ওয়ার্ড পরিক্রমা (উত্তর সিটি) ১১ নম্বর ওয়ার্ড : স্থবির হয়ে আছে সড়ক উন্নয়ন
ভোগান্তি শেষ নেই এলাকাবাসীর
রয়েছে বাসাবাড়িতে রান্নার গ্যাসের তীব্র সংকট * বাড়ছে বেওয়ারিশ কুকুর ও মশার উপদ্রব
মিরপুর ও শাহআলী (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ভাঙাচোরা সড়ক উন্নয়ন কাজে ধীরগতির কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসিন্দারা। বিশেষ করে সড়ক ও ড্রেনেজ উন্নয়ন কাজের জন্য বড় বড় গর্ত ও মাটি খুঁড়ে রাখায় যানজটসহ নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। এলাকাটি সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত হলেও এখনো শতভাগ নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়নি বলে জানান স্থানীয়রা। এ ওয়ার্ডের কল্যাণপুর খালের অবৈধ দখল ও দূষণে প্রতি বছর বর্ষায় বেশিরভাগ সড়কে পানি ওঠে। এছাড়া ওয়ার্ডের অভ্যন্তরীণ সড়কে অবৈধ বাজার ও পিকআপ স্ট্যান্ড বসিয়ে একটি বড় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওয়ার্ডটিতে ক্রমশ বাড়ছে বেওয়ারিশ কুকুর ও মশার উপদ্রব। একইসঙ্গে গ্যাসের তীব্র সংকটে বাসাবাড়িতে রান্নার কাজ অনিয়মিত হয়ে গেছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে এ ওয়ার্ডের অধিকাংশ রাস্তা সরু। নির্মিত হয়েছে রাজউকের নকশাবহির্ভূত শত শত বহুতল ভবন। কোথাও কোথাও সড়ক এত সরু যে একটি প্রাইভেট কারও চলতে পারে না। তাই এলাকার প্রধান যানবাহন হয়ে উঠেছে সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী অটোরিকশা ও ইজিবাইক। আর অদক্ষ চালকরা এসব নিষিদ্ধ যান চালান বলে হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা। এখানকার গ্রীলের মোড়, দক্ষিণ পাইকপাড়া, পুরাতন কাজী অফিসের গলি, কমিশনার রোড, লাল ওয়ালের রোড ও মধ্য পাইকপাড়া এলাকায় সড়ক ও ড্রেনেজের ধীরগতির উন্নয়ন কাজে ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। মাটি খুঁড়ে স্তূপাকারে নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে রাস্তার মাঝামাঝি অংশে। দক্ষিণ পাইকপাড়া ও পুরাতন কাজী অফিসের গলির সড়কটিতে দীর্ঘদিন ধরে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ স্লাব দিয়ে রাখা হয়েছে। রাস্তা থেকে ড্রেনের মাটি উঁচু হওয়ায় যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এ জন্য এলাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘপথ ঘুরে চলাচল করতে হয়। সড়কগুলোতে এত সমস্যার মধ্যেও ভ্যানগাড়িতে রাস্তা দখল করে অস্থায়ী দোকানপাট বসিয়েছেন হকাররা। এতে সংকুচিত সড়কে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়েন এলাকাবাসী। অন্যদিকে প্রাইমারি স্কুলের গলি, শহীদ মিনার মাঠ, সরকারি বাঙলা কলেজ থেকে কল্যাণপুর নতুন বাজার পর্যন্ত রাস্তার কাজ দীর্ঘদিন ধরা হয়নি। সড়কগুলোর পিচ উঠে গিয়ে খানাখন্দে ভরে গেছে। অনেক জায়গায় স্লাব ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলে এসব গর্তে পানি জমে মশার উপদ্রব বাড়ে। দক্ষিণ পাইকপাড়া থেকে কল্যাণপুর নতুন বাজারের সড়কের অবস্থা বড়ই করুণ। পাশাপাশি প্রাইমারি স্কুলের গলি ও শহীদ মিনার সড়কের এমনই বেহালদশা যে, রিকশা আর গাড়ি চলা তো দূরের কথা, হেঁটে চলাও মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাইকপাড়া ৩ নম্বর রোড (সাততলা গলি) অবৈধ দখলের কারণে অনেকটা সরু হয়ে গেছে। সোনালী নগর ও দক্ষিণ পাইকপাড়া দোতলা মসজিদের পশ্চিম পাশে সড়কের ওপর বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায় ওই এলাকার বাসিন্দাদের ভোগান্তির শেষ নেই। একদিকে নির্মাণসামগ্রী, অন্যদিকে বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায় সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বেকারি মোড়ের পাশে ১০ নম্বর সড়কটি একেবারেই সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি দুটি রিকশা একসঙ্গে চলাচলের উপায় নেই। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে অ্যাম্বুলেন্স কিংবা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না। অন্যদিকে সরকারি বাঙলা কলেজ থেকে কল্যাণপুর নতুন বাজার পর্যন্ত অবৈধ পিকআপ স্ট্যান্ড ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার উৎপাত থাকায় এ সড়কে দিনভর যানজট থাকে। এছাড়া ওয়ার্ডের অনেক জায়গায় সড়কবাতি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চুরি-ছিনতাই বেড়েছে। কল্যাণপুর খালসংলগ্ন সড়কে বেশিরভাগ সড়ক বাতি নষ্ট ও চুরি হয়ে যাওয়ায় এক ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এ সুযোগে মাদক কারবারিরা নির্বিঘ্নে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে পাইকপাড়া মেইন রোডে অস্থায়ী বাজারের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগে পড়েন এলাকাবাসী।
জলাবদ্ধতা এ ওয়ার্ডের অন্যতম সমস্যা। দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও কল্যাণপুর খাল বেদখল ও ময়লা আবর্জনায় ভরে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই মহল্লার প্রধান সড়কসহ শাখা সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে তাজলেনের মোড়, আনসার ক্যাম্প মেইন রোড, সোনালী নগর, বটতলা ঝিলপাড় এলাকায় বৃষ্টি হলে দীর্ঘসময় পানি জমে থাকে। খালটিকে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করার পাশাপাশি এর দুই পাড় দখল করে বাড়িঘর, রিকশার গ্যারেজ ও বিভিন্ন সংগঠনের কার্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, বৃষ্টি হলে প্রতিটি রাস্তায় হাঁটু সমান পানি উঠে। অফিস-আদালত কিংবা শিশুদের স্কুলে আনা-নেওয়ায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের। ডিএনসিসির ১১নং ওয়ার্ড সচিব যুবায়ের বলেন, এই ওয়ার্ড এলাকায় আমাদের স্থায়ী কার্যালয় না থাকায় মিরপুর ১০ নম্বর জোনাল অফিস থেকে ওয়ার্ডবাসীকে সেবা দিতে হচ্ছে। এখান থেকেই ১১নং ওয়ার্ডবাসীকে বিভিন্ন সনদ দেওয়া হয় আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে। তবে ওয়ার্ডের উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় মানুষের সাময়িক কষ্ট হচ্ছে। তবে এর সুফল আগামীতে পাওয়া যাবে। বিএনপি নেতা ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামীম পারভেজ বলেন, ওয়ার্ডে শতভাগ নাগরিক সুবিধা প্রতিষ্ঠা করা হবে বিএনপি সরকার এলে। পাশাপাশি ওয়ার্ডটিতে চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চান বিএনপির নেতাকর্মীরা।
