ওয়ার্ড পরিক্রমা (দক্ষিণ সিটি) ৪নং ওয়ার্ড
ভাঙাচোরা সড়কে ভোগান্তি
ওয়াসার পানিতে ময়লা-দুর্গন্ধ * অধিবাসীরা নির্বিচারে বর্জ্য ফেলায় খালের দূষিত পানিও দুর্গন্ধযুক্ত
ডেমরা ও রামপুরা (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৪ নম্বর ওয়ার্ডে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ঘিঞ্জি পরিবেশ এবং অভ্যন্তরীণ অপ্রশস্ত সড়কে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। একই সমস্যা বিদ্যমান ওয়ার্ডের মাদারটেক-বাসাবো প্রধান সড়কেও। ইতঃপূর্বে ডিএসসিসির মহাপরিকল্পনার আওতায় ঢাকা পরিবহণ সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (আরএসটিপি) ও রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) যৌথ উদ্যোগে সড়কটি পরিকল্পিতভাবে প্রশস্ত করার কথা থাকলেও তা এখন আর হচ্ছে না। এক্ষেত্রে নন্দিপাড়া সেতু থেকে বাসাবো বিশ্বরোড জামে মসজিদ পর্যন্ত দুপাশ অবৈধ দখলে থাকা ২৫ থেকে ৩০ ফুট প্রশস্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার প্রধান সড়কটি সরকারি বিভিন্ন নকশা ও ড্যাপের নকশা অনুযায়ী ৬০ ফুট প্রশস্ত দেখানো হয়েছে। ওয়ার্ডটিতে নিরাপদ গণপরিবহণ সংকট, ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ মিশুক, অটোরিকশা-ইজিবাইকের অবাধ রাজত্ব, চরম গ্যাস সংকট, ওয়াসার দুর্গন্ধযুক্ত পানি, আবর্জনায় ভরপুর খালের পচা পানি, অতিরিক্ত মশা ও বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব, মাদকের আগ্রাসন, অবৈধ দখল, নব্য সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত অধিবাসীরা।
ওয়াসার দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি, চরম গ্যাস সংকট ও মশার ভয়াবহ উপদ্রব রয়েছে। বিশেষ করে ওয়াসার পানির কারণে চর্মরোগ ও পেটের পীড়ায় ভুগছেন এখানকার হাজারো মানুষ। পাশাপাশি সারা বছরই মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হন অধিবাসীরা। আর রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা মানুষ রয়েছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। ওইসব রোগে আক্রান্তদের প্রতিনিয়ত রাজধানীর কলেরা হাসপাতাল ও সরকারি মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।
ওয়ার্ড পরিচিতি : ডিএসসিসির ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৬০ হাজারের বেশি ভোটার হলেও ৬ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এখানে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হোল্ডিং রয়েছে। বাসাবো, মাদারটেক, ওহাব কলোনি, উত্তর বাসাবো, মাদারটেক বাগানবাড়ি, নতুনপাড়া, সরকারপাড়া, আদর্শপাড়া, উত্তর মাদারটেক, এলাহীবাগ, সিঙ্গাপুর পূর্ব মাদারটেক, পূর্ব বাসাবো, পাটোয়ারী গলি ও ছায়াবীথিসহ ২০টি পাড়া-মহল্লা এ ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। ওয়ার্ডটি সংসদীয় ঢাকা-৯ আসনভুক্ত এবং ডিএসসিসির অঞ্চল-২ আঞ্চলিক কার্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত।
সরেজমিন দেখা যায়, নন্দিপাড়া-মাদারটেক-বাসাবো সড়কটিতে নন্দিপাড়া এলাকায় সড়ক প্রশস্ত না করেই ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ সড়ক উন্নয়নকাজ শুরু করা হয়েছে। পূর্ব মাদারটেক এলাকায়ও একইভাবে ধীরগতিতে উন্নয়নকাজ চলছে। এতে জনদুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুণ। এমনিতেই সড়কটিতে দিনে বাস, ট্রাকসহ বড় ধরনের কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারে না। তবে গভীর রাতে মানুষের চলাচল কমলে কিছু বড় যানবাহন চলতে পারে। এখানকার প্রধান যাত্রীবাহী যানবাহন হচ্ছে নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও অটোরিকশা। আর এসব অবৈধ যানবাহনে প্রতিনিয়ত নানা দুর্ঘটনা ঘটছে। অথচ অধিবাসী ও পূর্বাঞ্চলসহ ১০ লক্ষাধিক মানুষের চলাচল এ সড়কে। এরপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়ে যাত্রীদের চলাচল করতে হচ্ছে। এখানে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ছোঁয়ায় অনেক বহুতল ভবন গড়ে উঠলেও অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো একেবারেই অপরিকল্পিতভাবে অপ্রশস্ত করে রাখা হয়েছে এবং যথাযথ উন্নয়ন হয়নি। ফলে এখানকার প্রধান ও অভ্যন্তরীণ সড়কে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে। বিশেষ করে সকালে শিক্ষার্থী ও অফিসগামী মানুষের যাতায়াতের সুব্যবস্থা নেই।
নন্দিপাড়া-মাদারটেক-বাসাবো সড়ক পরিকল্পিতভাবে প্রশস্ত করে নির্মাণের বিষয়ে ডিএসসিসির অঞ্চল-২ আঞ্চলিক কার্যালয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী জহির আহম্মেদ যুগান্তরকে বলেন, আগে এ সড়কটি প্রশস্ত করে নির্মাণের কথা ছিল বলে জেনেছি। কিন্তু ৫ আগস্টের পর বর্তমানে ঊর্ধ্বতনদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সড়কটি যতটুকু প্রশস্ত রয়েছে, ততটুকুই ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ উন্নয়ন করা হচ্ছে।
সরেজমিন আরও দেখা গেছে, এলাকার সর্বত্রই নোংরা পরিবেশ ও ধুলাবালি বেশি থাকায় মশা-মাছির উপদ্রব এখানে বেশি। সন্ধ্যা নামতেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশার আক্রমণ শুরু হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বৃষ্টি হলেই অভ্যন্তরীণ সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সেই পানি নামতেও দীর্ঘ সময় লাগে। ওয়ার্ডে মাদকের আনাগোনা এখনো কমেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। এখানকার সড়কবাতিগুলো নষ্ট হওয়ার অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পাচ্ছে না এলাকাবাসী। এলাকার অভ্যন্তরীণ খালে অধিবাসীরা নির্বিচারে ময়লা ও গৃহস্থালির অতিরিক্ত আবর্জনায় ফেলেন। আর খালের পচা পানির কারণে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। ওয়ার্ডের ছায়াবীথি এলাকার খালেও এমন চিত্র দেখা গেছে। আর ডোবানালাসহ সর্বত্রই মশার প্রজননক্ষেত্র লক্ষ করা গেছে। চারদিকে বেওয়ারিশ কুকুর বিচরণ করতে দেখা গেছে। এখানে কোনো বিনোদনকেন্দ্র ও কমিউনিটি সেন্টার নেই। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওয়ার্ডের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ওয়াসার দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি। পুরোনো পানির লাইনগুলোয় নাকি সুয়ারেজের ময়লা পানি ঢুকে যায়। ওয়াসার পানিতে জীবাণুনাশক ট্যাবলেট, ফিটকারি ও স্যাভলন দিয়েও কাজ হয় না। পেটের পীড়া ও চর্মরোগে ভুগছেন হাজারো মানুষ। ওয়াসার মাসিক বিল পরিশোধের পরও পরিবারভিত্তিক অতিরিক্ত দেড় থেকে তিন হাজার টাকার বিশুদ্ধ পানি কিনতে হয়। বর্তমানে গ্যাস সংকট যেন প্রকট আকার ধারণ করেছে এখানে। সর্বত্রই অপ্রশস্ত সড়ক, নোংরা ও ঘিঞ্জি পরিবেশে অতিষ্ঠ জনজীবন। ওয়ার্ডটিতে নেই পাবলিক লাইব্রেরি ও খেলার মাঠ। তাই মাদকের আগ্রাসন এখনো কমেনি ওয়ার্ডটিতে। অধিকাংশ রাস্তার সড়কবাতি নষ্ট থাকায় অন্ধকারাচ্ছন্নভাবেই চলতে হয়। ডিএসসিসির প্রকৃত সেবা এখানে নিশ্চিত করা হয়নি। ডিএসসিসির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সচিব রাম বাবু যুগান্তরকে বলেন, আমি যোগদানের পর ডিএসসিসির নিয়ম অনুযায়ী নাগরিক সেবা নিশ্চিত করছি। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সনদসহ প্রয়োজনীয় সব সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নানা অসুবিধা রয়েছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। এ বিষয়ে ডিএসসিসির অঞ্চল-২ আঞ্চলিক কার্যালয়ের নির্বাহী কমর্কতা (উপসচিব) মো. রেজাউল করিমকে মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
