Logo
Logo
×

বাংলার মুখ

শহীদ মানিকের মায়ের আর্তনাদ

‘এখনো মনে হয় ছেলে মা মা বলে ডাকছে’

জুলাই অভ্যুত্থান

Icon

প্রবীর চক্রবর্তী, ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর)

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

‘এখনো মনে হয়, আমার মানিক আমাকে মা মা বলে ডাকছে। প্রতিদিন আমার ফোনে কতবার যে কল করত। মা তুমি কী কর, তোমার বউ কী করে, নাতি-নাতনিরা কী করে, তুমি ভাত খাইছোনি, ওষুধ খাইছোনি। ফোন ধরতে দেরি হলে এতক্ষণ কোথায় ছিলে?’ এ ধরনের হাজার প্রশ্নের জবাব দিতে হতো তাকে। বাড়িতে এলে যতদিন সে থাকত, ততদিন তার সঙ্গে একসঙ্গে ভাত খেতে হতো। মাঝে মাঝে আমাকে শিশুর মতো কোলে করে এই ঘর থেকে ওই ঘরে নিয়ে যেত। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের দিনও সে সকাল থেকে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছিল। দুপুরের দিকে সর্বশেষ ফোন যখন আসে, তখন আমি বাইরে ছিলাম। ঘরে আসার পর ঘরের লোকজন আমাকে বলে, মানিক বারবার আপনাকে ফোন দিচ্ছে, ফোনটা সঙ্গে রাখতে পারেন না। তখন আমি মানিকের নম্বরে কল করলে অপর প্রান্ত থেকে ভিন্ন একজন ফোন ধরেন। আমি তখন বলি, আপনি কে? আমার মানিক কই। তিনি বলেন, মানিক ওই যে রাস্তার মধ্যে পড়ে আছে। কেন বাবা, কী হয়েছে? জিজ্ঞাসা করলে জানান, মাথায় গুলি লেগেছে। আমি হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। যেন আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। পরে দৌড়ে গিয়ে মানিকের বউকে বলি, তুমি ফোন দেও তো, আমার ফোনের টাকা শেষ, ওরা মানিকের কথা কী বলছে। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, আমার মানিক আমাকে ছেড়ে চলে গেছে।’ এভাবেই একনাগাড়ে কথাগুলো বলছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানের বিজয়ের দিন ৫ আগস্ট ঢাকার উত্তরায় পুলিশের গুলিতে নিহত যুবদল কর্মী ফরিদগঞ্জের মানিকরাজ গ্রামের আব্দুল কাদির মানিকের মমতাময়ী মা ফাতেমা বেগম। তিনি বলেন, ছেলে আমার ছোটবেলা থেকেই একাত্তরের যুদ্ধের কথা আমার কাছে শুনত। মানিক যখনই জানতে চাইত, তখনই তাকে বলতাম। জুলাই মাসের শেষের দিকে সে আমাকে প্রায়ই বলত মা যুদ্ধ দেখলে ঢাকায় আসো, আমি বলেছি বাবারে আমি যুদ্ধ দেখেছি, তোর সেখানে যাওয়ার দরকার নেই, আমার ভয় করে। সে জানায়, ৭-৮ দিন সে আন্দোলনে গিয়েছে। সর্বশেষ মৃত্যুর আগের দিনও সে সবাইকে পানি খাওয়াতে গিয়েছিল। কিন্তু আমার বাবা পরদিন জুলাই যুদ্ধের আনন্দ মিছিলে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। আমি আর যুদ্ধ চাই না, আমার ছেলের হত্যার বিচারের পাশপাশি যাতে আর কোনোদিন জুলাই ফিরে না আসে, দেশের সবার কাছে আমার একটাই দাবি। মানিকের বিধবা স্ত্রী রাহিমা বেগম জানান, ‘আমার সুখের সংসারে দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে ভালোই ছিলাম। আমার স্বামী সংসারের সুখের জন্য ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকার একটি রড সিমেন্টের দোকানে সেলসম্যানের চাকরি করতেন। কিন্তু একটি গুলি আমার কাছ থেকে সব কেড়ে নিল।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম