জুলাই অভ্যুত্থান
স্বামীর অপেক্ষায় আজও সুমির নিরন্তর চোখ
এসএ মাহমুদ সেলিম, পঞ্চগড়
প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জুলাই বিপ্লবের উত্তাল আন্দোলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া ইজিবাইকচালক আল আমিন সেই যে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন। এরপর আর বাসায় ফিরে আসেননি তিনি। বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আল আমিন তার ইজিবাইকে মাইক লাগিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনাবিরোধী স্লোগান পুরো শহরজুড়ে শোনাতেন। আন্দোলনে প্রত্যক্ষ যোদ্ধা ছিলেন তিনি। তিনি মানুষকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানাতেন। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট বাসা থেকে কাজের কথা বলে বের হয়ে যান, এরপর থেকেই নিখোঁজ হন আল আমিন। তার পাঁচ বছর বয়সি শিশুকন্যা আফরিন আক্তারকে নিয়ে স্ত্রী সুমি আক্তার আজও তার ফিরে আসার পথপানে চেয়ে আছেন। তার দৃঢ়বিশ্বাস একদিন নিশ্চয়ই স্বামী ফিরে আসবেন। বাবার কণ্ঠেও শুধুই শোকের কথা। কিন্তু দিন যায় মাস যায় বছর ঘুরে এলেও আল আমিন ফিরে আসে না।
প্রতীক্ষার প্রহর যেন কাটে না স্ত্রী সুমি আক্তারের। তাই তো তার চোখেমুখে এখন কেবলি অন্ধকার অনিশ্চিত এক ভবিষ্যৎ। ছোট্ট শিশুকন্যার অনাগত ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় প্রতিটি দিন কাটছে তার। স্বামীর নিখোঁজের পর সুমি তার বাপের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউপির পূর্ব আমবাড়ি গ্রামে ফিরে আসেন। এখন তিনি তার বাবার সংসারেই থাকছেন। কথা প্রসঙ্গে সুমি আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীর নিখোঁজের পর বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু আমার পাঁচ বছর বয়সি মেয়ের ভবিষ্যৎ কী? কে তার দায়িত্ব নেবে বা কে তাকে ভরণপোষণ, লেখাপড়া বা দেখাশোনা করবে।
জানা যায়, পঞ্চগড় পৌর এলাকার দর্জিপাড়া গ্রামের নিঃসন্তান দম্পতি মনু মিয়া ও রুনা বেগম আল আমিনকে দত্তক নেন। এখানেই তিনি বড় হন। এরপর জীবন ও জীবিকার তাগিদে পেশা হিসাবে আল আমিন ইজিবাইকচালক চালাতে শুরু করেন। এ ইজিবাইক চালিয়ে যা আয় হতো তা দিয়ে কোনোমতে তার শিশুকন্যা ও বৃদ্ধ পালক পিতা-মাতাকে চালাতেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্যের অনুপস্থিতিতে এখন ভেঙে পড়েছে পুরো পরিবার। এদিকে অভাব-অনটন আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কায় সুমি তার শ্বশুরবাড়ি দর্জিপাড়া থেকে বাবার বাড়ি আমবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু এখানে দরিদ্র বাবার আশ্রয়ে থেকে শিশুকন্যাকে নিয়ে মানবেতর দিন যাপন করছেন তিনি। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি তালিকায় নাম না থাকায় অসহায় এ পরিবারটি সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে সুমি আক্তার জানান, আগস্টের কিছুদিন পর জেলা প্রশাসক সাবেত আলী ১০ হাজার টাকা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পঞ্চগড়ের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী ৩০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা হিসাবে সুমি আক্তারকে প্রদান করেন।
এদিকে আল আমিনের বাবা মনু মিয়া বলেন, ‘আন্দোলনে গিয়ে গত এক বছর ধরে আর বাড়িতে ফেরেনি আল আমিন। অনেক খুঁজেছি, থানায় অভিযোগ ও মামলা দিয়েছি কিন্তু এখন পর্যন্ত ছেলেকে খুঁজে পাইনি। সে আমাদের একমাত্র ভরসা ছিল, এখন আমরা খুব কষ্টে দিন অতিবাহিত করছি। আমার ছেলে যদি সত্যিই মৃত্যুবরণ করে থাকে তবে তার লাশটি হলেও একবার দেখতে চাই।’ এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক সাবেত আলী জানান, ‘আমরা চেষ্টা করছি পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর। ইতোমধ্যে আল আমিনের স্ত্রীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা ও সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’
