Logo
Logo
×

রাজধানীর খবর

ওয়ার্ড পরিক্রমা (দক্ষিণ সিটি) ৫নং ওয়ার্ড

কচুরিপানায় মশার উপদ্রব

সড়কে রিকশা পার্কিং করায় যানজট * সড়কের দুপাশেই বাজার

Icon

মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া ডেমরা ও আনোয়ার হোসেন নবীন মতিঝিল (ঢাকা)

প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫ নম্বর ওয়ার্ডে অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও অপরিকল্পিত নগরায়ণসহ নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা বিদ্যমান রয়েছে। ওয়ার্ডের ডোবানালা কচুরিপানায় ভরে গেছে। এতে মশা-মাছির উপদ্রব বেড়েছে। অপ্রশস্ত বাসাবো-মাদারটেক সড়কেই লেগুনা ও সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড থাকায় যানজটে নাকাল হয়ে পড়েন যাত্রীসহ অধিবাসীরা। এখানকার অলিগলির অভ্যন্তরীণ সড়ক এতটাই অপ্রশস্ত যে, কোনো যানবাহনই চলতে পারে না। আর মূল সড়ক থেকে নিচু ওইসব সড়কে ড্রেনেজ ব্যবস্থাও সরু বলে সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অভ্যন্তরীণ ওয়ার্ড এলাকায় সবুজায়নের অভাব, গ্যাস সংকট ও ওয়াসার পানির সমস্যা নিয়ে বাসিন্দারা চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। নগরীর সবুজবাগ থানাধীন ডিএসসিসির ৫ নম্বর ওয়ার্ড মায়াকানন, সবুজবাগ, উত্তর মুগদাপাড়া ডেপুটি কলোনি, আহম্মদবাগ, রাজারবাগ উত্তর ও দক্ষিণ কদমতলা, বাসাবো, পূর্ব বাসাবো এলাকা নিয়ে গঠিত। এটি খিলগাঁও অঞ্চল-২ আঞ্চলিক কার্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত। যেটি সাবেক ঢাকা সিটি করপোরেশনের ২৮নং ওয়ার্ড ছিল। সংসদীয় ঢাকা-৯ আসন অন্তর্ভুক্ত ৫ নম্বর ওয়ার্ডটির আয়তন প্রায় ৬ বর্গকিলোমিটার। ঘনবসতিপূর্ণ এ ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪৬ হাজার হলেও এখানে আড়াই লাখ মানুষের বসবাস। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কমলাপুর ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার এ ওয়ার্ডে পড়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, ডিএসসিসির অন্তর্ভুক্ত বাসাবো-মাদারটেক প্রধান সড়কটি অপ্রশস্ত ও অনুন্নত হওয়ায় এখানে নিত্য যানজটে নাকাল হয়ে পড়েন অধিবাসীসহ যাত্রীরা। এছাড়া এখানকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বৌদ্ধমন্দির, কালিবাড়ী সড়কেও তীব্র যানজট লেগেই থাকে। এখানে ব্যাটারিচালিত অবৈধ ৩ চাকার যানবাহন চলাচল থাকায় সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থী, বিভিন্ন অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগামী মানুষ, চাকরিজীবী, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষসহ আশপাশের ওয়ার্ড ও পূর্বাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ ওই দুটি সড়ক দিয়ে চলাচল করে। তাই অপ্রশস্ত এ সড়কটিতে যানজট যেন স্বাভাবিক বিষয়। আর বাধ্য হয়ে সড়কটিতে চলাচলকারী অভ্যস্ত হওয়া মানুষের নিত্য ভোগান্তি দেখার যেন কেউ নেই। এদিকে ওয়ার্ডের মূল রাস্তার চেয়ে অভ্যন্তরীণ নিচু সড়কগুলো এতই অপ্রশস্ত ও অপরিকল্পিত যে, সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। আর সরু ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে বৃষ্টির পানির সঙ্গে ড্রেনের পানি মিশে একাকার হয়ে যায়। দক্ষিণ বাসাবো ওহাব কলোনি ব্লক ডি সড়কে নির্মাণসামগ্রী রাস্তার দুপাশে ফেলে রেখে ও রাস্তায় রিকশার স্থায়ী পার্কিং করে যানজট সৃষ্টি করা হচ্ছে। এদিকে মায়াকাননসহ বেশ কয়েকটি সড়কে ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ ৭০ শতাংশ উন্নয়ন কাজ করে ফেলে রাখা হয়েছে। আর ওইসব এলাকায় সড়ক কেটে রাখায় বাসিন্দাদের ভোগান্তি বেড়েছে।

সরেজমিন আরও দেখা গেছে, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে স্থায়ী বাজার না থাকায় অভ্যন্তরীণ অধিকাংশ সড়কের দুপাশ দখল করে বাজার স্থাপন করা হয়েছে। দক্ষিণ বাসাবো স্কুল মাঠের গলি, ওহাব কলোনির অলিগলি ও বাসাবো জামে মসজিদ গলি, বাসাবো-মাদারটেক প্রধান সড়ক, সবুজবাগ, উত্তর মুগদাপাড়া ডেপুটি কলোনি, আহম্মদবাগ, রাজারবাগ উত্তর-দক্ষিণ, কদমতলা বাসাবো ও পূর্ব বাসাবো বেশ কয়েকটি হোল্ডিং সড়কেই ভ্যানগাড়ি ও রাস্তায় বসে অস্থায়ী বাজার স্থাপন করা হয়েছে। এতে সড়কে প্রতিনিয়ত বিশৃঙ্খলা লেগেই থাকে। এদিকে ওয়ার্ডের সর্বত্রই গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে, সংকট চলছে ওয়াসার পানিতেও। দিনের বেলা এমনিতেই গ্যাস থাকে না, বিকালে কিংবা রাতে যদি আসে তাহলে প্রেসার থাকে না। বিশুদ্ধ পানি ও সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করে অতিরিক্ত অনেক টাকা গুনতে হয় বাসিন্দাদের। মশা-মাছি ও বেওয়ারিশ কুকুরসহ নোংরা পরিবেশ লক্ষ করা গেছে ওয়ার্ডের সর্বত্রই। এখানে বাসাবো ও স্কুল মাঠ নামে দুটি খেলার মাঠ থাকলেও নেই কোনো বিনোদনকেন্দ্র, পাবলিক লাইব্রেরি, সরকারি আধুনিক কমিউনিটি সেন্টার ও হাসপাতাল। ওয়ার্ডের পাশের একমাত্র জিরানী খালটি অবৈধ দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওয়ার্ডের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর ড্রেন আবর্জনায় পরিপূর্ণ হয়ে গেলে ডিএসসিসির লোকজনকে খবর দিলে তারা টাকার বিনিময় ছাড়া কাজ করতে চায় না। গ্যাস সংকট ও ওয়াসার দুর্গন্ধযুক্ত পানি ওয়ার্ডবাসীদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। এখানে স্থায়ী কোনো পরিকল্পিত বড় বাজার না থাকায় চরম দুর্ভোগে রয়েছেন বাসিন্দারা। পাশের ওয়ার্ডে গিয়ে মাছ-মাংস কিনে আনতে হয়। ওয়ার্ডটিতে নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় নাগরিক সুবিধা এখানে এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। অনেক সড়কবাতি নষ্ট থাকায় রাতে অন্ধকারে চলতে হয় অধিবাসীদের।

ওহাব কলোনি এলাকার বাসিন্দা মো. আকবর আলী যুগান্তরকে বলেন, বৃষ্টির সময় চলছে বলে অভ্যন্তরীণ নিচু সড়ক এলাকার আমরা খুব ভয়ের মধ্যে আছি। একটু ভারি বৃষ্টি হলেই বৃষ্টির পানির সঙ্গে ড্রেনের পানি মিশে একাকার হয়ে যায়। আমাদের অপ্রশস্ত ৪-৫ ফুট সড়কে সরু ড্রেন থাকায় খুব বিপদে আছি। তা ছাড়া প্রধান সড়কের পাশে দোকানপাট ও লেগুনা স্ট্যান্ড থাকায় ভোগান্তিও চরমে।

মায়াকানন এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সালাম যুগান্তরকে বলেন, সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ সড়ক উন্নয়নের ৭০ শতাংশ কাজ করে ফেলে রাখা হয়েছে। ওয়ার্ডের কয়েকটি সড়কেই এমন চিত্র দেখা গেছে। নির্দিষ্ট কোনো সময় জানা যাচ্ছে না। সড়কের বাকি কাজ কবে সম্পন্ন করা হবে। এতে সড়কে প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে এখনো চলাচল করা যায় না। এছাড়া আমাদের ওয়ার্ডে যাত্রীবাহী নিরাপদ কোনো টাউন সার্ভিস নেই। এদিকে নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের বিষয়ে ডিএসসিসির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সচিব রামবাবু যুগান্তরকে বলেন, ওয়ার্ডবাসীরা নানা সমস্যায় রয়েছে বলে প্রতিনিয়ত অভিযোগ আসে। বর্তমানে কাউন্সিলর না থাকায় ডিএসসিসির যথাসম্ভব নাগরিক সেবাগুলো নিশ্চিত করে যাচ্ছি। ডিএসসিসির নিয়ম অনুযায়ী সব কার্যক্রম ও বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা প্রদান করছি। এক্ষেত্রে সব বিষয়ে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের অবগতির মাধ্যমেই ওয়ার্ডের সেবা কার্যক্রম সম্পন্ন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ডিএসসিসির অঞ্চল-২ আঞ্চলিক কার্যালয়ের নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মো. রেজাউল করিমকে ফোন দেওয়া হলে তিনি ধরেননি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম