষীরা জেলাধীন শ্যামনগর থানার আশরাফুল ইসলাম বলে জানান। তার মোবাইলে ব্যাংক এসিয়া থেকে টাকা পয়সার এসএমএস যাওয়ায় তিনি ঝামেলায় পড়েছেন বলে এ প্রতিনিধিকে জানান। মো. রওশন আলী যার এনআইডি নং ৯৫৬০১০১৫০৪। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাতক্ষীরা জেলাধীন কলারোয়া উপজেলার বাসিন্দা বলে জানান। আব্দুল মালেক যার এনআইডি নং ১৯২০২০৯২০০ তার সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তিনি রং নাম্বার বলে কেটে দেন। দুর্গম চরাঞ্চলে অবস্থিত ইউনিয়নটির সুবিধাভোগীদের তালিকায় ৩৯ থেকে ৪৫নং ক্রমিকে পরিকল্পিতভাবে ০১৬১৩২৯০৬ পর্যন্ত ব্যবহার করে বাকি দুই ডিজিট পরিবর্তন করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত থানাহাট ইউনিয়নের কৃষক আমিনুল ইসলাম যার ভোটার আইডি ৮৬৭০০৮৫১৩৬ কে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি খুলনার বাসিন্দা বলে জানান। একইভাবে অন্যান্য ইউনিয়ন সমুহের তালিকাভুক্ত বেশ কিছু কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে একই অবস্থা দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার উপজেলা খাদ্যগুদামে যোগাযোগ করে জানা যায়, এ পর্যন্ত ২০ জন কৃষকের নিকট থেকে মোট ৬০ মে.টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। ধান সংগৃহীত ২০ কৃষকের তালিকা থেকে অষ্টমীরচর ইউনিয়নের তালিকায় ১৯নং ক্রমিকে থাকা মোছা. সুফিয়া খাতুনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তারা কোনো জমি চাষ করেননি এবং কোথাও কোনো ধান দেননি বলে জানান তিনি। চিলমারী ইউনিয়নের ২৩নং ক্রমিকে থাকা মোছা. কমিলা বেগমের মোবাইলে ফোন দেয়া হলে আনিছুর রহমান নামে তার নাতি ফোন রিসিভ করে গুদামে ধান দেওয়ার কথা জানান। রমনা ইউনিয়নের ১২নং ক্রমিকে থাকা মো. আলমগীর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আহাদ আলী নামের এক ব্যবসায়ী তার এনআইডি ব্যবহার করে এলএসডিতে ধান দিয়েছেন। এ বাবদ তিনি ২ হাজার টাকা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
থানাহাট ইউনিয়নের সবুজপাড়া এলাকার কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, এ্যাপসের মাধ্যমে আবেদন শুরুর পরের দিন থেকে এ্যাপসটি বন্ধ থাকায় সাধারণ কৃষক আবেদন করতে পারেনি। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান নেওয়া হচ্ছে। পূর্বমাচাবান্দা এলাকার আমিনুল ইসলাম বীর বলেন, প্রতিবছরই সরকারিভাবে ধান ক্রয়ের সময় অভিযোগ ওঠে। ধান ক্রয়ের সময় কৃষকদের পরিবর্তে ভুয়া তালিকায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্টরা। এ্যাপসের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া হলে কিভাবে ভুয়া কৃষক অন্তর্ভুক্ত হয় তা খতিয়ে দেখা জরুরি বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কুমার প্রণয় বিষাণ দাস বলেন, কৃষকরা এ্যাপসের মাধ্যমে আবেদন করেছিল। আমরা ইউএনও স্যারকে আবেদনকৃত তালিকা সরবরাহ করেছি। তিনি লটারি করেছেন। এ বিষয়ে আমার আর কিছু জানা নেই। চিলমারী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আলাউদ্দিন বসুনিয়া বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। তালিকায় থাকা কৃষকদের মোবাইল নম্বরে কিছু ভুল লক্ষ করা গেছে, সেগুলো আমরা দেখে ধান নিচ্ছি। খাদ্য শস্য সংগ্রহ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিনহাজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। আবারো খাদ্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
