ওয়ার্ড পরিক্রমা (দক্ষিণ সিসিট) : ২৮ নম্বর ওয়ার্ড
সংকীর্ণ গলিতে ভোগান্তি
অবৈধ পার্কিং ও ঝুলন্ত বৈদ্যুতিক তারে বাড়ছে বিপদের আশঙ্কা * অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা
মো. জহিরুল ইসলাম, হাজারীবাগ (ঢাকা)
প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২৮ নম্বর ওয়ার্ড সংকীর্ণ গলি, ভাঙা রাস্তা আর অপরিকল্পিত নগরায়ণের চাপে জর্জরিত। ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকার মানুষ জলাবদ্ধতা, মশার উৎপাত, গ্যাস সংকট, অন্ধকার রাস্তায় কুকুরের ভয় আর অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে সৃষ্ট যানজটের মতো নিত্য সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে চলছে। এই ওয়ার্ডে অল্প বৃষ্টিতেই হাঁটুসমান পানি জমে। রাস্তায় কাদা আর দুর্গন্ধে জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। ওয়ার্ডের প্রতিটি এলাকায়ই অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও অনিয়মিত নাগরিক সেবা রয়েছে।
ওয়ার্ড পরিচিতি : ডিএসসিসি ২৮ নম্বর ওয়ার্ড ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৩-এর অন্তর্গত। যা পূর্বে ছিল ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৬৪ নম্বর ওয়ার্ড। প্রশাসনিকভাবে এটি লালবাগ থানাধীন ও জাতীয় সংসদের ঢাকা-৭ আসনের অংশ। ওয়ার্ডটির আওতায় রয়েছে কে.বি. রুদ্র রোড, উর্দু রোড, গৌড় সুন্দর রায় লেন, হায়দার বক্স রোড, খাজে দেওয়ান প্রথম ও দ্বিতীয় লেন, চক সার্কুলার রোড, আজগর লেন, হরনাথ ঘোষ রোড, হরনাথ ঘোষ লেন, খাজে দল সিং লেন ও নন্দ কুমার দত্ত রোড এলাকা।
এছাড়া, এই ওয়ার্ডে রাজউকের অনুমোদনহীন ভবন ও ঝুলন্ত বৈদ্যুতিক তারে বাড়ছে বিপদের আশঙ্কা। ওয়ার্ডে ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ রয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে এই দুর্ভোগ চললেও কোনো সমস্যার সমাধান হয় না। নির্বাচনের আগে বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও সিটি করপোরেশনের মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম থাকে কাগজে-কলমে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ওয়ার্ডে সন্ধ্যার পর বাতি না জ্বলায় রাস্তায় নেমে আসে অন্ধকার। কুকুরের ভয়ে মানুষ আতঙ্কিত থাকে। দিনভর ট্রাক-রিকশা পার্কিং করে রাখায় রাস্তার বড় অংশ দখল হয়ে থাকে। উর্দু রোডে রাজউকের অনুমোদনহীন ভবন আর সংকীর্ণ রাস্তার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। ড্রেনের পানি উপচে রাস্তায় উঠে আসে, দুর্গন্ধ ছড়ায় চারদিকে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, মশা নিধনের কার্যক্রম নিয়মিত নয়। গৌড় সুন্দর রায় লেনে বিদ্যুৎ, কেবল ও ইন্টারনেট তারের জঞ্জাল রয়েছে। হায়দার বক্স রোড ও খাজে দেওয়ান প্রথম এবং দ্বিতীয় লেনে সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু সমান পানি জমে। বেশিরভাগ সড়কে বাতি নষ্ট। চক সার্কুলার রোডে অবৈধ দোকান ও পার্কিংয়ে সারাদিন যানজট লেগে থাকে। আজগর লেনে ভাঙাচোরা রাস্তা, ঝুলন্ত তার ও মশার উৎপাত এখন নিত্যদিনের চিত্র। হরনাথ ঘোষ রোড ও লেনে রিকশা-অটোরিকশার দৌরাত্ম্য, ফুটপাত দখল, ড্রেনেজ বিপর্যয় ও ভাঙা রাস্তায় চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। খাজে দেওয়ান প্রথম, দ্বিতীয় ও দল সিং লেনে অনুমোদনহীন ভবন রয়েছে। নন্দ কুমার দত্ত রোডে অবৈধ পার্কিংয়ে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. শাকিল বলেন, এই এলাকার সমস্যা নতুন না। নির্বাচনের আগে সবাই আসে প্রতিশ্রুতি নিয়ে, কিন্তু ভোট শেষে কেউ আর আসে না। সিটি করপোরেশনের লোকজন শুধু কাগজে কাজ দেখায়, বাস্তবে কিছুই হয় না। স্থানীয় বাসিন্দা মো. আরশাদ বলেন পুরান ঢাকার এই ঐতিহ্যবাহী এলাকাটি এখন বাসের অযোগ্য। আগে এখানকার ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব ছিল, এখন সবাই সুযোগ পেলেই চলে যেতে চায়। দোকানদার নূর হোসেন বলেন, আমরা ব্যবসা করি, কিন্তু রাস্তা ভাঙা, কাদা-পানি জমে থাকা, যানজট, পার্কিং সমস্যা, অন্ধকার রাস্তায় মশার উৎপাতের কারণে ক্রেতারা আসে না। সিটি করপোরেশনের কোনো নজর নেই। রাতের অন্ধকারে মনে হয় রাজধানী না, অবহেলিত কোনো গ্রাম।
২৮ নম্বর ওয়ার্ডে সমস্যার পাহাড় জমলেও সমাধান যেন অধরাই। বছরের পর বছর অপরিকল্পিত নগরায়ণ, দায়সারা মেরামত আর প্রশাসনিক অমনোযোগিতায় এখানকার মানুষ প্রতিদিন লড়ছে নিজের শহরেই বেঁচে থাকার সংগ্রামে। উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি যতই বড় বড় হোক না কেন, বাসিন্দাদের চোখে এখন কেবল হতাশা আর বঞ্চনার ছাপ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান তালুকদার যুগান্তরকে বলেন, নগরীর অবকাঠামো উন্নয়ন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর এবং আধুনিক করার লক্ষ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রায় দুই কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ বরাদ্দের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকায় রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার করা হবে। পাশাপাশি যেখানে ড্রেন নেই, সেখানে নতুন ড্রেন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দরপত্র প্রক্রিয়া চলমান আছে। আমরা আশা করছি আগামী তিন থেকে চার মাসের মধ্যেই সংস্কারকাজ শুরু করা যাবে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, পিসিএসপি প্রকল্পের আওতায় নতুনভাবে দরপত্র প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে। এতে নতুন কিছু প্রতিষ্ঠান যুক্ত হবে, পাশাপাশি বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নির্দিষ্ট শর্ত ও মানদণ্ডের আওতায় আনা হবে। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আগের তুলনায় আরও উন্নত ও কার্যকর হবে।
