Logo
Logo
×

রাজধানীর খবর

দখল-দূষণে মৃতপ্রায় মুগদা খাল

Icon

সবুজবাগ (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দখল-দূষণে প্রায় মৃত মুগদা খাল। বৃষ্টি হলেই পুরো এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। মশার উপদ্রবও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। কর্তৃপক্ষের অবহেলা, দখল, দূষণ, এলাকাবাসীর অসচেতনতা, সরকারি-বেসরকারি নানা অবকাঠামো নির্মাণে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে মুগদা খাল। দূষণের ফলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে আশপাশের এলাকায়। এ খাল থেকে মশা-মাছির উৎপাত ও নানা রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে। আর এ ময়লা-আবর্জনার কারণে শিশুরা পানিতে পড়লে তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। মাঝেমধ্যে প্রাণহানিরও ঘটনা ঘটছে এ খালে। খাল নামের ওই দূষিত নর্দমা এখন মশার প্রজনন ক্ষেত্র। একসময় খালটি প্রায় ৭০ ফুট চওড়া ছিল। তখন ভারি বৃষ্টি হলেও দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা হতো না। বৃষ্টির পানি প্রথমে খালে ও খাল থেকে যেত বালু নদে। এখন দূষিত নর্দমায় পরিণত হওয়া খালটি দিয়ে পানি প্রবাহের সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে। সর্বশেষ কবে মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে, তা মনে করতে পারছেন না এলাকাবাসী। মুগদা খালটি মতিঝিল, বাংলাদেশ ব্যাংক, টিটিপাড়া, মুগদা, মানিকনগর, মান্ডা, নন্দীপাড়া ও ত্রিমোহনী এলাকা হয়ে বালু নদে পড়েছে। বালু নদ থেকে গিয়ে পড়েছে শীতলক্ষ্যায়। বিভিন্ন জায়গায় এ খালের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কদমতলী খাল, বাসাবো খাল, জিরানি খাল, নন্দীপাড়া খাল।

সরেজমিন দেখা যায়, ভরাট ও দখলের কবলে বিভিন্ন জায়গা খালের প্রস্থ কমে গেছে। কোথাও কোথাও খালের প্রস্থ ১০ থেকে ১২ ফুটে নেমে এসেছে। কোথাও ময়লা জমতে জমতে ভরাট হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে খালটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করায় খালের বিভিন্ন অংশে শ্যাওলাসহ ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে রাস্তা হয়ে গেছে। নিচে পানির প্রবাহ, ওপরে ময়লার স্তূপ পড়েছে। খালটিকে একটি ডাস্টবিন মনে হয়। হঠাৎ করে দেখলে কেউ বুঝতেই পারবে না এটি খাল। পানিতে বাড়ছে দুর্গন্ধ। এতে এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। খালের এক পাশে বাঁধ দিয়ে রাস্তা বানানো হয়েছে। অপর পাশের বিভিন্ন অংশ দখল করে গড়ে উঠেছে রিকশা গ্যারেজ, কাঁচা-পাকা ঘরসহ নানা স্থাপনা। নতুন নতুন ভবন নির্মাণ করতে দেখা গেছে। তাছাড়া এলাকাবাসীও অসচেতন। খালের দুই পাশের বাসিন্দাদের দৈনন্দিন গৃহস্থালির আবর্জনাসহ যাবতীয় পরিত্যক্ত আসবাবপত্র এ খালে নিক্ষেপ করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা তারেকুল আলম বলেন, এ খাল শীতলক্ষ্যা নদীতে মিশেছে। একসময় এ খাল দিয়ে বড় বড় নৌকা চলাচল করত। দয়াগঞ্জ, জিঞ্জিরা হয়ে বড় বড় নৌকা শীতলক্ষ্যা নদীতে চলে যেত। এ খাল দিয়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় মানুষ যাতায়াত করত, মাছ ধরত। পানির কলকল শব্দ হতো। সেগুলো এখন বললে মানুষ হাসবে। চোখের সামনে এ খালটি মরে গেল। একসময়ের খরস্রোতা মুগদা, মান্ডা খাল এখন শুধুই স্মৃতি। এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও সমাজসেবক মো. হামিদুল হক বলেন, মুগদা খাল এখন মশার প্রজনন ক্ষেত্র। মুগদা-মদিনাবাগ দিয়ে বয়ে গেছে খালটি। মুগদায় এটি মুগদা খাল, মান্ডায় এটি মান্ডা খাল ও বাসাবোতে এটি বাসাবো খাল নামে পরিচিত। খালটি এলাকাবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি দিয়ে পানি নিষ্কাশন হয় না, ময়লা-আবর্জনা আর পলিথিন ব্যাগে খাল ভরাট হওয়ার পথে। বদ্ধ পানি থেকে এমন বাজে গন্ধ বের হয়, বমি এসে যায়। নাকে রুমাল না দিয়ে পথচলা দায়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মদ সফিউল্লাহ সিদ্দিক ভুঁইয়া বলেন, সুখনগর ব্রিজ থেকে খালটি চারদিকে গেছে। পশ্চিমে-বাসাবো, তিলপাপাড়া, খিলগাঁও, পূর্বে কদমতলা, উত্তরে দাসেরকান্দি। দক্ষিণে মুগদা, মান্ডা ও মানিকনগর। খাল খনন ও পরিষ্কার প্রকল্পের কাজ চলছে। খালের পূর্বদিক থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পটি আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে শেষ হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে মুগদা খালসহ সব খাল পরিষ্কার হয়ে যাবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এলাকাটি দৃষ্টিনন্দন হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম