Logo
Logo
×

রাজধানীর খবর

মৃত্যুফাঁদ ডিএসসিসির মার্কেট

নওয়াব ইউসুফ মার্কেট সংস্কারের উদ্যোগ নেই * ধসে পড়ার আশঙ্কা, মৃত্যুঝুঁকিতে হাজারো মানুষ

Icon

হাজারীবাগ (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মৃত্যুফাঁদ ডিএসসিসির মার্কেট

ছবি: যুগান্তর

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মালিকানাধীন ‘নওয়াব ইউসুফ মার্কেট (ডিআইটি)’ মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। এটি পুরান ঢাকার নয়াবাজার ব্রিজসংলগ্ন ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত। ২০২৩ সালে মার্কেটের ছয়টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহারের অযোগ্য ঘোষণার পরও দুই বছরে সংস্কারের নামে এক টাকার কাজও হয়নি। অথচ ডিএসসিসি এখানকার ৪২০ দোকান থেকে প্রতিমাসে ভাড়া উঠাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, নিয়মিত ভাড়া নেওয়া হলেও তাদের জীবনের ন্যূনতম নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও ডিএসসিসি সম্পূর্ণ উদাসীন।

সরেজমিন দেখা যায়, নওয়াব ইউসুফ মার্কেটের ছয়টি ভবনে মোট ৪২০টি দোকান রয়েছে। প্লাস্টিক ও কার্টন কারখানা, গোডাউন, ব্যাগের দোকান, হার্ডওয়্যার, মুদিখানা, খাবার হোটেল, ফ্লাইউড ও মসলার দোকানে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভিড় করেন। ভবনের মাঝের সরু সারিতে আরও প্রায় ৪০০ কাঁচাবাজার ও মাছের দোকান রয়েছে। ভবনের গায়ে বড় ফাটল ধরেছে। অনেক জায়গায় ধসে পড়েছে দেয়াল। অনেক জায়গায় সিঁড়ি ভেঙে গেছে। পিলার থেকে রড বেরিয়ে পড়েছে। এলোমেলো বৈদ্যুতিক তার ও চারদিকে আবর্জনার স্তূপ রয়েছে। এত সমস্যার মধ্যেও মার্কেটটি কোনোরকমে টিকে আছে। স্থানীয়রা বলছেন, ‘ধ্বংস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা একটা মার্কেট।’

সাম্প্রতিক ২১ নভেম্বরের ভূমিকম্পে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে। ভূমিকম্পের পর মার্কেটে ছুটে আসা মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, বাবা এখানে চাকরি করেন। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভয় নিয়ে ছুটে আসি। দোকানের ভেতরে ও বাইরে আগেই ফাটল ছিল, ভূমিকম্পের পর আরও নতুন ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদ, সিঁড়ি, পিলার- সব জায়গায় গর্ত। পুরো মার্কেটটা এখন বস্তির মতো।

দোতলার ব্যাগের দোকানের কর্মচারী মো. জসিম উদ্দিন বলেন, তিন বছর আগে ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। তখন থেকে সংস্কারের কথা শুনে আসছি, কিন্তু কিছুই হয়নি। সাম্প্রতিক ভূমিকম্পে আরও নতুন ফাটল ধরেছে। এখানে যে কোনো মুহূর্তে ভবন ভেঙে পড়তে পারে। পেটের দায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই আমাদের কাজ করতে হয়।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ আরও গুরুতর। তাদের ভাষায়, ৪২০ দোকান থেকে মাসে ৪ হাজার ৯০০ টাকা করে ভাড়া তোলা হয়। মাসে দাঁড়ায় ২০ লাখ টাকার বেশি। অস্থায়ী কিছু দোকান থেকেও ভাড়া তোলা হয়। ট্রেড লাইসেন্সেরও ফি নিয়মিত দিয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা। তারপরও ৩০ বছরে একদিনও সংস্কার হয়নি।

মিতালী হার্ডওয়্যারের ব্যবসায়ী মো. ফিরোজ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেও আমাদের দোকান ছাড়তে বলে না। অযোগ্য ভবনে আমাদের রেখে ভাড়া নেওয়াটা সরাসরি প্রতারণা। বিদ্যুতের বিলও বণিক সমিতি আলাদাভাবে নিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এই মার্কেটে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ শ্রমিক কাজ করেন। চার-পাঁচ হাজার মানুষ কেনাকাটা করেন। বড় ভূমিকম্প হলে একজনও বাঁচবে না। অনেক গেট বন্ধ থাকে, বের হওয়ার পথও নেই। ভবনের অবস্থা দেখে মনে হয় ভূমিকম্প ছাড়াই ধসে পড়তে পারে। সিটি করপোরেশন দ্রুত আমাদের অস্থায়ীভাবে অন্যত্র জায়গা দিয়ে ভবনটি আধুনিক করে পুনর্নিনির্মাণ করুক।

ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর এলাকায় কোনো জনপ্রতিনিধি না থাকায় বিষয়টি আরও অবহেলায় পড়েছে। তাদের দাবি, অস্থায়ীভাবে আমাদের পুনর্বাসন করে মার্কেটটি বহুতল করে পুনর্নির্মাণ করতে হবে।

এদিকে বণিক সমিতির সভাপতি মো. আজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তিনি অবৈধভাবে আলাদা বিদ্যুৎ লাইন দিয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি জানতে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি প্রত্যেকবারই ফোন কেটে দেন।

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। নিয়মিত মিটিং হচ্ছে। পরিত্যক্ত ভবনগুলো কীভাবে ব্যবস্থাপনা করা হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই মার্কেট নিয়েও আলোচনা হবে।

ডিএসসিসির প্রধান ভাণ্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা মো. জয়নুল আবেদীন বলেন, আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ও অযোগ্য ঘোষণা করে থাকলে ভাড়া আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। সিটি করপোরেশনকে নতুন ভবন নির্মাণ করে আগের দোকানদারদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দোকান দিতে হবে। আগের কোনো সিদ্ধান্ত যদি হয়ে থাকে, তা আইনসিদ্ধ নয়। আমি সরেজমিন দেখে ব্যবস্থা নেব।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম