ওয়ার্ড পরিক্রমা (দক্ষিণ সিটি): ১২ নম্বর ওয়ার্ড
অপরিকল্পিত বাজারে ভোগান্তি
গ্যাস সংকট ও ওয়াসার পানির সমস্যায় বিপর্যস্ত জনজীবন * রেললাইনের পাশে ঝুঁকিপূর্ণ দোকানপাট
ডেমরা ও সবুজবাগ (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নজরদারি না থাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ১২ নম্বর ওয়ার্ডে রেললাইনের পাশে বসানো হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ দোকানপাট। রেলওয়ের জায়গা দখল করে এসব দোকানপাট বসিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। একইসঙ্গে ওই রেললাইনের পাশেই আবর্জনা ফেলে রেখে পরিবেশ নোংরা করা হচ্ছে। দু’পাশে ঝুঁকিপূর্ণ ঝুপড়ি ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন মানুষ। এছাড়া অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে কিছু বাজার। এসব বাজারে রাস্তার ওপরও দোকান বসানো হয়েছে।
ডিএসসিসির অবহেলিত এ ওয়ার্ডে অপ্রশস্ত ভাঙ্গাচোড়া সড়ক, ঘিঞ্জি পরিবেশে মানুষের বসবাস, সীমাহীন গ্যাস সংকট, বিদ্যুতের লোডশেডিংসহ ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগ, ওয়াসার দুর্গন্ধযুক্ত পানি সরবরাহ, সুপেয় পানির অভাব, সামান্য বৃষ্টিতে সড়কে জলাবদ্ধতা, কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য, পথশিশুদের দিয়ে মাদক বিক্রিসহ নানা সমস্যা রয়েছে।
ওয়ার্ড পরিচিতি : ঢাকার শাহজাহানপুর থানাধীন আয়তনে ছোট একটি এলাকা ডিএসসিসির ১২ নম্বর ওয়ার্ড। ঢাকা মহানগরের মালিবাগ বাজার রোড, (মতিঝিল অংশ), মালিবাগ, বকশীবাগ, গুলবাগ, শান্তিবাগ, ইন্দ্রপুরী এলাকা নিয়ে গঠিত এ ওয়ার্ড। ওয়ার্ডটি ডিএসসিসির অঞ্চল-২ আঞ্চলিক কার্যালয় ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ঢাকা-৮ আসনের অন্তর্ভুক্ত। রেললাইনের একপাশে রয়েছে ডিএসসিসির বাজার, যেটি মালিবাগ বাজার নামে পরিচিত ও এলাকাবাসীর একমাত্র বাজার।
সরেজমিন দেখা গেছে, মালিবাগ বাজারের একপাশে অবৈধভাবে রেলওয়ের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকানপাট। আর এসব দোকানপাটে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করা হয়। এতে সাধারণ মানুষের যাতায়াত এখানে অনেক বেশি। ট্রেনের যাতায়াতের সময় মারাত্মক ভয়ের মধ্যে থাকেন ওইসব দোকানে আসা মানুষ। রেললাইনের আরেক পাশে আবর্জনা ফেলে নোংরা পরিবেশের সৃষ্টি করা হয়েছে। এখানে অপরাধীদের বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। এদিকে, গুলবাগ ইন্দ্রপুরী সড়কের প্রথমেই অসংখ্য ছোট ছোট রিকশার গ্যারেজ ও ছোট ছোট ঘুপচি ঘর করা হয়েছে। বিশেষ করে ওইসব রিকশার গ্যারেজের কর্মরত মানুষ ও রিকশা চালকরা ওই ঘরগুলোতে বসবাস করেন। এসব ঘর আবার রেললাইনের পাশেও গড়ে উঠেছে। যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। এদিকে ওয়ার্ডের রিকশার গ্যারেজ ও রেললাইনের পাশে গড়ে ওঠা বসতগুলোতে মাদকসেবী ও বিক্রেতাদের নিরাপদ অভয়ারণ্য বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওয়ার্ডের মালিবাগ রেলগেট বাজারটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার বা কোনো পরিকল্পিত উন্নয়ন করা হয়নি। বাজারটিতে একদিকে নোংরা পরিবেশ, অন্যদিকে চারপাশে দুর্গন্ধে ভরা। বাজারে প্রবেশ ও বের হওয়ার সুষ্ঠু কোনো পরিবেশ নেই। এখানকার মাছপট্টি, মুরগিপট্টি, ফলপট্টি, মুরগি-মাংস পট্টি ও কাঁচাবাজারসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকানপাটগুলোতে কোনো প্রকার সমন্বয় নেই। অথচ ওয়ার্ডের একমাত্র বাজার হওয়ায় এখানেই বাজার করতে হচ্ছে ওয়ার্ডবাসীকে। এক্ষেত্রে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
ডিএসসিসির ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সচিব মো. মুক্তার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এই ওয়ার্ডের অবস্থা অন্য ওয়ার্ডের চেয়ে অনেকাংশে ভালো। এটি একটি আবাসিক এলাকা। এখানে অন্য জটিলতা কম থাকায় এলাকার মানুষের জন্য দাপ্তরিক সুবিধাগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করতে আমি প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, প্রতিনিয়ত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। রাতে শাহজাহানপুর রেললাইন এলাকায় পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। থানা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও নানা অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশ নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
