Logo
Logo
×

রাজধানীর খবর

ওয়ার্ড পরিক্রমা (দক্ষিণ সিটি) ৮ নম্বর ওয়ার্ড

মতিঝিলে খেয়ায় পারাপার

অধিকাংশ সড়কবাতি নষ্ট * বেড়েছে চুরি ছিনতাই * মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ মানুষ

Icon

ডেমরা ও সবুজবাগ (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নগরীতে থেকেও খেয়া নৌকায় পারাপার হতে হয়। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ মানুষ। ওয়ার্ডে অপ্রশস্ত সড়ক, গ্যাস ও ওয়াসার পানির সংকটে মানুষের ভোগান্তি চরমে। এছাড়াও ওয়ার্ডের প্রতিটি সড়কেই অধিকাংশ সড়কবাতি নষ্ট থাকায় অন্ধকারে পথ চলতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। এতে এলাকায় চুরি-ছিনতাই বেড়েছে।

ওয়ার্ডটিতে সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাটারিচালিত অবৈধ ইজিবাইক, অটোরিকশা ও মিশুকের রাজত্ব, মাদকের আগ্রাসন, অবৈধ দখল, কিশোর গ্যাং ও প্রভাবশালীদের চাঁদাবাজিতেও অতিষ্ঠ মানুষ। পাশাপাশি ওয়ার্ডটিতে স্থায়ী কোনো বাজার নেই। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছনে কবরস্থান সড়ক দখল করে গড়ে ওঠা বাজারটি তাদের একমাত্র ভরসার বাজার।

ওয়ার্ড পরিচিতি : ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৮ নম্বর ওয়ার্ডটি মতিঝিল থানায় অবস্থিত। মতিঝিল (আংশিক), বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনি ও সোনালী ব্যাংক কলোনি, আর কে মিশন রোড, গোপীবাগ, কমলাপুর, মতিঝিল, বি-রেলওয়ে ব্যারাক এলাকা নিয়ে গঠিত। এটি সংসদীয় ঢাকা-৮ আসনভুক্ত ও ডিএসসিসির অঞ্চল-২ আঞ্চলিক কার্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত। এ ওয়ার্ডে ২৩ হাজারের বেশি ভোটার হলেও লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। ওয়ার্ডটি আগে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ড ছিল।

সরেজমিন দেখা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ব দক্ষিণ পাশে উটের খামারের পাশের জলাধারে শত শত বছর ধরে নৌকায় পারাপার হন ওয়ার্ডের হাজার হাজার মানুষ। এখানে জলাধারের আগে সড়কটির সামান্য উন্নয়ন হলেই পাঁচ মিনিটের মধ্যে মতিঝিলে যাতায়াত করতে পারবেন বাসিন্দারা। এদিকে, ওয়ার্ডের মতিঝিল প্রশস্ত রাস্তাটি কমলাপুর বাজার কালভার্ট রোড হয়ে সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টার ও দেওয়ানবাগ শরীফের খানকা থেকে টিটি পাড়া রাস্তাটি খানাখন্দ ও ছোট-গর্তে ভরা। এ সড়কটি এতটাই খারাপ যে, গাড়ি চলাচলের অযোগ্য। খানাখন্দ ও জলাবদ্ধতার কারণে পায়ে হেঁটে যাওয়ার সুযোগ নেই এ সড়কে। এদিকে টিটি পাড়া কমলাপুর রেলস্টেশন সড়কটি গত ৪ বছর ধরে বন্ধ থাকায় মানুষের স্বাভাবিক চলাচলে ভোগান্তি বেড়েছে। এক্ষেত্রে টিটি পাড়ায় রেল লাইনের নিচ দিয়ে অন্ডারপাসের কাজ ও কমলাপুর রেল স্টেশনের সামনের মূল রাস্তায় চলছে মেট্রোরেল স্টেশনের ধীরগতির উন্নয়ন কাজ। এতে ব্যাহত হয়েছে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেটগামী বাসসহ মালবাহী ট্রাকের সহজ চলাচল। একই সঙ্গে ব্যাহত হচ্ছে প্রতিদিন কাস্টম হাউজের মালবাহী অর্ধশত ট্রাকেরও চলাচল।

সরেজমিন দেখা গেছে, ওয়ার্ডের অধিকাংশ সড়ক অপ্রশস্ত। দক্ষিণ কমলাপুর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার ভেতরের সড়কগুলো এতটাই অপ্রশস্ত যে রিকশা ছাড়া কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারে না। অ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও আসতে পারে না। ওয়ার্ডের গার্মেন্টস রোড থেকে ধলপুর মসজিদ, সরকার কলোনি গলি, বাটারফ্লাই গলি, আইসিটির অপর পাশের গলি সড়কে রিকশা ছাড়া কোনো ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারে না। রাতে দক্ষিণ কমলাপুরসহ আশপাশের এলাকায় অধিকাংশ সড়কবাতি জ্বলে না।

আইসিটি গেটের পশ্চিম পাশে মানুষ সারাদিন ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন। একদিকে ভাঙাচোরা সড়কে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, অন্যদিকে ময়লার স্তুপ যা জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। গোপীবাগ ব্রাদার্স ক্লাবের সামনের সড়কটি কিছুদিন আগেই মেরামত করা হলেও গরুর হাটের কারণে এটি আবার বেহাল হয়েছে। এদিকে কালভার্ট সড়কে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ভাঙারির দোকান যেখানে চোরাই মালামাল বিক্রি হয়। ওয়ার্ডের চারদিকেই নোংরা পরিবেশ। আর এ পরিবেশেই খাবার হোটেলগুলোতে চলছে খাবার পরিবেশন। এছাড়া ওই সড়কের দু’পাশ দখল করে স্থায়ী-অস্থায়ী অনেক দোকানপাট বসানো হয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এখানকার ঘিঞ্জি-নোংরা পরিবেশ, আবর্জনায় ভরপুর ড্রেনের পঁচা পানি, মশা-মাছির উপদ্রব, বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রবসহ গ্যাস ও ওয়াসার পানির সমস্যায় মানুষের ভোগান্তি যেন চরমে। আর বর্ষা মৌসুমে মতিঝিল-কমলাপুর সড়কে স্থায়ী জলাবদ্ধতা এ ওয়ার্ডের মূল সমস্যা। এছাড়াও জসিম উদ্দিন সড়কে কিশোর গ্যাংয়ের একটি বড় অংশ রয়েছে। যাদের ভয়ে এলাকাবাসী কথা বলেন না। ওই কিশোর গ্যাং এলাকায় চাঁদাবাজি, মতিঝিল এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক বিক্রিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। অলি-গলিতে ফেরি করে মাদক বিক্রি হচ্ছে এ ওয়ার্ডে।

এ বিষয়ে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম রনি যুগান্তরকে বলেন-এখানে লাইব্রেরি ও কোনো বিনোদনকেন্দ্র নেই। এতে এখানকার শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ওয়ার্ডটিতে নাগরিক সুবিধা আজও নিশ্চিত হয়নি। এখানে মাদক ও কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য কমানো যাচ্ছে না। এ বিষয়ে ৯ নম্বর ওয়ার্ড ও ৮ ওয়ার্ডের দায়িত্বরত সচিব শাহ আলম যুগান্তরকে বলেন, আমাকে একদিকে আরামবাগ হাই স্কুল ও কলেজ বসতে হচ্ছে, অন্যদিকে ৮ নং ওয়ার্ডেও যেতে হয়। আবার ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের আমার কাছে আরামবাগ আসতে হয়। এতে ভোগান্তি বাড়ছে মানুষের। তবে ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সব ধরনের সনদ প্রদানসহ নাগরিক সেবা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ডিএসসিসির অঞ্চল-২ ও অঞ্চল-৫ এর নির্বাহী কমর্কতা (উপ-সচিব) মো. রেজাউল করিমকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম