বিজয়ের শিরদাঁড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
রাবেয়া ঝুমুর
প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
‘Veni, Vidi, Vici’-‘বাংলাদেশে প্রেক্ষাপটে এ ল্যাটিন প্রবাদের উৎকৃষ্ট উদাহরণ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভূমিকা। তারা দেশের প্রয়োজনে এলো, সর্বোচ্চ দিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করল, নতুন স্বাধীনতা এনে দিয়ে ফিরে গেল। অনেকে তাই বলছিল, জুলাই বিপ্লবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যদি মাথা হয় বেসরকারি তার মেরুদণ্ড।
২০১৮ সালের পর এবারের আন্দোলন শুরু হয় ৫ জুন ২০২৪। এ দিন আদালত পূর্ববর্তী পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে কোটাপুনর্বহাল করে। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের ৫৬ শতাংশ চাকরি কোটার দখলে-এর বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে এবং শহীদ মিনারের সামনে সমাবেশ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে এক মাসজুড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশ ও বিক্ষোভ চলমান থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগ দেয় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। মিছিল, সমাবেশ অব্যাহত থাকে এক দফা দাবিতে-কোটা পুনর্বহাল চলবে না। কিন্তু এতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করেনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিপ্লবী ছাত্র জনতা ৮ জুলাই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামের ব্যানার নিয়ে প্রকাশ্যে আসে। ১১ জুলাই আদালত স্পষ্ট বলে দেয় যে সরকার চাইলে কোটা পদ্ধতির পরিবর্তন করতে পারবে। এদিকে ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা এক বিতর্কিত মন্তব্য করে বসে। পরের দিন থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর শুরু হয় আওয়ামী হেলমেট বাহিনী ছাত্রলীগের অমানবিক নির্যাতন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর এভাবে হামলা করায় ১৬ তারিখ থেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদী সমাবেশ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এদের বেশিরভাগেই কোটা এবং রাজনৈতিক পদলেহনের কোনো সম্পর্ক নেই; শুধু নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকেই জীবন বাজি রাখা। জোরপূর্বক হল বন্ধ করে দেওয়ায় আন্দোলন পুরোটা এগিয়ে নিতে থাকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বাংলা ব্লকেডে উল্লেখযোগ্য ছিল প্রগতি সরণিতে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গ্রীন ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটির বাংলা ব্লকেড পালন। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে নতুন বাজারে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্স। রামপুরা বাড্ডার ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর শিক্ষার্থীরা। ১৬ তারিখেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে প্রথম শহীদ হন রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু সাঈদ। এ যেন জ্বাজ্জল্যমান আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়া। প্রশাসন কি করবে বুঝতে না পেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে, সঙ্গে ছয় জেলায় বিজিবি মোতায়েন করে। পরদিন থেকে শিক্ষার্থীরা সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করে প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের মধ্যে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন গ্রুপ খুলে ফেলে। ১৮ জুলাই ঘটে যায় ছাত্র আন্দোলনের কালজয়ী ঘটনা এ দিন ১৯ জেলায় সংঘর্ষের ফলে কমপক্ষে ২৯ জন নিহত হয়। হলগুলো খালি থাকায় মূলত আন্দোলন চালিয়ে যায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।
