Logo
Logo
×

বাংলার মুখ

গায়ে আঘাতের চিহ্ন

কক্সবাজার সৈকতে ভেসে এলো ৮৪টি মৃত কচ্ছপ

প্রজননের সময় কুকুর ও জেলেদের উৎপাত

Icon

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রজনন মৌসুমে আবারও একের পর এক মৃত কচ্ছপের দেখা মিলছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে। ২৪ দিনে ৮৪টি মৃত কচ্ছপ ভেসে এসেছে। এগুলোর গায়ে রয়েছে আঘাতের চিহ্ন। গত বছরের তুলনায় এবার মৃতের সংখ্যা অস্বাভাবিক বেশি। পর্যটক ও জেলেদের সচেতন করা এবং সৈকতে কুকুরের বিচরণ রোধের ওপর জোর দিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের দেওয়া তথ্য বলছে, কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলে গত দুইদিনে (শনি ও রোববার) ভেসে এসেছে ৬৮টি মৃত কচ্ছপ। এর আগে ৪ থেকে ২২ জানুয়ারি বিভিন্ন পয়েন্টে ভেসে এসেছে আরও ১৪টি। গত বছর জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের বিভিন্ন পয়েন্টে ২৯টি মৃত কচ্ছপ পাওয়া গিয়েছিল। ওই সময় ৩টি মৃত ডলফিন, ১টি মৃত পরপইসও ভেসে এসেছিল।

বাংলাদেশ সামুদ্রিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শিমুল ভূঁইয়া ৮৪টি মৃত কচ্ছপ ভেসে আসার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সম্প্রতি কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বিভিন্ন এলাকায় কিছুসংখ্যক কচ্ছপের মৃতদেহ পড়ে থাকার খবর দেয় স্থানীয়রা। এ তথ্যের ভিত্তিতে বোরির একটি গবেষকদল শনিবার সকাল থেকে সৈকতের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে যান। প্রথমদিনে টেকনাফের সাবরাং জিরো পয়েন্ট থেকে উখিয়া উপজেলার রূপপতি এলাকা পর্যন্ত ১২টি কচ্ছপের মৃতদেহ উদ্ধার করেন। রোববার দ্বিতীয় দিনে রূপপতি থেকে সোনারপাড়া পর্যন্ত ৪৯টি এবং পেঁচারদ্বীপ থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত ৭টি কচ্ছপের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। বোরির এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, উদ্ধার সব মৃত কচ্ছপই অলিভ রিডলে প্রজাতির। উদ্ধার করা কচ্ছপগুলোর মধ্যে কিছুসংখ্যক এক-দুদিন, কিছুসংখ্যক সাত এবং ১০-১৫ দিন বা এরও আগে মারা গেছে। প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক সংস্থা নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) বলছে, সামুদ্রিক মা কচ্ছপ এখন মহাবিপদে রয়েছে। ২০০৩ সালে সংস্থাটির এক জরিপে দেখা গেছে, কক্সবাজার উপকূলের ৫২ পয়েন্টে সামুদ্রিক মা কচ্ছপ ডিম দিতে আসত। এসব পয়েন্ট মা কচ্ছপের কাছে অত্যন্ত নিরাপদ ছিল। সংস্থাটির উপপ্রকল্প পরিচালক ড. শফিকুর রহমান বলেন, মা কচ্ছপের ডিম দেওয়ার সময় সাধারণত নভেম্বর থেকে শুরু, যা এপ্রিল-মে পর্যন্ত চলে। তারা রাতে নির্জন উপকূলে এসে গর্ত তৈরি করে ডিম দেয়। একটি কচ্ছপ ৩০টি পর্যন্ত ডিম দেয়। এরপর মা কচ্ছপ ফিরে যায় সাগরে। বর্তমানে কমে ৩৪ পয়েন্টে এসে দাঁড়িয়েছে। ডিম দিতে এসে প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে মা কচ্ছপ। নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের (নেকম) প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন ব্যবস্থাপক আবদুল কাইয়ুম বলেন, নানা কারণে ডিম দেওয়ার স্থানগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি সৈকতে আলোকায়ন, সমুদ্রে পরিত্যক্ত জাল ফেলে দেওয়া, অবৈধ কারেন্ট জাল পুঁতে রাখা, ডিম ছাড়ার মৌসুমে বিচে ডাইভিং, খেলাধুলা, সৈকতে হাঁটা প্রভৃতি কচ্ছপের ডিম দেওয়ার পরিবেশ নষ্ট করেছে। গভীর সাগরে ট্রলিং জালে আটকা পড়েও মারা যাচ্ছে মা কচ্ছপ। ডিমগুলো খেয়ে ফেলছে কুকুর। ডিম পাড়তে উঠলেই মা কচ্ছপের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সংঘবদ্ধ কুকুর। ফলে মা কচ্ছপ মহাবিপদে পড়েছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম