Logo
Logo
×

বাংলার মুখ

শিক্ষক কর্মচারীরা নিয়ন্ত্রণহীন

কিশোরগঞ্জে অনিয়ম দুর্নীতি করেও বেতন পাচ্ছেন ইএফটিতে

Icon

আব্দুর রাজ্জাক, কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী)

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বেসরকারি স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। মাস শেষে সরাসরি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বেতনের টাকা দেয় সরকার। এতে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় প্রধানরা তাদের কর্তৃত্ব হারিয়েছেন। লাগামহীন হয়ে উঠেছে শিক্ষক-কর্মচারীরা। কেননা, আগে কেউ প্রতিষ্ঠানের নিয়ম মেনে না চললে তাকে সতর্ক করা হতো। প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠান প্রধান তার দু-এক দিনের বেতন কর্তন করত। পরে বিচ্যুতি না করলে তার বকেয়া বেতন সমন্বয় করে দিত। এই অনুশাসনের কারণে তিনি সরকারি বিধিবিধান মেনে প্রতিষ্ঠানে তার দায়িত্ব পালনে সজাগ থাকতেন। আর যদি এমন হয়, কিছুতেই অনুগত করা যাচ্ছে না, তখন তাকে শোকজ করা হতো। পরে সেই প্রতিষ্ঠানের গভর্নিংবডি রেজুলেশন ক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণে সিদ্ধান্ত নিত। কিন্তু এখন ইএফটির মাধ্যমে সরাসরি শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরকার বেতনের টাকা পাঠায়। প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত আছে কি-না এর তথ্য না নিয়ে সবাইকে পুরো মাসের বেতন দেয়। ইএফটিতে প্রতিমাসে শিক্ষক-কর্মচারীদের উপস্থিতির প্রতিবেদন নেওয়ার কোনো সিস্টেম নেই। মাস গেলেই বেতন এসে অ্যাকাউন্টে জমা হয়। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা ক্ষেত্র বিশেষে অধীনস্থদের নিকট প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ হারায়। কারণ, অনেকে প্রতিষ্ঠানের নিয়মকানুন না মেনে দায়িত্ব পালন করে বেতন পাচ্ছেন। আবার অনেকে মাসের পর মাস প্রতিষ্ঠানে না এসেও ইএফটির কল্যাণে বেতন খাচ্ছেন। এভাবে ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রতিকার বা সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই।

অথচ ইএফটির পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে সারা দেশে বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল ও কলেজে হ-য-ব-র-ল অবস্থ বিরাজ করছে। বর্তমান বেতন প্রদানের পদ্ধতিগত ত্রুটির দু-একটা বাস্তব উদাহরণ উল্লেখ করলে হয়তো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর খুলবে। এক কলেজ শিক্ষিকা দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানে ছুটিবিহীন অনুপস্থিত। আগে এমপিও শিট আসার পর ম্যানুয়ালি বিল করে ব্যাংকে সাবমিট করার সময় প্রতিষ্ঠান প্রধান তার বেতন বন্ধ করে রেখেছিলেন। কিন্তু এখন ইএফটির পদ্ধতিগত ত্রুটির কল্যাণে তার বেতন সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ায় তিনি প্রতিষ্ঠানে না এসেও বেতন পাচ্ছেন। অপর দিকে মাধ্যমিক স্কুলের এক কর্মচারী প্রবাসে গেছেন। অথচ তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নিয়মিত প্রতি মাসে বেতনের টাকা আসছে। এছাড়া, যারা সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় আছেন। বিধি অনুযায়ী তাদের অর্ধেক বেতন পাওয়ার কথা। কিন্তু ইএফটির কারণে তারাও পূর্ণাঙ্গ বেতন পাচ্ছেন। তাহলে প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত ও প্রধানের কর্তৃত্বের মূল্যায়ন কোথায়? এতে অনেকের মাঝে বিধি মেনে চাকরি করা অনীহার সৃষ্টি হয়েছে। কেননা, একই প্রতিষ্ঠানে কেউ নিয়মিত এসে বেতন নেবে আবার কেউ প্রতিষ্ঠানে মাসের পর মাস অনুপস্থিত থেকে বেতন খাবে। যারা নিয়মকানুন মেনে চাকরি করে বেতন নিচ্ছেন তাদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। একজন অন্যজনের দায়িত্ব অবহেলা ও অনুপস্থিতির তুলনা দিয়ে নিজেও ইএফটির পদ্ধতিগত ত্রুটির (দুর্বলতার) সুযোগ নিচ্ছেন। এদিকে বেসরকারি স্কুল কলেজ শিক্ষক-কর্মচারীদের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) মূল্যায়নের কোনো নিয়ম নেই। তাই প্রতিষ্ঠান প্রধানরা অধীনস্থদের নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো কর্তৃত্ব দেখাতে পারেন না। শুধু বেতন প্রদানে প্রতিমাসে যে সামান্য প্রভাব বিস্তারের ভয় প্রদর্শন করত, সেটাও ইএফটি কেড়ে নিয়েছে। এ যেন দাঁতহীন বাঘের ন্যায় বনের রাজায় পরিণত হয়েছে। মাঝেমধ্যে শুধু হুঙ্কার দিয়ে অধীনস্থদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। আগের গর্জন সবার কান পর্যন্ত পৌঁছালেও এখন ইএফটির বার্তা শব্দ বহন না করায় সেই গর্জন অনেকের কানের ধার দিয়েও যায় না। কেননা, প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত আর দেরিতে আসা ও দায়িত্ব অবহেলা ইএফটিতে এমন কোনো অপশন নেই। প্রতি মাসের বেতন তো অটো প্রত্যেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে। যে যাই বলুক আর হাজিরা খাতায় আগমন-প্রস্থানের সময়ে যে চিহ্নই দেখাক না কেন ভয়-ডর তাদের মনে কোনো কাজ করে না। তারা জানেন, বেতন প্রদানে প্রতিষ্ঠান প্রধানের কোনো নিয়ন্ত্রণ ও দায়বদ্ধতা নেই। আরও যদি কোনো প্রতিষ্ঠান প্রধানের আর্থিক অনিয়মের দুর্বলতা/সীমাবদ্ধতা থাকে, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। আগে ১৫ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে বেতন পেতেন বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা। প্রতিমাসে বিলম্বে বেতন পাওয়ার বিষয়টি নিরসনের উদ্যোগ নেয় সরকার। জানুয়ারি ২৫ হতে সারা দেশে ইএফটির মাধ্যমে বেসরকারি স্কুল-কলেজের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীকে বেতন দেয়। এ পদ্ধতিকে সবাই সাধুবাদ জানালেও প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় প্রধানরা কর্তৃত্ব হারায়। এজন্য ইএফটির পদ্ধতিগত কিছু ত্রুটি সংশোধনে কর্তৃপক্ষের যেন নজর না এড়ায়। যদি প্রতিষ্ঠান প্রধানরা প্রতি মাসের শেষে অনলাইনে ইএফটিতে প্রত্যেক শিক্ষক-কর্মচারীর হাজিরা প্রতিবেদন পাঠাত। কেউ ১ কর্মদিবস অনুপস্থিত থাকলে প্রতিষ্ঠান প্রধান সেই দিনের বেতন কর্তন করবে। এছাড়া কারও সাময়িক বরখাস্তের ক্ষেত্রে অর্ধেক বেতন দেওয়া, চাকরিচ্যুত বা মৃত্যুজনিত কারণে সম্পূর্ণ বেতন বন্ধ করার অপশন থাকবে। গভর্নিং বডির রেজুলেশন সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠান প্রধান ইএফটিতে প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠাবে। এতে একদিকে অপ্রাপ্য কেউ বাড়তি বেতন উত্তোলন করতে পারবে না। অপরদিকে প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ও অনুশাসনের কর্তৃত্ব সবাই মেনে চলবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম