Logo
Logo
×

রাজধানীর খবর

ওয়ার্ড পরিক্রমা (দক্ষিণ সিটি) ৬ নম্বর ওয়ার্ড

বেহাল সড়ক উন্নয়নকাজ

দখল-দূষণে মুগদাপাড়া খাল * বেওয়ারিশ কুকুর ও মশার উপদ্রব * গ্যাসের চরম সংকট

Icon

মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, ডেমরা ও আনোয়ার হোসেন নবীন, মতিঝিল (ঢাকা)

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও ধীরগতির সড়ক উন্নয়ন কাজে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ওয়ার্ডের মুগদাপাড়া খালের অবৈধ দখল-দূষণে প্রতিবছরই বর্ষায় নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এছাড়াও ওয়ার্ডটিতে ক্রমেই বাড়ছে বেওয়ারিশ কুকুর ও মশার উপদ্রব। একই সঙ্গে ওয়াসার পানির সমস্যাসহ গ্যাসের সংকটে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। বিশেষ করে ওয়ার্ডের অভ্যন্তরীণ অপ্রশস্ত সড়কে যানজটসহ নানা ভোগান্তিতে পড়েছেন ওয়ার্ডবাসী।

রাজধানীর মুগদা থানাধীন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডটি উত্তর-দক্ষিণে মুগদাপাড়া, পশ্চিমে মুগদা বিশ্বরোড ও পূর্বে মান্ডা খাল পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি (খিলগাঁও অঞ্চল-২) আঞ্চলিক কার্যালয় ও সংসদীয় ঢাকা-৯ আসন অন্তর্ভুক্ত। ওয়ার্ডটি সাবেক ঢাকা সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ড ছিল। এর আয়তন প্রায় ৭ বর্গকিলোমিটার। ঘনবসতিপূর্ণ এ ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৫২ হাজারের বেশি হলেও প্রায় ২ লাখ মানুষের বসবাস। ওয়াসা রোড, মদিনাবাগ, খালপাড় রোড, বিশ্বরোড, দক্ষিণ মুগদাপাড়া বাজার রোড, স্কুল গলি, ৭ নম্বর রোড, ব্যাংক কলোনি, আরব বেকারি রোড, জান্নাতবাগ রোড, শান্তিকানন, ওয়াপদা গলি, জিরো পয়েন্ট, সরদারবাড়ি রোড, বড় মসজিদ রোড, মুগদা প্রধান সড়ক, ঝিলপাড় রোড, আইডিয়াল স্কুল রোড, মুগাদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল রোড এলাকাসহ মানিকনগরের কিছু অংশ এ ওয়ার্ডে পড়েছে।

ওয়ার্ডের মুগদা বিশ্বরোড থেকে মান্ডা সেতু পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার সড়কের ধীরগতির উন্নয়ন কাজে ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। সড়কটিতে ৬/৭ মাস ধরে চলছে উন্নয়ন কাজ। উত্তর মুগদা পিডিবি অফিসার্স কোয়ার্টার সংলগ্ন সড়কটিতে দীর্ঘদিন ধরে ড্রেনেজব্যবস্থার উন্নয়নসহ স্লাব দিয়ে রাখা হয়েছে। সড়কের মাটি থেকে ড্রেন উঁচু হওয়ায় কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারে না। তবে ড্রেনের ফাঁকে ফাঁকে কিছু অটোরিকশা-ইজিবাইক ঝুঁকি নিয়ে চলে। মূলত এ সড়ক সংলগ্ন অধিবাসীদের দীর্ঘপথ হেঁটে চলাচল করতে হয়। এক্ষেত্রে বয়স্ক, রোগী, শিক্ষার্থীসহ অফিসগামী মানুষ চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। এদিকে সড়কটিতে এত সমস্যার মধ্যেও ভ্যানগাড়িতে ও রাস্তা দখল করে বিভিন্ন অস্থায়ী দোকানপাট স্থাপন করা হয়েছে। মুগদা মেডিকেল হাসপাতাল পাড় হয়ে ডানে মানিকদি সড়কটি ৩ বছরেও সংস্কার হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. বাবু মিয়া যুগান্তরকে বলেন, ৬/৭ মাস ধরে সড়কের উন্নয়ন কাজ চলছে। এছাড়াও সড়কের পাশে বিদ্যুতের খুঁটিতে তারের জঞ্জাল ও অটোরিকশা রাখা হয়েছে।

সরেজমিন আরও দেখা যায়, মুগদা ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল থেকে বড় মসজিদ হয়ে আধা কিলোমিটার সড়কের কাজ এখনো ধরা হয়নি। এ সড়কের পিচ ও পাথর উঠে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। বৃষ্টি হলেই কাদা জমে যায়। প্রথম দেখায় মনেই হয় না এটি সড়ক। অথচ এ সড়ক দিয়ে হাজারো রোগী যাতায়াত করেন। সড়কটিতে ভারী যানবাহন চলতে গিয়ে বিকল হয়ে যায়। প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। আর মুগদাপাড়া ঝিলপাড়সহ প্রায় সব অভ্যন্তরীণ সড়ক এতটাই অপ্রশস্ত যে এখানে নির্বিঘ্নে কোনো প্রাইভেট কার ও অ্যাম্বুলেন্স চলাচল করতে পারে না। তাই এ এলাকার প্রধান যানবাহন হচ্ছে সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী নিষিদ্ধ অটোরিকশা-ইজিবাইক ও মিশুক। আর অনভিজ্ঞ চালকরা এসব নিষিদ্ধ যান চালান বলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হন বাসিন্দারা।

মুগদা হাসপাতাল গেটের ফল বিক্রেতা মো. জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তরকে বলেন, বৃষ্টি হলেই হাসপাতালটির সামনে ১ থেকে ১৫০ ফুট এলাকায় পানি জমে যায়। সরতে অনেক সময় লাগে। তবে না শুকানো পর্যন্ত রাস্তার পাশে ওই পানি জমে থাকে। এদিকে সন্ধ্যার পর হাসপাতালের সামনে মাছের বাজার বসে।

দেখা যায়, নজরদারি না থাকায় নগরীর মুগদাপাড়ার অভ্যন্তরে বয়ে যাওয়া খালটি অবৈধ দখল-দূষণের কবলে রয়েছে। এছাড়া খালের পচা কালচে দুর্গন্ধযুক্ত পানির কারণে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে নানা পানিবাহিত রোগবালাই। পাশাপাশি মশার উপদ্রব বাড়ছেই। ওয়ার্ডের দেবধোলাই খালের মাধ্যমে মুগদাপাড়ার সঙ্গে বিভক্ত হয়েছে ডিএসসিসির ৭১ ও ৭২ নম্বর ওয়ার্ড। আর ওই দুটি ওয়ার্ডের অধিবাসীরাই নির্বিচারে খালটিকে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করার পাশাপাশি দখল করে বাড়িঘর করেছেন। ৬০ ফুট প্রশস্তের খালগুলো অবৈধ দখলের কারণে কোথাও কোথাও সুরু নালায় পরিণত হয়েছে। খালের দুই পাড় দখল করে অনেক রিকশা গ্যারেজ নির্মাণ করা হয়েছে। অনেকে ছোট-বড় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও চালাচ্ছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এখানকার সড়ক উন্নয়ন কাজ করেন মাত্র ২/৩ জনে। আর ধীরগতির এ উন্নয়ন কাজে জীবন অতিষ্ঠ। ওয়াসার পানির সমস্যা ও গ্যাসের চরম সংকট নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। এছাড়াও ওয়ার্ডে কোনো খেলার মাঠ, পার্ক, লাইব্রেরী ও কোন বিনোদনকেন্দ্র নেই। এতে এখানকার শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

মুগদার বাসিন্দা ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর সামসুল হুদা কাজল যুগান্তরকে বলেন, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি বড় প্রকল্পের কাজ দুইভাগে চলছে। এক্ষেত্রে মাতৃসদন থেকে পুকুর গলির কাজ একভাগে ও সিটি গলি থেকে মাতৃসদন হয়ে মানিকনগর ওয়াসা মোড় পর্যন্ত দ্বিতীয়ভাগে কাজটি চলছে। তবে ধীরগতির এ উন্নয়ন কাজে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হয়নি। ওয়ার্ডের কিশোর গ্যাং ও মাদকের আগ্রাসন নিরসনে পুরোদমে কাজ চলছে।

ওয়ার্ডের সচিব মো. বজলুর রহমান বলেন, ওয়ার্ডের সড়কের উন্নয়ন কাজের ধীরগতির বিষয়ে সবাই অভিযোগ করলেও বিষয়টি দেখবে প্রকৌশল বিভাগ। তবে ওয়ার্ডের অধিবাসীদের সব ধরনের সনদসহ নাগরিক সেবা প্রদান অব্যাহত রয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির অঞ্চল-২ আঞ্চলিক কার্যালয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহির আহম্মেদ যুগান্তরকে বলেন, ডিএসসিসির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সড়ক উন্নয়ন কাজ চলছে যথারীতি ও নিয়মের মধ্যেই। এক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে হবে। আর উন্নয়ন কাজে সাময়িক একটু ভোগান্তি হলেও পরে উন্নয়ন সুফল পেলে সব কষ্ট ভুলে যাবেন বাসিন্দারা।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির অঞ্চল-২ আঞ্চলিক কার্যালয়ের নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মো. রেজাউল করিমের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম