আড়াইশ গ্রাহক সর্বস্বান্ত
পাবনায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা নিয়ে উধাও মেঘনা এমসিসিএস লিমিটেডের এমডি কাইয়ুম
পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
পাবনায় সঞ্চয় ও ডিপোজিট পেনশন স্কিম-ডিপিএসের নামে কমপক্ষে আড়াইশ গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা মেঘনা এমসিসিএস লিমিটেড নামের একটি এনজিওর এমডি আব্দুল কাইয়ুম ও তার স্ত্রী। তিন মাস ধরে পলাতক এবং অফিসও তালাবদ্ধ থাকায় দিশেহারা অসহায় সহজ সরল দরিদ্র নারীরা। অবিলম্বে এই জালিয়াতির সুষ্ঠু বিচার এবং জমানো টাকা ফেরতের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। পাবনা প্রেস ক্লাবের সামনে আব্দুল হামিদ সড়কে বুধবার দুপুরে মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এই দাবি জানানো হয়। প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা অভিযোগ করে বলেন, ২০১১ সালে পাবনা শহরের দিলালপুরে মেঘনা এমসিসিএস লিমিটেড নামে একটি এনজিও চালু করেন প্রতারক আব্দুল কাইয়ুম। নিজে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং তার স্ত্রী রঞ্জনা খাতুন চেয়ারম্যান হিসাবে কাজ করেন। তাদের নিয়োগ করা মাঠকর্মীরা গ্রামের অসহায় ও সহজ-সরল নারীদের টাকা দ্বিগুণ হওয়ার প্রলোভন দিয়ে সঞ্চয় ও ডিপিএসের নামে টাকা জমা নিতে শুরু করেন। এরপর একে একে গ্রামের সহজ-সরল নারীরা নিজেদের জমানো টাকা লগ্নি করেন ওই এনজিওতে। তিন মাস আগে কিছু গ্রাহকের ডিপিএসের ৫ বছর মেয়াদপূর্ণ হওয়ায় তারা লভ্যাংশসহ টাকা চাইলে ফেরত দিতে তালবাহানা শুরু করেন কাইয়ুম। একপর্যায়ে গ্রাহকদের জমানো সব টাকা নিয়ে উধাও হন তিনি ও তার স্ত্রী। ভুক্তভোগীদের দাবি, সমিতির ২৫০ জন গ্রাহকের প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন প্রতারক কাইয়ুম ও তার স্ত্রী। টাকা দিতে সময় নিয়েও তিনি টাকা দিতে পারেননি কাউকে। এখন অফিসও তালাবদ্ধ। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। নিজেদের কষ্টে উপার্জিত টাকা হারিয়ে দিশেহারা অসহায় নারীরা। তারা অবিলম্বে প্রশাসনের কাছে প্রতারক কাইয়ুম ও তার স্ত্রী রঞ্জনা খাতুনকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। একই সঙ্গে নিজেদের জমানো টাকা ফেরতের দাবি জানান। পাবনা পৌর সদরের লাইব্রেরি বাজারের আব্দুল মালেকের স্ত্রী ভুক্তভোগী আফসানা খাতুন বলেন, ‘আমার জমা দেওয়া ২৩ লাখ টাকা নিয়ে প্রতারক কাইয়ুম পালিয়েছে। তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এখন আমার টাকা কীভাবে ফিরে পাব সেই চিন্তায় দিশেহারা হয়ে গেছি।’ এনজিওটির মাঠকর্মী হিসাবে কাজ করেছেন সদর উপজেলার বলরামপুর মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত মোস্তফার স্ত্রী সুলতানা খাতুন।
তিনি বলেন, ‘আমি মাঠকর্মী হিসাবে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে নারীদের বুঝিয়ে এ এনজিওতে টাকা সঞ্চয় করিয়েছি, ডিপিএস করিয়েছি। আমার মাধ্যমে প্রায় ৮০ লাখ টাকা এনজিওতে জমা হয়েছে। এখন মালিক প্রতারণা করে পালিয়ে যাওয়ায় গ্রাহকরা সব আমার বাড়িতে চড়াও হচ্ছেন। টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন।’ আমি এখন এতগুলো টাকা কীভাবে পরিশোধ করব বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন মাঠকর্মী সুলতানা খাতুন। সরেজমিনে বুধবার বিকালে পাবনা শহরের দিলালপুরে মেঘনা এমসিসিএস লিমিটেড-এর প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে অভিযুক্ত আব্দুল কাইয়ুম ও তার স্ত্রী রঞ্জনা খাতুনের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। পাবনা সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম বলেন, এ বিষয়ে কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
