Logo
Logo
×

রাজধানীর খবর

ওয়ার্ড পরিক্রমা (উত্তর সিটি) ১০ নম্বর ওয়ার্ড: খাস জমিতে রিকশার গ্যারেজ

খালের ওপর অবৈধ স্থাপনা

বস্তিকেন্দ্রিক মাদক বেচাকেনা * দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকটি গ্রুপ

Icon

মিরপুর ও শাহআলী (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১০নং ওয়ার্ডে অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও বাসিন্দারা নানা সমস্যায় বসবাস করছেন। ওয়ার্ডের একমাত্র কমিউনিটি সেন্টারে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্যাম্প থাকায়, সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকাবাসী। এ ছাড়া কল্যাণপুর ‘ক’ খাল ও বসুপাড়া খালের অবৈধ দখল-দূষণে প্রতি বছরই বর্ষায় অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকায় পানি ওঠে। এক সময় খাল দুটি বাসিন্দাদের কাছে আশীর্বাদ মনে হলেও বর্তমানে ময়লা-আবর্জনা ও অবৈধ স্থাপনার কারণে অভিশাপে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা নির্বিচারে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় খালের পানিতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। এতে সারা বছর মশার উপদ্রব থাকে। আবার অনেক জায়গায় রাস্তা-ঘাট ভেঙে গেছে। পাশাপাশি সরকারি জমি দখল করে কয়েকশ ব্যাটরি চালিত অটোরিকশার গ্যারেজসহ অ্যামব্রয়ডারি কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব গ্যারেজ ও কারখানায় অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ থাকায় সরকার প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। একই সঙ্গে ডিএনসিসির থেমে থেমে সড়ক উন্নয়ন কাজের জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। এ ছাড়া মাদক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকা। কয়েকটি বড় বড় বস্তি থাকায় বস্তিকেন্দ্রিক মাদক বেচাকেনা হয়। পাশাপাশি কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকটি গ্রুপ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো এলাকা।

ওয়ার্ড পরিচিতি : খালেক আবাসিক এলাকা, মিরপুর রোড, দারুস সালাম, বাতেন নগর আবাসিক এলাকা, গৈদারটেক, গাবতলী জমিদার বাড়ি, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় কলোনি, বসুপাড়া, লালকুঠি, সিন্নিরটেক, বেড়িবাঁধ, শাহআলী মাজার রোড (আংশিক) এলাকা নিয়ে ডিএনসিসির ১০ নং ওয়ার্ড গঠিত। ওয়ার্ডের পূর্বে কল্যাণপুর (গাজা টাওয়ার), পশ্চিমে কল্যাণপুর খাল (যা ‘ঘ’ খাল নামে পরিচিত), উত্তরে সিন্নিরটেক, দক্ষিণে গৈদারটেক। দারুস সালাম থানার অন্তর্ভুক্ত এ ওয়ার্ডটির আয়তন প্রায় ৬ বর্গ কিলোমিটার। প্রায় তিন লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৪৫ হাজার। হোল্ডিং সংখ্যা ১৫ হাজার। ঢাকা ১৪ আসনের আওতাধীন এ ওয়ার্ডটি ডিএনসিসি অঞ্চল চার-এর আওতাধীন।

এ ওয়ার্ডে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, গাবতলী জমিদার বাড়ি, টেকনিক্যাল কলেজ ও একটি বড় কমিউনিটি সেন্টার রয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, এ ওয়ার্ডে দুইটি খাল বয়ে গেছে। একটি কল্যাণপুর ‘ক’ খাল অন্যটি বসুপাড়া খাল। খাল দুটিতে ময়লা-আবর্জনা ফেলে দূষণ ও ভরাট করা হচ্ছে। অনেক জায়গায় খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা। এতে সামান্য বৃষ্টি হলে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় কলোনি, তিনতলা মসজিদের পেছনের অংশ, গৈদারটেক, ল্যাংড়া পট্টি ও এর আশপাশের এলাকায় পানি জমে। হাঁটু থেকে কোমড় পর্যন্ত পানি সহজে নামতে চায় না। খালের ময়লা-আবর্জনার পানি উঠে আবাসস্থলে।

স্থানীয়রা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের একমাত্র মাধ্যম কল্যাণপুর ‘ক’ ও বসুপাড়া খাল। এটি দখল করে বাড়িঘর তৈরি করা হয়েছে। ৬০ ফুটের খাল কোথাও তিন ফুট কোথাও দুই ফুটের ড্রেন হয়ে গেছে। বসুপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা পরিবহণ ব্যবসায়ী আলতাফ মোল্লা বলেন অনেক বছর এ ওয়ার্ডে বসবাস করছি। এ খাল ৪০ ফুট পর্যন্ত দেখেছি। এখন দখল হতে হতে কিছু জায়গায় ২ ফুটও নেই।

এদিকে এ ওয়ার্ডে অনেক ভাঙাচোরা ও কাঁচা রাস্তা রয়েছে। মাজার রোডের প্রথম কলোনি,দ্বিতীয় কলোনি, গৈদারটেক ,লালকুঠির ১৫টি রাস্তা, বসুপাড়া, জব্বার হাউজিং, শিমুলতলী, ল্যাংড়া পট্টি, বুদ্ধিজীবী কবরস্থান সংলগ্ন এলাকার ভাঙাচোরা সড়কে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। এখানকার গৈদারটেক ও জব্বার হাউজিং এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে। অধিকাংশ রাস্তায় গ্রামের কাঁচা রাস্তার চেয়ে খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। ডোবা-নালায় কচুরিপানায় ভরে গিয়ে মশার আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। গৈদারটেকের স্থানীয়রা জানান, বর্ষাকালে এলাকার প্রতিটি বসতবাড়ি ও দোকানপাটে ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি প্রবেশ করে। চলতি বর্ষায় টানা বৃষ্টিতে এলাকার প্রতিটি বসত বাড়িতে হাঁটু থেকে গলা পর্যন্ত পানি জমে ছিল। এতে বাসিন্দারা পরিবার-পরিজন নিয়ে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেন।

অভিযোগ রয়েছে, একটি প্রভাবশালী গ্রুপ স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী নিয়ে সরকারি জায়গা ও খালভরাট করে প্লট বাণিজ্য করছে। সরকারি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে তা বিক্রি করছে।

সরেজমিন আরও দেখা গেছে, ডিএনসিসি’র বিশাল আয়তনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টার ৫ আগস্টের পর বন্ধ রাখা হয়েছে। এখানে স্বল্প খরচে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা গেলেও এখন বন্ধ থাকায় বিপাকে এলাকাবাসী। পাশাপাশি বাতেন নগর আবাসিক এলাকার জমিদার বাড়ির মাঠটির একাংশ দখল হয়ে যাওয়ায়, খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত শিশু-কিশোর। আরও দেখা গেছে এ ওয়ার্ডে স্থায়ী বাজার না থাকায় আবাসিক এলাকার সড়কের দুপাশ দখল করে ভ্যান গাড়িতে সবজি বিক্রি করছেন হকাররা। মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের মূল গেটের সামনের সড়ক, বসুপাড়া, বাতেন নগর আবাসিক এলাকা ও লালকুঠি বড় মসজিদের সামনে ভ্যান গাড়িতে অস্থায়ী বাজার বসে। পুরো এলাকায় ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় বৃষ্টি হলে মশার প্রার্দুভাব বাড়ে।

ডিএনসিসি অঞ্চল চার-এর সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন গৈদারটেক এলাকার উন্নয়নে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। অন্য রাস্তাগুলোও ঠিক করা হবে। ডিএনসিসি’র ১০ নম্বর ওয়ার্ড সচিব মোঃ আওলাদ হোসেন বলেন ৫ আগস্টের পর ওয়ার্ড কমিউনিটি সেন্টারটি আপাতত বন্ধ রয়েছে। এখানে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প রয়েছে। এটি রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত। তারা চলে গেলে আবার অনুষ্ঠান হবে। তিনি বলেন ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা থাকলেও রাস্তাঘাট সুন্দর। লোকজন যে কোন সমস্যা নিয়ে এলে আমরা তাৎক্ষণিক সেবা দেই।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম