জুলাই অভ্যুত্থান
শহীদ নিলয়ের বাবা-মা এখনো শোকে কাতর
আখতারুজ্জামান আখতার, পাবনা
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা পাবনায় কর্মসূচিতে এসে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের খোঁজ নেননি। এমনকি শহীদ জাহিদ ও নিলয় এর নামে শহীদ চত্বরে পথসভা ও সমাবেশ করলেও সেখানে ডাকা হয়নি তাদের (শহীদদের) বাব-মা বা স্বজনদের। শহীদ নিলয়ের বাবা আবুল কালাম আজাদ রোব্বার এ নিয়ে যুগান্তর প্রতিবেদকের কাছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট দুপুরে পাবনা শহরের আব্দুল হামিদ সড়কের ট্রাফিক মোড়ে ছাত্র-জনতার মিছিল সমাবেশ চলাকালে আওয়ামী লীগ নেতাদের গুলিতে স্কুলছাত্র মাহবুব হাসান নিলয় (১৪) এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম (২২) শহিদ হন। ওইদিনই ঘটনাস্থল ট্রাফিক মোড়ের নাম বদলে রাখা হয় শহীদ চত্বর। এই শহীদ চত্বরেই গত ৭ জুলাই এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা জুলাই পদযাত্রা শেষে সমাবেশ করেন। শহীদ নিলয়ের বাবা আবুল কালাম আজাদ জানান, আজ নিলয় চলে যাওয়ার এক বছর হলো। এখনো তারা স্বাভাবিক হতে পারেননি। নিলয়ের মা দিল আফরোজ এখনো নিলয়ের ছবি এবং ব্যবহার্য কাপড় চোপড় ও জিনিসপত্র বুকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কাঁদেন। তিনি নিলয়ের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ৪ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯টার সময় ছেলেটি বাড়ি থেকে বের হয়। আমি তাকে বারবার বলেছি-বাবা কয়েক দিন তো গেছ; অবস্থা ভালো না, আজ যাওয়ার দরকার নাই। কিন্তু ছেলে কোনো কথা শুনেনি। বরং সে বলেছিল-দরকার হলে শহীদ হব, তবুও আমি যাব। দিল আফরোজ আরও বলেন, নিলয় যাওয়ার সময় কী মনে করে ফিরে এসে বারবার আমাকে দেখে যায় এবং একপর্যায়ে বলে মা আমাকে একটু খাইয়ে দাও। ছেলের এই শেষ কথাগুলো আমি কিছুতেই ভুলতে পারিছ না। অঝোরে কাঁদেন দিল অফরোজ। পাবনা সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নের ব্রজনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদের ২ ছেলে ২ মেয়ের মধ্যে শহীদ নিলয় সবার ছোট। সে পড়ত পাবনা শহরের সিদ্দিক মেমোরিয়াল স্কুলে ৯ম শ্রেণিতে। আবুল কালাম আজাদ বলেন, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নিলয় বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর দুপুরে ফিরে আসে লাশ হয়ে। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ছাত্র-জনতার একটি মিছিল শহরে প্রবেশ করে এবং শহরের ট্রাফিক মোড়ে (বর্তমান শহীদ চত্বর) অবস্থান নেয়। এই শহীদ চত্বরের পাশেই আওয়ামী লীগ নেতাদের গুলিতে শহীদ হন তার আদরের ছেলে নিলয় এবং একই ইউনিয়নের চর বলরামপুরের দুলাল উদ্দিন মাস্টারের ছেলে জাহিদুল ইসলাম। ২টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুলাল উদ্দিন মাস্টার বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতাসহ ১০৩ জনকে আসামি করা হয়। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও এজাহারনামীয় গুরুত্বপূর্ণ কোনো আসামি গ্রেফতার হয়নি। শোকার্ত শহীদের বাবা আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, আমার ছেলে চলে গেছে। তাকে আর কখনো পাব না। কিন্তু যাদের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হলো-সেসব শহীদের স্বপ্ন কি পূরণ হচ্ছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে-শহীদদের ত্যাগের কথা এখন সবাই ভুলতে বসেছে। আমি হতাশ, আমরা হতাশ!! শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে জাতি কী করে এটি আমার এখন দেখার ইচ্ছা। এ সময় আক্ষেপ করে তিনি বলেন, গত ৭ জুলাই এনসিপি নেতারা পাবনায় আসলেন এবং নিলয় ও জাহিদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে মিটিং করলেন। কিন্তু আমাদেরকে ডাকলেন না বা একটু খোঁজ নিলেন না। তারা এখনই ভুলে গেলেন! সরকারি বেসরকারি বেশ কয়েক মহল থেকে সান্ত্বনা বা অর্থ সহযোগিতা পাওয়া গেলেও তিনি সেসব হাতে নেননি। এ সবই মসজিদ মাদ্রাসায় এবং দান খয়রাতে বিলিয়ে দিয়েছেন উল্লেখ করে শহীদের বাবা বলেন-ছেলেই নাই, টাকা দিয়ে কী হবে!
