ওয়ার্ড পরিক্রমা (দক্ষিণ সিটি) ১১ নম্বর ওয়ার্ড : শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনি
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাস
রেললাইনের পাশে ঝুপড়ি ঘরে মাদকের কেনাবেচা * চারদিকে আবর্জনা ও খালের নোংরা পানি
ডেমরা ও সবুজবাগ (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১১ নম্বর ওয়ার্ডের শাহজাহানপুর রেললাইনের দুপাশে অবৈধভাবে অসংখ্য ঝুপড়ি ঘর করে বসবাস করছেন বাস্তুহারা মানুষ। ওইসব ঘরে বসবাস করা লোকজনের অধিকাংশই মাদকসেবন-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত। রেলগেট এলাকার প্রায় ১ কিলোমিটার রেললাইন পথচারীদের জন্য খুবই বিপজ্জনক। এখানে সন্ধ্যা নামতেই মাদকের হাট বসে। আর পথশিশু ও কিশোর গ্যাং সদস্যরা জড়িয়ে পড়েছে মাদক বিক্রিসহ নানা অপরাধে। এদের খপ্পরে পড়ার আতঙ্কে পথচারীরা সব সময় থাকেন আতঙ্কিত। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর গাজার দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
এদিকে অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও অপ্রশস্ত সড়কের কারণেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এখানকার জনজীবন। ওয়ার্ডের চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আবর্জনা ও খালের নোংরা পানি যেন মশার প্রজননক্ষেত্র। প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় মশা-মাছির ভয়াবহ উপদ্রব। শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাস করছেন। সেখানেও চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আবর্জনা ও ময়লার ভাগাড়। পাশাপাশি ওয়ার্ডের অলিগলিতে ময়লা-আবর্জনার স্তূপের কারণে পাড়া-মহল্লায়ও মশা-মাছির উপদ্রব ক্রমেই বাড়ছে। গ্যাস সংকট এ এলাকার অন্যতম প্রধান সমস্যা বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
ওয়ার্ড পরিচিতি : ডিএসসিসির ১১ নম্বর ওয়ার্ডটি ঢাকার শাহজাহানপুর থানাধীন শাহজাহানপুর, শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনি, দক্ষিণ খিলগাঁও, খিলগাঁও বাগিচা, শহীদবাগ, মোমেনবাগ, আউটার সার্কুলার রোড, উত্তর শাহজাহানপুর, দক্ষিণ শাহজাহানপুর, খিলগাঁও বাজার এলাকা নিয়ে গঠিত।
সরেজমিন দেখা যায়, খিলগাঁও বাগিচা ঝিল এই ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। নজরদারি না থাকায় ঝিলের নোংরা কালচে পচা পানির দুর্গন্ধ বিষিয়ে তুলছে চারপাশের পরিবেশ। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় নাকাল হয়ে পড়ে এখানকার জনজীবন। ঝিলের পানিই যেন মশার প্রজনন ক্ষেত্র। এদিকে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কারণে খিলগাঁও রেলফটক এলাকায় লেগেই থাকে যানজট। পথচারীর জন্য ফুটপাত থাকলেও তা দখল করে আছে অসাধু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ওয়ার্ডের প্রায় প্রতিটি সড়কে চলে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাটারিচালিত অবৈধ ইজিবাইক-অটোরিকশা ও মিশুক। এসবের চালকরা আবার সড়কের কোনো নিয়মকানুন বা আইন মানতে রাজি নন। এতে প্রতিনিয়ত সড়কে দীর্ঘসময় যানজট লেগে থাকে। ওয়ার্ডের রেলগেট ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ততম এলাকাগুলোয় মাদকের আগ্রাসন, কিশোর গ্যাং, পথশিশু ও প্রভাবশালীদের চাঁদাবাজিসহ নানা সমস্যায় বিপর্যস্ত এলাকাবাসী। বিশেষ করে পথশিশু-কিশোর গ্যাং ও মাদকসেবী-বিক্রেতার দৌরাত্ম্য এলাকার বড় একটি সমস্যা।
সরেজমিন আরও দেখা যায়, ওয়ার্ডের একপাশজুড়ে রেললাইন থাকায় এলাকায় বড় একটি অংশে রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কলোনি। রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসবাসের জন্যই গড়ে তোলা হয়েছিল এসব কলোনি। শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে আবাসিক ভবন রয়েছে প্রায় ১০৮টি। এর মধ্যে অনেক ভবনই ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ভবনে যেসব কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে থাকার জন্য ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তাদের অধিকাংশ এখানে থাকেন না। আধুনিক ও বিলাসী জীবনযাপনের জন্য এসব কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের ফ্ল্যাট বাইরের লোকদের ভাড়া দিয়ে অন্যত্র আধুনিক ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। এদিকে বহিরাগতরা আবার এসব ভবনের আশপাশের জায়গায় টিনের চালা ও ফ্ল্যাটের প্রতিটি রুম পৃথক পরিবারকে অবৈধভাবে ভাড়া দিচ্ছে। কলোনির পরিবেশ পুরোটাই নোংরা ও স্যাঁতসেঁতে। যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ তৈরি করেছে ওইসব ভাড়াটিয়া। এতে শিশুরা খেলাধুলা ও চলাফেরা করতে পারছে না, বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তাদের সুষ্ঠু মানসিক বিকাশ।
কলোনিবাসীর অভিযোগ, কলোনির ভেতর ও আশপাশে গড়ে ওঠা ঝুপড়ি ঘরে সন্ধ্যার পরে বসে মাদকের আড্ডা এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ড। আর এসব নোংরা কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে চললেও কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেই। তাই শিক্ষিত জনসাধারণের বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে পুরো কলোনি। মাদক, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও দখলদারি সবই চলে ঢাকার শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে। আর প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাদের নাকের ডগায় অবলীলায় চলছে বিভিন্ন অপকর্ম। এলাকার দোকানপাটগুলোয় চলছে চাঁদাবাজি। এদিকে অবৈধ গ্যাসলাইন-গ্যাস সংকট ও ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ সংযোগসহ দূষিত পানির সমস্যা দীর্ঘদিনের বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর প্রয়াত মির্জা আসলাম আসিফের স্ত্রী ও শাহজাহানপুর স্থানীয় মহিলাদল নেত্রী শাম্মি আক্তার শেলী যুগান্তরকে বলেন, শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির সমস্যা সমাধানে আমি ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিলেও রেলওয় কর্তৃপক্ষ আমাকে সহযোগিতা করেননি। ডিএসসিসি এই ওয়ার্ডে কোনো ধরনের মশার স্প্রে করছে না। তবে ওয়ার্ডের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানে ওয়ার্ডবাসীকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে।
এ বিষয়ে ১১নং ওয়ার্ডের দায়িত্বরত সচিব কবীর উদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ওয়ার্ডে ছোটখাটো কিছু সমস্যা থাকলেও ডিএসসিসির উন্নয়নের কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়িত হলে এই ওয়ার্ডটি মডেল ওয়ার্ড হিসাবে পরিচিত হবে। তবে ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সব ধরনের সনদ প্রদানসহ নাগরিক সেবা প্রদান অব্যাহত রয়েছে।
নানা অপরাধের বিষয়ে শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহাঙ্গির হোসেন যুগান্তরকে বলেন, প্রতিনিয়ত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। রাতে শাহজাহানপুর রেলগেট কলোনি এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। থানা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
