Logo
Logo
×

ক্যাম্পাস তারুণ্য

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা

Icon

ফয়সাল মনোয়ার

প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দিন দিন উচ্চশিক্ষা খাতে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দীর্ঘদিন ধরে উচ্চশিক্ষায় নেতৃত্ব দিলেও বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আসনসংখ্যা ও সুযোগ-সুবিধার সীমাবদ্ধতার কারণে চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের বড় একটি ফারাক তৈরি হয়েছে। এ সংকট মোচনে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কার্যকর বিকল্প হিসাবে ভূমিকা রাখছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ১১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন আছে, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৪.৩ লাখ শিক্ষার্থী বর্তমানে অধ্যয়নরত আছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা বিভাগে। এ সংখ্যাটি দেশের উচ্চশিক্ষার মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৪৫ শতাংশ। এটি প্রমাণ করে যে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন আর শুধু সহায়ক নয়, বরং উচ্চশিক্ষার একটি প্রধান চালিকাশক্তি।

উদ্ভাবনী দক্ষতা ও গবেষণায় নেতৃত্ব

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে গবেষণা ও উদ্ভাবনে শীর্ষস্থানীয়। বিশেষ করে জনস্বাস্থ্য ও উন্নয়ন অধ্যয়নে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এমনকি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মতো গবেষণায় ঐতিহ্যবাহী একটি প্রতিষ্ঠানকেও অনেক ক্ষেত্রে ব্র্যাক গবেষণার মানে ছাড়িয়ে গেছে। ব্র্যাকের জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ এবং সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। এখানে পড়তে ছুটে আসছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা। এ মুহূর্তে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন অন্তত ২০০ বিদেশি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ এশিয়ার আফগানিস্তান, শ্রীলংকাসহ ২৬টি দেশের শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত এ ক্যাম্পাস। এখন পর্যন্ত এখানকার মাস্টার অব পাবলিক হেলথ (এমপিএইচ) ডিগ্রি নিয়েছেন বিশ্বের ৩৫টি দেশের শিক্ষার্থীরা। ২০১৭ সালে মহাকাশে পাড়ি দেয় বাংলাদেশের বানানো প্রথম ন্যানো স্যাটেলাইট ‘ব্র্যাক অন্বেষা’।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় আধুনিক গবেষণার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাকাশ গবেষণা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডেটা সায়েন্স ও পরিবেশ বিজ্ঞানে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকল্প চালু আছে। বারবার বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশসেরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তকমাও পেয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) মিডিয়া স্টাডিজ, ডিজিটাল মানববিদ্যা এবং জলবায়ু পরিবর্তনভিত্তিক গবেষণায় অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। তাদের ব্লু ইকোনমি রিসার্চের আলাদা প্রজেক্টও আছে। গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি। এ প্রতিষ্ঠান দেশে প্রথমবারের মতো আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি নিয়ে অনার্স প্রোগ্রাম চালু করেছে। এতে শিক্ষার্থীরা মেশিন লার্নিং, ডিপ লার্নিং ও রোবটিক্সের মতো বাস্তবমুখী দক্ষতা অর্জন করছে।

কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

* ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

* নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

* আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

* ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ

* ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়

* ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

* ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ

* আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ

* গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

* কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

তুলনামূলক বিশ্লেষণ

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, যেমন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েট গবেষণায় বিশেষ অবদান রাখলেও, সেখানে ভর্তি হওয়া কঠিন এবং অনেক সময় রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রশাসনিক জটিলতায় শিক্ষা ব্যাহত হয়। অন্যদিকে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সময়োপযোগী কোর্স চালু করতে পারে। যেখানে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন কোর্স চালু করতে কয়েক বছর সময় লাগে, সেখানে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সেটি কয়েক মাসেই চালু করতে পারে। বাংলাদেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উচ্চশিক্ষার প্রসার, গুণগত মান উন্নয়ন, প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষতা অর্জন এবং উদ্ভাবনী গবেষণায় অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। ব্র্যাক, নর্থ সাউথ, গ্রিন, কানাডিয়ান, ইউল্যাব প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী অবদান রেখে চলেছে। ফলে দিন দিন বাড়ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার চাহিদা। এই চাহিদা সামাল দিতে প্রথম সারির প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়কে ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ছাত্র ভর্তি করাতে হচ্ছে। এমনকি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আরব আমিরাতের দুবাই শহরে তাদের একটি ক্যাম্পাস খুলেছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম