Logo
Logo
×

রাজধানীর খবর

মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে শুভ্র কাশফুল

ডেমরায় মিলছে খানিক মানসিক প্রশান্তি

Icon

মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, ডেমরা (ঢাকা)

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানীর ডেমরায় কাশফুলের অপরূপ সৌন্দর্যে প্রকৃতি সেজেছে ভিন্ন সাজে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে প্রাণ-প্রকৃতিতে। ঋতু পরিবর্তনের নিয়মে শরৎকাল এলেই এখানকার নদীর ধার, খোলা প্রান্তর, মাঠ কিংবা বিস্তীর্ণ বালুচরে ফোটে মন মুগ্ধকর কাশফুল। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে আকাশের সাদা মেঘ যেন নেমে এসেছে ডেমরার বুকে। মৃদুমন্দ বাতাসে ওরা একে অপরের গায়ে লুটোপুটি খাচ্ছে, বাতাসে নাচতে থাকে আপন ছন্দে। অপরূপ এ শুভ্র সমারোহ দেখে কে না মুগ্ধ হবে। প্রকৃতির এ অপরূপ সৌন্দর্য যেন দোলা দিয়ে যায় সব বয়সিদের হৃদয়ে। তাই তো যান্ত্রিক কোলাহল ছেড়ে ক্ষণিক প্রশান্তির খোঁজে মানুষ ছুটে আসে ডেমরায় কাশফুলের সংস্পর্শ পেতে।

ষড়ঋতুর দেশে তৃতীয় ঋতু শরৎ। কবি বলেছেন, ‘এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী-জননী।’ অন্য ফুলের নাম না জানলেও কাশফুল, পরিষ্কার নীল আকাশ আর সবুজ মাঠ-শব্দগুলো শুনলেই মনে আসে ঋতু রানি শরতের নাম। আপন মহিমায় শরৎ সবার মনে জায়গা করে নিয়েছে। ভাদ্র ও আশ্বিন মিলে শরৎকাল। শরৎকে ইংরেজিতে ‘অটাম’ বলা হয়। পৃথিবীর চার প্রধান ঋতুর একটি হচ্ছে শরৎ। শরৎ তার আপন মহিমায় জায়গা করে নিয়েছে কবি-সাহিত্যিকদের অন্তরেও। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কর্মসংস্থান, বাসস্থান ও বাণিজ্যিক নির্মাণশৈলী দিন দিন নগর থেকে কেড়ে নিচ্ছে প্রকৃতির কৃতিত্ব। তারপরও নগরীর ডেমরায় প্রকৃতি তার পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে মানুষের মাঝে উপহার দিচ্ছে শরতের শুভ্র কাশফুল। আর এখানকার হাওয়ায় দোলা শুভ্র কাশফুল নগরবাসীর যন্ত্রণাময় যান্ত্রিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছে খানিক মানসিক প্রশান্তি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ডেমরা থানাধীন ৬৩, ৬৪ ও ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রীন মডেল টাউন, কোনাপাড়া মিনি কক্সবাজার খ্যাত এলাকা, বাউলের বাজার, নলছাটা, কায়েতপাড়া ও আমুলিয়া এলাকাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় প্রতিবছরই দেখা মিলে কাশফুলের। বিশেষ করে, গ্রীন মডেল টাউন ও ডেমরা-রামপুরা সড়কের দুই পাশে আমুলিয়া এলাকায় শরতের এ অনিবার্য অনুষঙ্গ কাশফুলে ছেয়ে যায়। একইভাবে বালু নদের তীরবর্তী প্রায় সব এলাকা দেখা মিলে কাশফুলের। তবে শরতের এ সময়টায় ডেমরার বিভিন্ন এলাকায় অনেক দূর পর্যন্ত খোলা জায়গায় কাশফুলের নাচানাচি চোখে পড়ে এবং নজর কাড়ে পথচারী ও এলাকাবাসীসহ নগরবাসীর। তাই কর্মব্যস্ততার ফাঁকেও খানিক প্রশান্তির খোঁজে নগরীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ডেমরায় ছুটে আসে মানুষ। তবে ওই দুটি এলাকাসহ ডিএসসিসির ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের মেন্দিপুর, তাম্বুরাবাদ, ঠুলঠুলিয়া ও নলছাটা এলাকা ও ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডের বালু নদ তীরবর্তী কয়েকটি এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে কাশফুল দেখা যায়। কার্তিকের শেষের দিকেও এখানে চোখে পড়ে হৃদয় শান্ত করা কাশফুল।

শরৎকালে দেখা যায় আকাশে শুভ্র মেঘের ভেলা আর তার নিচে কাশফুলের নাচানাচি। বিকাল হতেই পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই এখন ছুটছেন এসব কাশবনে। জমজমাট হয়ে উঠছে ফাঁকা এলাকাগুলো। চারদিকে শরতের শুভ্র কাশফুল, আর শরীর ও মন জুড়িয়ে দেওয়া বাতাস-যেন সব ক্লান্তি শেষ হয়ে প্রাণবন্ততা ফিরে আসে। আর শরতের স্নিগ্ধতা এককথায় অসাধারণ! জলহারা শুভ্র মেঘের দল যখন নীল, নির্জন, নির্মল আকাশে পদসঞ্চার করে তখন আমরা বুঝতে পারি শরৎ এসেছে। শরতের আগমন সত্যিই মধুর। শরৎ মানেই প্রভাতের শিশিরভেজা শিউলী, ঝিরিঝিরি বাতাসে দোল খাওয়া ধবধবে কাশবন, পদ্ম-শাপলা-শালুকে আচ্ছন্ন জলাভূমি। ওইসব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কেউ এসেছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। নববিবাহিত দম্পতিরাও আসছেন। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়েও আসছেন অনেকে। প্রাইভেটকার বা মোটরসাইকেলযোগে চলার সময় তাদের গাড়ি ও মোটরসাইকেল থামিয়ে কাশবনে নামছেন দর্শনার্থীরা। কাশবনে আবার কেউ বসে গল্প করছেন। কেউবা ফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন। কাশফুলের সঙ্গে যেন নিজেদের মিশিয়ে দিচ্ছেন কাশফুলপ্রেমীরা। প্রকৃতি যেন তার মনের অজান্তেই মানুষের মনে নির্মল আনন্দ ছড়িয়ে দিচ্ছে। এদিকে কাশবনে ছবি তোলার সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না কেউ। যার যার মতো করে কাশফুলের সঙ্গে নিজেদের ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করছেন মন জুড়ানো কাশবনে। দুপুরের খরতাপ খানিকটা ম্লান হয়ে এলে এ সময়টায় প্রতিনিয়ত লোকসমাগমে জমজমাট হয়ে ওঠে কাশবন এলাকা। লোকসমাগমের কারণে এখানে বেশকিছু হালকা খাবার, ফুচকা ও চটপটির দোকান গড়ে উঠেছে। ঘুরতে এসে অনেকেই এসব দোকানেও সময় কাটিয়ে যান। রামপুরা-বনশ্রী এলাকা থেকে গ্রীন মডেল টাউনে ঘুরতে আসা নাবিলা ও তার ভাই নাবিল যুগান্তরকে বলেন, নগরায়ণ আর কলকারখানার দৌরাত্ম্যে হারিয়ে যাচ্ছে সবই। তাতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে প্রকৃতিতেও। আর কোলাহলের মাঝে এখানকার কাশফুল কিছুটা হলেও আমাদের নির্মল করে দেয়। ডেমরার হাজীনগর এলাকার বাসিন্দা নূর আলম ভূঁইয়া যুগান্তরকে বলেন, কালের আবর্তে শরৎকালের সেই চিরচেনা দৃশ্য এখন আর খুব বেশি চোখে পড়ে না। সাবেক ডেমরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন রতন যুগান্তরকে বলেন, ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতিকে অপরূপ শোভাদানকারী কাশফুল। আমাদের নিজস্ব এসব জায়গায় প্রতিবছর শরতে কাশফুল ফুটে বলে এসব বালুমাটির ফাঁকা জায়গায় এখনো কোনো কাজ করি না। কাশবনে মানুষের প্রশান্তির সঙ্গে নিজেরাও প্রশান্তি অনুভব করি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম