বৃক্ষপ্রেমীদের গন্তব্য এখন আগারগাঁও
হক ফারুক আহমেদ
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কংক্রিকেটের রাজধানী ঢাকায় চোখ-জুড়ানো সবুজের দেখা মেলা ভার। তবুও সবুজ তো চাই। নিঃশ্বাসের জন্য, মন ভালো রাখার জন্য কিংবা প্রখর দৃষ্টিশক্তির জন্য। পার্কে বা উদ্যানে যাওয়ার সৌভাগ্যও সবার এখন হয় না। কর্মব্যস্ত জীবনে ফুরসত মেলে না অনেকের। তাই তো বাসার বারান্দায়, লনে, ছাদে কিংবা অফিসের ছোট্ট কম্পিউটার ডেস্কটায়ও চাই গাছ। অন্তত সচেতন মানুষ এবং বৃক্ষপ্রেমীরা সেভাবেই চিন্তা করেন। এসব মানুষদের গন্তব্য এখন এক জায়গাতেই। জাতীয় বৃক্ষমেলায়। সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত ছেলে-বুড়ো, তরুণ-তরুণী সবাই আসছেন এই মেলায়। সংগ্রহ করছেন পছন্দের ফলজ, বনজসহ নানান ধরনের গাছ। সময় কাটাচ্ছেন সবুজের সঙ্গে।
‘পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি’ স্লোগানে এবারের মেলার আয়োজন করেছে বন অধিদপ্তর। প্রতিবছরের মতো এবারও রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুরাতন বাণিজ্যমেলার মাঠে মাসব্যাপী বৃক্ষমেলা চলবে ২৪ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বৃক্ষমেলা চলছে। এবার মেলায় মোট ১৩৩টি স্টল রয়েছে। দেশের ছোট-বড় অনেক নার্সারি এতে অংশ নিয়েছে। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও অধিদপ্তরও মেলায় অংশ নিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন এবং কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন। মেলায় আগতদের সহায়তার জন্য আছে তথ্যকেন্দ্র, কন্ট্রোল রুম এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব স্টল। সোমবার সরেজমিন পরিবেশ ও বৃক্ষমেলায় গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন স্টলে শতাধিক প্রজাতির ফল, ফুল, ঔষধি ও শোভাবর্ধন গাছ পাওয়া যাচ্ছে। মৌসুমি ফল, দেশি-বিদেশি ফুল, বনসাই ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির অর্কিড, জৈবসার, আধুনিক সেচ পদ্ধতির যন্ত্রপাতি। ইনডোর প্ল্যান্ট ডেকোরেশনের জন্যও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন স্টল।
আম, কাঁঠাল, লিচু, ত্বীন, রাম্বুটান, থাই সফেদা, মিষ্টি লেবু, জয়তুন, বিলাতি গাব, আঙুর, রিভার লংগান, কদবেল, কালো আঙুর, নাশপাতি, কাগজি লেবু, আপেল, আন্না আপেল, কাঁঠাল, লাল কাঁঠাল, পেয়ারা, থাই পলি পেয়ারাসহ নানারকম ফলের গাছ ও চারার সমারোহ ঘটেছে সেখানে। আছে গোলাপ, জবা, বেলি, কামিনী, গন্ধরাজ, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়াসহ দেশি-বিদেশি ফুলের গাছের বাহার। আছে এলাচি, লবঙ্গ, গোলমরিচ, জিরার গাছও।
মাত্র ৫০ টাকা থেকে শুরু করে কয়েক লাখ টাকা দামের শৌখিন গাছ শোভা পাচ্ছে এবারের বৃক্ষমেলায়। বিশেষ করে যারা বাড়ির ছাদে বাগান করেন তারা কিনছেন ফল-ফুলের বিভিন্ন গাছ। এবারের বৃক্ষমেলায় অংশ নিয়েছে বরিশাল নার্সারি, হোসেন নার্সারি, আশুলিয়া গার্ডেন, কৃষিবিদ উপকরণ নার্সারির মতো খ্যাতনামা নার্সারিগুলো। আছে উইনার নার্সারি, উত্তরা ভাই ভাই নার্সারি, চাঁদনি নার্সারি, পপি নার্সারিসহ আরও অনেক নার্সারি। ধানমন্ডি থেকে আসা আসমা আক্তার যুগান্তরকে বলেন, বৃক্ষমেলায় এলে এমন কিছু গাছের চারা পাওয়া যায় যেটা অনেক সময় অনেক নার্সারিতে খুঁজে পাওয়া যায় না। আর এত এত গাছ দেখলেও ভেতরে একটা আরাম আর শান্তি অনুভব হয়। উত্তরা থেকে আসা মাকসুদুল জামিল যুগান্তরকে বলেন, উত্তারাতেও বেশ কিছু নার্সারি আছে। কিন্তু এখানে এসেছি ছাদবাগানের জন্য ভালো মানের বারোমাসি ফলের চারা কিনতে। মেলাতে এলে দেখেশুনে-বুঝে কেনা যায়। বেশকিছু চারা ইতোমধ্যে সংগ্রহ করেছি। সেগুলো গাড়িতে আছে। আরও কিছু চারা সংগ্রহ করে বাড়ি ফিরব।
বৃক্ষমেলায় তথ্যকেন্দ্রে কর্তব্যরত বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা শাকিলা নার্গিস যুগান্তরকে জানান, বৃক্ষমেলায় প্রতিদিনই লোকসমাগম বাড়ছে। বিশেষ করে বিকাল ও সন্ধ্যার দিকে তা বেশি হয়। গত ২৫ থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত মেলায় মোট বিক্রীত চারার সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৬৮টি। এই সময় পর্যন্ত বিক্রীত টাকার পরিমাণ ১ কোটি, ২ লাখ, ৬১ হাজার, ৮৯৮ টাকা।
