Logo
Logo
×

রাজধানীর খবর

দখল-দূষণে জিন্দাবাহার পার্ক

ভেতরে অবৈধ রেস্টুরেন্ট

Icon

পুরান ঢাকা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পুরান ঢাকার নয়াবাজার এলাকায় অবস্থিত নবাব সিরাজউদ্দৌলা পার্ক। কাগজে-কলমে নবাব সিরাজউদ্দৌলা পার্ক হলেও স্থানীয়দের কাছে এটি জিন্দাবাহার পার্ক নামে পরিচিত। ‘জিন্দাবাহার’ ফার্সি শব্দ, যার বাংলা অর্থ ‘তাজা বসন্ত’। কিন্তু পার্কের সার্বিক অবস্থা দেখে যে কেউ বসন্তের রূপ ভুলে যাবেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে এই পার্কের অবস্থান। পার্কটির আয়তন এক একরের একটু বেশি। এখানে শুধু জিন্দাবাহার পার্ক এলাকাই নয়, পার্শ্ববর্তী কসাইটুলি, বাদামতলি, আশেক জমাদার লেন, আওলাদ হোসেন লেন, বংশাল, লালবাগ, নবাবপুর, নাজিমউদ্দিন রোড, ইংলিশ রোড, কুমারটুলি, পাটুয়াটুলি, চকবাজার এবং মাহুতটুলিসহ আরও বেশ কয়েকটি এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা এই পার্কে আসেন একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে। এটি এক সময়ে ছিল পুরান ঢাকার মানুষের অবসর সময় কাটানো কিংবা প্রাতঃভ্রমণের জায়গা। বেশ আকর্ষণীয় আর মনোরম। সেই সুদিন এখন আর নেই। বর্তমানে পার্কের ভেতরে-বাইরে দখল ও নোংরা পরিবেশ। পার্কের ভেতরের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে রেস্টুরেন্ট। পার্কের ভেতরের একটি টয়লেট স্টোর রুম হিসাবে দখল করে নিয়েছে দোকানের মালিকরা। ময়লা-আবর্জনার উৎকট দুর্গন্ধ আর সারাক্ষণ হকারের উৎপাতে এখানে বসা দায়। এখানে সময় কাটাতে আসা মানুষের মন্তব্য ‘জিন্দাবাহার এখন এক মৃত পার্কের নাম’। সরেজমিন দেখা যায়, পার্কের একপাশে কফি শপের জন্য রাখা নির্দিষ্ট সীমানা ছাড়িয়ে ভেতরে নির্মাণ করা হয়েছে রেস্টুরেন্ট। সেই রেস্টুরেন্টের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পার্কের একমাত্র পাবলিক টয়লেটটি। পার্কের ভেতরে টিনের ঘর নির্মাণ করে থাকছেন শ্রমিকরা। এ ছাড়া দায়িত্বশীলদের অব্যবস্থাপনার কারণে পুরো পার্ক বেহাল।

পার্কের চারদিকে অবৈধ পরিবহণ স্ট্যান্ড এবং কাউন্টার, ভাঙা সীমানা প্রাচীর, আলোকসজ্জার সব লাইট চুরি হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষের হাত-মুখ ধোয়ার জন্য নির্মিত বেসিনে ধনিয়া পাতার গাছ। কোনোটিতে পানির কল অবশিষ্ট নেই। চারপাশে অর্ধশতাধিক ফুটপাতের দোকান। ভেতরে নির্মাণ করা হয়েছে শ্রমিকদের আবাসন।

পার্কের ফোয়ারাটা নষ্ট, সেখানকার কোনো কল ঠিক নেই। টোকাইরা সব ভেঙেচুরে নিয়ে গেছে নেশার টাকা জোগাড় করতে। সবচেয়ে বড় কথা এই পার্ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কেউ যদি দায়িত্বে থাকত তাহলে পার্কের এই দশা হতো না। তবে সিটি করপোরেশন দাবি করছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লোক দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের চেহারা কখনো দেখা যায়নি।

পার্কের অভ্যন্তরে জায়গা দখল করে রেস্টুরেন্ট নির্মাণের বিষয়ে আলাপকালে রেস্টুরেন্টের কর্মচারী জানান, আকাশ নামের এক লোক এই দোকানের মালিক। আমরা সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিয়েই রেস্টুরেন্ট করেছি। এখানে আমরা রেস্টুরেন্ট ও পাবলিক টয়লেটের ইজারা নিয়েছি। যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ও টয়লেটকে স্টোর রুম হিসাবে ব্যবহার করার বিষয়ে এই কর্মচারী বলেন, আমরা যেহেতু ইজারা নিয়েছি সেক্ষেত্রে এখানে কী করব না করব সেটা আমাদের বিষয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দোকানের মালিক পক্ষের একজন জানান, আগে এই পার্ক নেশার অভয়ারণ্য ছিল। এখানে একটা কফি শপ ছিল, যা চালাত সাবেক কমিশনারের ভাতিজা সাব্বির। আমরা সেগুলো উচ্ছেদ করে, একটি সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছি। তাছাড়া এলাকাবাসীর ইচ্ছা ছিল এখানে পঞ্চায়েতের অফিস করার। টয়লেটকে স্টোর রুম হিসাবে ব্যবহার করার ব্যাপারে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের টয়লেটটির দীর্ঘদিনের বিল বকেয়া ছিল, তাই ওয়াসা পানির লাইন কেটে দেয়। বাধ্য হয়ে আমরা একটা অকেজো টয়লেটকে ব্যবহার উপযোগী করেছি। পার্কের রক্ষণাবেক্ষণ ও জায়গা দখল করে রেস্টুরেন্ট নির্মাণের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হাছিবা খান বলেন, পার্কের রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে লোকবল আছে। কেউ যদি তাদের দায়িত্বে অবহেলা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া আমি নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। সরেজমিন পরিদর্শন করে পার্কের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত হয়ে পার্কের পরিবেশ ঠিকঠাক করার ব্যবস্থা করব। কেউ যদি অবৈধভাবে পার্কের জায়গা দখল করে, তাদের উচ্ছেদের ব্যবস্থা করব। অবৈধ পরিবহণ কাউন্টারের দখলদারত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, সব ধরনের দখলদার উচ্ছেদ করা হবে। সিটি করপোরেশনের সব পার্কের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, শিগগিরই এ নিয়ে আমরা আমাদের পরিকল্পনা জানাব।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম