ওয়ার্ড পরিক্রমা (উত্তর সিটি) ৮ নম্বর ওয়ার্ড
গাড়ির ডাম্পিং জোন
সুয়ারেজ লাইনগুলো পুরোনো ও নষ্ট * অভ্যন্তরীণ বেশকিছু সড়ক ভাঙাচোরা
মিরপুর ও শাহআলী (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শাহআলী থানার সামনের সড়কে বিভিন্ন যানবাহন ডাম্পিং করে রাখা হয়েছে। এসব গাড়িতে বৃষ্টির পানি জমে এডিস মশার বংশবিস্তার ঘটছে। বিনোদন কেন্দ্রগুলোর দুরবস্থা বহুদিনের। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ওয়ার্ডের একমাত্র কমিউনিটি সেন্টারটি পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। অন্যদিকে কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর নজরদারির অভাবে খেলার মাঠ, পার্ক, মাদকসেবী ও কিশোর গ্যাংয়ের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি সুয়ারেজ লাইনগুলো পুরোনো ও নষ্ট হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে অধিকাংশ নিচু সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ওয়ার্ডের আবাসিক এলাকার সড়কে অস্থায়ী বাজার ও দোকানপাট বসিয়ে বড় রাজনৈতিক দলের কিছু নেতাকর্মী চাঁদাবাজি করছে। এলাকাটিতে আজও শতভাগ নাগরিক সুবিধা নেই বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এ ওয়ার্ডের ফুটওভার ব্রিজে প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। গভীর রাতে থাকে ভাসমান পতিতাদের আনাগোনা। অভ্যন্তরীণ বেশকিছু সড়ক ভাঙাচোরা থাকলেও সংস্কারে উদ্যোগ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া মাদকের আগ্রাসন, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা, অবৈধ দখল, মশা-মাছির উপদ্রব, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছেন বাসিন্দারা।
ওয়ার্ড পরিচিতি : মিরপুর-১ এর ব্লক-এ, বি, সি, ডি, এইচ, নিউ সি, উত্তর বিশিল, সারেং বাড়ি, নবাবেরবাগ, বালুর মাঠ, গড়ান চটবাড়ি, লালটেক, লালমাঠ, বেড়িবাঁধ, বক্সনগর, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও হজরত শাহআলী মাজার এলাকা নিয়ে ডিএনসিসির ৮ নম্বর ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৭৮ হাজার। সংসদীয় আসন ঢাকা ১৪। এটি ডিএনসিসি অঞ্চল-২-এর আওতাধীন।
সরেজমিন দেখা গেছে, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কমিউনিটি সেন্টারের ভেতর ও বাইরের অবস্থা শোচনীয়। প্রবেশপথের গেট, সিঁড়ি ও দেওয়াল ভাঙা। চারপাশের দেওয়াল স্যাঁতসেঁতে ও রং উঠে গেছে। নিচতলার টয়লেট নষ্ট। দ্বিতীয়তলার টয়লেট নোংরা ও ময়লা-আবর্জনায় ভরা। এসি নেই, লাইট, ফ্যান নষ্ট। তৃতীয়তলায় রুম দখল করে পুলিশের মেস ও নিচতলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অফিস বানানো হয়েছে। অন্যদিকে নজরদারির অভাবে চিলড্রেন পার্ক অপরাধীদের আখড়াখানায় পরিণত হয়েছে। ছিনতাইকারী, মাদকসেবী ও কিশোর গ্যাংয়ের আড্ডাস্থল এটি। পার্কের চারপাশে নোংরা পানি ও ময়লা-আবর্জনায় ভরা। ভেতরে খেলাধুলার কোনো সরঞ্জামাদি নেই। কয়দিন পরপর এ পার্কের ভেতর লাশ পাওয়া যায়। সম্প্রতি মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে পার্কের সামনে একটি খুনের ঘটনা ঘটে। এ দিকে পরিচর্যার অভাবে খেলাধুলার পরিবেশ নেই ৮ নম্বর ওয়ার্ড ঈদগাহ মাঠে। মাঠের চারপাশ দখল করে বাজার ও বিভিন্ন দোকানপাট গড়ে তুলেছেন ছিন্নমূল ব্যবসায়ীরা। সীমানা প্রাচীর ভেঙে যাওয়ায় গরু, ছাগল ও কুকুরের অবাধ বিচরণ রয়েছে। বাজারের ময়লা-আবর্জনা মাঠের ভেতর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। মাঠে ঘাস নেই, পুরো মাঠ স্যাঁতসেঁতে ও কর্দমাক্ত। মাঠের চারপাশের ফুটপাতের টাইলস ভেঙেচুরে একাকার হয়ে গেছে। অন্যদিকে শাহআলী থানার সামনে ডাম্পিং এরিয়ায় পিকআপ, লেগুনা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ও অটোরিকশা দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় বেশিরভাগ যানবাহনে মরীচা পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এখানকার অভ্যন্তরীণ সড়ক ও উন্মুক্ত স্থানে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। উত্তর বিশিল ও বক্সনগর এলাকার অঘোষিত আবর্জনার ভাগাড়গুলো জনদুর্ভোগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উত্তর বিশিল, সিটি করপোরেশন মার্কেট, ঈদগাহ মাঠের পূর্ব পাশ, ডি ব্লক, ই ব্লক, কুসুমবাগ, বেড়িবাঁধ, গুদারাঘাট, গোড়ান চটবাড়ি ও নবাবেরবাগ এলাকায় ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছনতাকর্মীদের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো নয়। ময়লার ডাস্টবিনগুলোও নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। আড়তের ময়লা রাস্তায় পড়ে থাকে। ময়লা নিয়ে এখানে চাঁদাবাজি হয়। ময়লার টাকা কালেকশনকে কেন্দ্র করে প্রায় মারামারির ঘটনা ঘটে। জলাবদ্ধতা এ ওয়ার্ডের একটি বড় সমস্যা। সুয়্যারেজ লাইনগুলো অকেজো ও কিছু এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। উত্তর বিশিল, কাজীবাড়ি জামে মসজিদ, ঈদগাহ মাঠ, বেড়িবাঁধ, রাইনখোলা, গুদারাঘাট, বালুর মাঠ, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে সামান্য বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের দক্ষিণ পাশে সুয়্যারেজ লাইন নষ্ট থাকায় বছরজুড়ে ময়লার পানি রাস্তায় ভাসে। ভুক্তভোগীরা জানান, অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা হওয়ায় নবাবের বাড়ি, উত্তর বিশিল ও চিড়িয়াখানা ঢালের জায়গাসহ বেশিরভাগ এলাকা সামান্য বৃষ্টিতেই দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অবশ্য এজন্য কেউ কেউ দায়ী করছেন রূপনগর খালকে। তাদের মতে, একটি মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে কর্মসূচি নিলে দীর্ঘদিনের এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। স্থানীয়রা জানান, মাদক এ ওয়ার্ডে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। পাড়া-মহল্লা থেকে অলিগলি সব জয়গায় সয়লাব মাদক। মিরপুর-১ নম্বর শাহআলী মাজারের আশাপাশ, গুদারাঘাট, নবাবেরবাগ ও উন্মুক্ত স্থানে প্রকাশ্যে মাদক বেচাকেনা হয়। সন্ধ্যা নামলেই মাজারে মাদকসেবীদের আড্ডা বসে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এ ওয়ার্ডে মশার ওষুধ ছিটানো হয় না। নবাবেরবাগ ও গোড়ান চটবাড়ি এলাকায় ঝোপঝাড় ভরে যাওয়ায় মশা-মাছির প্রজনন ও বিস্তার বেড়েছে। সরেজমিন আরও দেখা গেছে, এ ওয়ার্ডের বেশিরভাগ সড়কের উন্নয়ন করা হয়েছে চোখে পড়ার মতো। ব্লক-এ, লালটেক, গোড়ান চটবাড়ি, শাহআলী থানা রোড, বক্সনগর, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনের ও আশপাশের সড়কগুলো মজবুতভাবে কার্পেটিং ও পিচ ঢালাই করা হয়েছে। তবে উত্তর বিশিল, কুমিরশাহ মাজার, ডুইপ, প্রিয়াংকা হাউজিং, নিউ সি ব্লক এবং বেড়িবাঁধ এলাকার প্রধান সড়কসহ অলিগলির সড়কগুলো খুব খারাপ অবস্থা। এর মধ্যে সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে ডুইপ ও বেড়িবাঁধের সড়কটিতে। এ সড়কের ইটের সুরকিও পিচঢালাই উঠে এদিক-ওদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।
ডিএনসিসির ৮ নম্বর ওয়ার্ড সচিব মো. সোহেল বলেন, এ ওয়ার্ডে নাগরিক দুর্ভোগ থাকলেও বিভিন্ন সনদ পেতে দেরি হয় না। এ ছাড়া আগের কাউন্সিলররা থাকতে ৮ নম্বর ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টারটি ভেঙে নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এজন্য মাপজোকও হয়েছে কয়েকবার। হেড অফিসে যোগাযোগ করলে সব জানতে পারবেন।
