Logo
Logo
×

রাজধানীর খবর

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা

নারীদের জন্য নেই মাতৃত্বকালীন ছুটি

Icon

মো. বিল্লাল হোসেন

প্রকাশ: ০২ মে ২০১৯, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা

কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও সনাতনপদ্ধতি অবলম্বন করে বর্জ্য অপসারণের কাজ করায় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা।

এদের মধ্যে অনেকেই চর্মরোগ, শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সারসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বর্জ্য অপসারণের সময় গ্লাভস, মাস্ক, বুটজুতা, হেলমেট ব্যবহার না করেই চলছে কর্মযজ্ঞ। এ কারণেই পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫ হাজর ৪০০ জন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ২ হাজার ৩০০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী বর্জ্য অপসারণের কাজ করেন। এ কাজে কোনো আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া লাগেনি। পর্যাপ্ত রেইন কোর্ট না থাকায় বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করতে হয় পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের। তারা সিটি কর্পোরেশন থেকে চিকিৎসার জন্য পান না কোনো সহায়তা। নারীদের জন্য নেই কোনো মাতৃত্বকালীন ছুটি। ছুটি নিলেও নিজের বদলি অন্য আরেকজনকে কাজ করাতে হয়।

সরেজমিন দেখা যায়, মাস্ক, গ্লাভস ও বুটজুতা ছাড়াই ময়লা সংগ্রহ ও পরিষ্কারের কাজ করেন পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা। অনেকের পায়ে শুধু স্যান্ডেল আর সিটি কর্পোরেশনের এপ্রোন পরা। নগরীর ফকিরাপুল মোড়ে পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন মো. ওয়ারিস।

তিনি যুগান্তরকে বলেন, এ কাজ করতে গিয়ে অনেকে রোগে ভুগছেন। আমাদের প্রতি বছর বুটজুতা ও হাতের গ্লাভস দেয়া হয় না। যদি কোনো কোম্পানি সিটি কর্পোরেশনকে স্পন্সর করে তাহলে এগুলো সরবরাহ করা হয়। আর এই যে দেখেন! এ জামা (এপ্রোন) আজকে দুই বছর ধরে ব্যবহার করছি। কম্বল দেয়ার কথা মাঘ মাসে, সেই কম্বল দেয় চৈত্র মাসে। আমাদের বসবাসের জন্য কোনো বাসস্থান নেই। সিটি কর্পোরেশন কোয়ার্টারে বাসা নিতে গেলে ২-৩ লাখ টাকা করে লাগে। এ টাকা কোথায় পাব। নিয়মিত বেতন পাই না, আর স্বাস্থ্যসেবা।

২৮ বছর ধরে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাজ করা মো. আলম যুগান্তরকে বলেন, আগে মিটফোর্ড হাসাপাতালে গেলে আমাদের টাকা ছাড়াই চিকিৎসাসেবা দেয়া হতো। খরচ বহন করত সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু এখন বহন করে না। নারী পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা গর্ভকালীন তিন মাস ছুটি পেত বেতনসহ। কিন্তু এখন আর ছুটি দেয়া হয় না। অসুস্থ হলে নিজের বদলি একজনকে দিয়ে ছুটিতে যেতে হয়। না হয় বেতন থেকে টাকা কাটা হয়। নারীদের গর্ভকালীন কোনো চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হয় না। এ সময় একান্ত কাজ করতে না পারলে বদলি দিয়ে করাতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী পরিচ্ছন্নতা কর্মী বলেন, আমরা গরিব বলে এ অবস্থা। মরণ ছাড়া এ কাজে কোনো ছুটি নেই। দুই সন্তান হয়েছে কোনো ছুটি পাইনি। আরেকজনকে বদলা দিয়ে দিছি। যা টাকা পাইছি তারে দিয়ে দিছি। অনেক কষ্টে কাটছে দিন। আর কিছু না দিক, অন্তত সন্তান জন্ম দেয়ার সময় আমাদের একবার হলেও ছুটি দেয়া উচিত। বাইজু লাল নামে এক পরিচ্ছন্নতা কর্মী বলেন, গ্লাভস, মাস্ক, বুটজুতা মেয়র হানিফ সাহেবের সময় পেয়েছি, আর ২০১৭ সালে পেয়েছি। এগুলো নিয়মিত দেয়া হয় না। আর দিলেও হাজার থেকে বারশ’ পরিচ্ছন্নতাকর্মী পায়। অনেকে ব্যবহার জানে না।

পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সংগঠন- স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের প্রচার সম্পাদক মো. সুলতান আলী যুগান্তরকে বলেন, যারা সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন তাদের শতকরা চল্লিশজন নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। তারা কোনো চিকিৎসা পান না। মাতৃত্বকালীর কোনো ছুটি নেই। যা খুব দুঃখজনক। ঈদের ছুটিও আমাদের নেই। সবসময় কাজ করে আসছি। রাস্তা পরিষ্কার করতে গিয়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা মারা যায়। এজন্য আমাদের কোনো ঝুঁকিভাতা নেই। প্রত্যেক ওয়ার্ডে হাজিরা ঘর থাকা প্রয়োজন। আমরা চাই শুধুু বর্জ্য পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের আলাদা হাসপাতাল নির্মাণ করা হোক। আর সপ্তাহে একদিন ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে।

ডিএসসিসি প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. জাহিদ হোসেন বলেন, আমরা চেষ্টা করছি গ্লাভস, মাস্ক, বুটজুতা, এপ্রোনসহ যা লাগে সবকিছু পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের দ্য়োর জন্য। আমাদের আয় কম ব্যয় বেশি। তাই বাজেট কম থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আশা করি এমন সমস্যা থাকবে না। চিকিৎসা ও মাতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়ে তিনি বলেন, নারী পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা মাতৃত্বকালীন ছুটি পায় না এটা ভুল কথা। ওরা আমাদের স্থায়ী কর্মী নয়। দিনমজুর হিসেবে কাজ করে। যদিও বেতনটা দ্য়ো হয় মাস শেষে। তাদের শর্তই হচ্ছে কাজ করলে বেতন, না করলে নাই। এমনকি তাদের ছুটির কোনো বিধান নেই। যার জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি কাটাতে গেলে তার পরিবার অথবা অন্য একজনকে বদলি দিয়ে ছুটি কাটাতে হয়। তার পরিবারের আয় তো বন্ধ করা যাবে না। যদি তাদের চাকরি সরকারি হতো তাহলে ছুটিতে থাকলেও বেতন পেত। ঢাকা মহানগর হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।

ডিএনসিসি প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. মঞ্জুর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, গ্লাভস, বুটজুতাসহ সব সরঞ্জাম নিয়মিত দেয়ার জন্য চেষ্টা করা হয়। অনেক সময় অনেক পরিচ্ছনতা কর্মী এগুলো ব্যবহার করতে অস্বস্তি বোধ করেন।

পরিচ্ছন্নতা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম