প্রকল্পের সিংহভাগ বরাদ্দ লুট
ফরিদগঞ্জে ৬৩ লাখ টাকার খাল খনন ছয় লাখে শেষ
প্রবীর চক্রবর্তী, ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর)
প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ফরিদগঞ্জে তিনটি খাল পুনর্খনন ও একটি ড্রেন মেরামত প্রকল্প বাস্তবায়নে ৬৩ লাখ টাকা প্রকল্প খরচ ধরা হলেও বাস্তবে মাত্র ছয় লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। বাকি টাকার হদিস নেই। অভিযোগ রয়েছে, অর্থ বরাদ্দের সঙ্গে কাজের কোনো মিল নেই। হয়েছে অনিয়ম ও অর্থ লুটপাট। এর পেছনে রয়েছে বাস্তবায়নকারী সমবায় সমিতিগুলো ও স্থানীয় অফিস। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ ফরিদগঞ্জ অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলার সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের তিনটি খালের মোট দুই হাজার ৮০০ মিটার পুনর্খনন করা হচ্ছে। যার মধ্যে ইউনিয়নের আইচারবাগ খালে এক হাজার ৩০০ মিটার খননে ২৭ লাখ টাকা, তেলিশাইর খালে ৯০০ মিটার খননে ১৯ লাখ এবং দিগদাইর-মনতলা খালে ৬০০ মিটার খননে ১৩ লাখ টাকা এবং একটি পুরোনো ড্রেন সংস্কার করতে চার লাখ টাকা প্রকল্প বাজেট ধরা হয়। এ কাজ বাস্তবায়নের জন্য আইচারবাগ খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লি., মনতলা চালিয়াপাড়া খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লি. ও চৌধুরী মিজি খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন হয়। অথচ সরজমিনে গিয়ে সমিতিগুলোর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এলাকার কয়েক জন জানান, ‘ভেকু দিয়ে খাল খনন করা হয়েছে। তিনটি খাল মিলিয়ে সর্বসাকল্যে এক্সকেভেটর/ভেকু চলেছে ২৮ থেকে ৩০ দিন। ভেকু ভাড়া প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা করে দিলে মোট সাড়ে পাঁচ বা ছয় লাখ টাকা খরচ হওয়ার কথা। কিন্তু বাকি টাকা দিয়ে কি করা হয়েছে, তা আমরা কেউই জানি না।’ আইচারবাগ খালপারের একাধিক কৃষক জানান, এ খাল খননে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নাম করে খালের মাটি ভরা মৌসুমে ধানের ওপর ফেলা হয়েছে। কিন্তু ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। এক হাজার ৩০০ মিটার খাল খনন করার কথা থাকলেও সে পরিমাণ খনন করা হয়নি। তারা জানান, এ খালে গড়ে প্রতিদিন ৯-১০ ঘণ্টা করে ১৩-১৪ দিন কাজ হয়েছে। দিগদাইর ও মনতলা খালপারের একাধিক কৃষকও একই কথা জানান। তেলিসাইর খালপারের একাধিক কৃষক জানান, তাদের খাল খননের কথা ৯০০ মিটার। কিন্তু তা না করেই মাত্র একদিন বিকালে কয়েক ঘণ্টা এবং পরদিন সকালে কয়েক ঘণ্টা ভেকু চালিয়ে তারা ভেকু নিয়ে সংশ্লিষ্টরা চলে যান এবং মানুষের ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেন। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও পরে আর তারা কোনো যোগাযোগ করেননি। এলাকাবাসী জানান, ‘স্থানীয় ইউপি সদস্য আ. মমিন দুলাল ও তার পরিবারের সদস্যদের দিয়ে এ সমিতি করেছেন। কৃষকদের উপকারের জন্য এ সমিতির নামে লাখ লাখ টাকা আসে এবং কোনো কোনো বছর কোটি টাকার ওপরেও আসে। কিন্তু আমরা কোনো মানসম্মত কাজ দেখি না। যে সমিতির নামে টাকা আসে সে সমিতির অফিস কোথা তাও আমরা জানি না। শুনেছি এ বছরও নাকি ড্রেন এবং খাল খননের জন্য ৬৩ লাখ টাকা এসেছে। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম এ এলাকার তিন জায়গায় গড়ে ২৭-২৮ দিন ভেকু চলেছে। কিন্তু ড্রেন কোথায় করা হয়েছে তা আমরা বলতে পারব না।’ পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি ইউপি সদস্য আ. মমিন দুলালের সঙ্গে একাধিকবার দেখা করার চেষ্টা করেও বক্তব্য নেওয়া যায়নি। আরেক সমিতির সভাপতি সৈয়দ জানান, ‘যেটুকু সম্ভব কাজ করিয়েছি। আমরা শুধু নামেই আছি, যা কিছু করার সব এলজিইডি অফিস থেকেই করা হয়।’ সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানান, আ. মমিন দুলাল মেম্বার প্রতিবছর খাল খননের নামে সরকারি অর্থ এনে হরিলুট করছেন এবং খাল খননের নামে তিনি সাগর চুরি করছেন। উপজেলা প্রকৌশলী আবরার আহমেদ জানান, কাজ এখনো চলমান রয়েছে। যদিও কাজের তত্ত্বাবধানকারীরা বলছেন, এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে গেছে।
