ওয়ার্ড পরিক্রমা (উত্তর সিটি) ১নং ওয়ার্ড
অবৈধ দখলে ফুটপাত
মো. তারেক রহমান, উত্তরা পশ্চিম ও মো. আরিফ হোসেন, উত্তরা পূর্ব (ঢাকা)
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের অধিকাংশ সড়কজুড়ে চলছে অবৈধ পার্কিং ও ফুটপাত দখলের উৎসব। শুধু তাই নয়, মহাসড়কের ওপরই গড়ে তোলা হয়েছে গাড়ি মেরামতের গ্যারেজ। ফুটপাতে রাখা হয়েছে সারি সারি পুরোনো টায়ার, গাড়ির বাম্পার, পার্টসসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী।
ডিএনসিসি ১ নম্বর ওয়ার্ডটি উত্তরা মডেল টাউন এলাকার ১ থেকে ১০ নম্বর সেক্টর, রানাভোলা, ফায়দাবাদের আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত। কিন্তু অবৈধ পার্কিং, ফুটপাত দখল ও আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় প্রতিনিয়তই নাগরিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বাসিন্দারা।
উত্তরা ৩, ৭, ৯, ১০ ও ৬নং সেক্টর এলাকার অধিকাংশ সড়কে অবৈধভাবে পার্কিং করা হয়েছে প্রাইভেট কার, মোটর সাইকেলসহ ছোট-বড় বিভিন্ন যানবাহন। এমনকি অ্যাভিনিউ সড়কের ওপর গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ পিকআপ স্ট্যান্ড, সারিবদ্ধ দোকানপাটও।
উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দাদের চলাফেরার প্রধান সড়ক আলাউল অ্যাভিনিউয়ের পূর্ব মাথায় পিকআপ স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। এতে সড়কসহ পুরো ফুটপাতই দখলদারির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সেক্টরবাসীর চলাচলের আরেক সড়ক আজমপুর এলাকার নওয়াব হাবিবুল্লাহ স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের শাহজালাল অ্যাভিনিউ সড়কেও দখলদারির এমন চিত্র দেখা গেছে।
এই ওয়ার্ডে ফুটপাত দখলের সবচেয়ে বড় মচ্ছব উত্তরা ৭ ও ৩ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন সড়ক ঘিরে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টর বিএনএস সেন্টার পয়েন্টে বাস থেকে নামতেই মাত্র দুইশ গজ দূরত্বে বিজিবি মার্কেট। মার্কেটটির অধিকাংশ দোকানেই গাড়ি সার্ভিসিং ও পার্টস বিক্রি করা হয়। আর এতেই মার্কেটের সামনের ফুটপাত চলে গেছে দোকানিদের কবজায়। ফুটপাতের ওপরেই গাড়ি সার্ভিসিং থেকে শুরু করে রাখা হয়েছে পুরোনো টায়ার, বাম্পার, নষ্ট মোটরসাইকেলসহ নানা জিনিসপত্র। এতে ফুটপাত ধরে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পথচারীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদেরও। শুধু তাই নয়, মার্কেটের সামনের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দখল করে প্রশাসনের নাকের ডগায় গাড়ি সার্ভিসিংয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে দোকানিরা।
একই চিত্র মার্কেটের পেছনের ৩৫নং সড়কেও। দিনভর রাস্তার ওপরেই চলে গাড়ি মেরামতের কাজ। সন্ধ্যা নামতেই স্থানটিতে ভ্যান বসিয়ে জমে ওঠে জামা-কাপড় কেনাবেচার আসর। সবমিলিয়ে স্থানীয়দের কাছে সড়কটি ধরে চলাচল একেবারেই অসম্ভব। এ সেক্টরের ৫, ২৮, ৭ ও ৩ নম্বর সড়কজুড়ে এমন অবৈধ পার্কিং ও ফুটপাত দখলদারি নিত্যদিনের চিত্র বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।
ফুটপাত ও সড়ক দখলের একই দৃশ্য উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ২, ১৩, ৭ ও ১১নং সড়ক ঘিরে। এসব সড়কের আশপাশে একাধিক বহুতল মার্কেট ও বিপণিবিতান থাকায় মার্কেটসংলগ্ন রাস্তা অবৈধ পার্কিং ও দখল বাণিজ্যের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। পার্কিং ও দখল বাণিজ্যের একই চিত্র উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টর হাউজবিল্ডিং এলাকার ১/এ, এ/বি, ৩ এবং উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশের সড়কেও দেখা গেছে। এছাড়াও রাজলক্ষ্মী, আজমপুর, হাউজবিল্ডিং ও আব্দুল্লাহপুর বাস স্টপেজ ও ফুটওভার ব্রিজের নিচজুড়ে ফুটপাত দখল করে দোকান বসানো যেন এখানকার কালচারে পরিণত হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন অঞ্চল-১-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিমা খানম যুগান্তরকে বলেন, কয়েকদিন হয়েছে আমি এখানে যোগদান করেছি। এ বিষয়গুলো আমি সরেজমিন খোঁজ নেব। সড়কে অবৈধ পার্কিং ও ফুটপাত দখলমুক্ত করার বিষয়ে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা আমার থাকবে।
অন্যদিকে রাজনৈতিক পরিচয়ে কতিপয় ব্যক্তি উত্তরার বিভিন্ন স্পটে ফুটপাত দখল ও সড়ক দখল করে পার্কিং বাণিজ্যের বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বিএনপির নাম করে কেউ যদি উত্তরা এলাকায় ফুটপাত দখল কিংবা চাঁদাবাজি করতে যায়, তাহলে তাদের ধরে থানায় দিন। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।
এদিকে ফুটপাতের এসব অবৈধ স্থাপনা ঘিরে চাঁদাবাজিসহ নাগরিক দুর্ভোগের বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমরা নির্দেশনা দিয়েছি সেক্টরের ভেতরে ফুটপাতে দোকান বসিয়ে কেউ যদি চাঁদাবাজি করে তাহলে তাকে ধরে পুলিশে ফোন দিতে। এ রকম কয়েকজনকে ধরে আমরা মামলাও দিয়েছি। ফুটপাত ধরে চলাচলে নাগরিকদের যাতে দুর্ভোগ না হয় সেজন্য আমরা দুই-তিন দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেব।
