Logo
Logo
×

বাংলার মুখ

দাগনভূঞায় শহীদ মায়ের আহাজারি

মাসুদ আমাকে আর মা ডাকবে না

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ফেনীর মহিপালে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের গুলিতে মাসুদ নিহত

Icon

আবু তাহের, দাগনভূঞা (ফেনী)

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আমার বুকের ধন সরওয়ার জাহান মাসুদ কলেজ থেকে এসে আমাকে আর মা মা বলে ডাকবে না। মাসুদের অপেক্ষায় আমি এখনো পথ চেয়ে আছি। কলেজ থেকে ফিরেই আমাকে ডেকে সে বাড়িতে অস্থির করে ফেলত। আজ এক বছর মাসুদের কণ্ঠে মা ডাক শুনি না। দানবরা আমার কলিজার ধন মাসুদকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করেছে। কথাগুলো যুগান্তরকে বলেছেন শহীদ মাসুদের মা বিবি কুলসুম। চোখের পানি ফেলে তিনি বলেন, কোন বর্বরযুগে বাস করছি। আমার নিরপরাধ ছেলে মাসুদকে ফেনীর মহিপালে গুলি করেও ক্ষান্ত হয়নি। হায়েনারা চিকিৎসা নিতে পর্যন্ত দেয়নি। চিকিৎসার জন্য নেওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পিটিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। আমার মেঝ ছেলে সামির ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য জানোয়ারদের পা ধরেও মন গলাতে পারেনি। দ্রুত মাসুদের লাশ দাফন করার জন্য হুমকি দিয়ে বলে না হয় বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। আমার কলিজার ধন মাসুদের জন্য শোক করতেও দেয়নি। যুগান্তরের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ছেলের শোকে মাঝে মাঝে নির্বাক হয়ে শহীদ মাসুদের ছবির দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলেন মা বিবি কুলসুম। বুকভরা কষ্ট নিয়ে খুনিদের ফাঁসির দাবি জানান শহীদ মাসুদের মা। এ সময় শহীদ সারওয়ার জাহান মাসুদের মা বিবি কুলসুম বলেন, আমার ছেলে আম্মু বলে ডাকবে না আর কোনো দিন। ২২ বছর এভাবেই চলত, এখন আর সে পৃথিবীতে নেই। আমার ছেলে নেই এটি মানতে পারছি না। কীভাবে কাটবে মাসুদকে ছাড়া আমার স্বপ্নভরা জীবন। এ সময় ছেলের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন শহীদ মাসুদের মা বিবি কুলসুম। মাসুদকে হারিয়ে মাসহ স্বজনরা বুকভরা কষ্ট আর আর্তনাদের মধ্য দিয়ে নিরানন্দে সময় কাটছে পরিবারের। দাগনভূঞার জায়লস্কর ইউনিয়নের উত্তর জায়লস্কর গ্রামের মীরবাড়ির প্রবাসী বাবা মো. শাহজাহান টিপুর বড় ছেলে শহীদ মাসুদ। ফেনী সরকারি কলেজের ডিগ্রি ১ম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। গত বছর ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ফেনীর মহিপালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলাকালীন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের চালানো তাণ্ডবে গুরুতর আহত হন। মাসুদকে গুরুতর আহতাবস্থায় দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে বেকেরবাজারে ব্যারিকেড দিয়ে উপজেলা যুবলীগ সম্পাদক ও মাতুভূঞা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে মাসুদকে পিটিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। ঘাতকদের পা ধরে কাকুতিমিনতি করেও রক্ষা করতে পারেনি শহীদ মাসুদকে। পৈশাচিক কায়দায় গুলিবিদ্ধ মাসুদকে বেদম মারধর করে ঘাতকরা উল্লাস করে। ‘রাজাকার মারলে গুনাহ হবে না সওয়াব হবে’ বলে মৃত্যু নিশ্চিত করে স্লোগান দিয়ে নৃত্য করে ঘাতকরা।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম