Logo
Logo
×

রাজধানীর খবর

ওয়ার্ড পরিক্রমা (দক্ষিণ সিটি): ১৩ নম্বর ওয়ার্ড

ফুটপাতে দোকানপাট

ক্রমেই বাড়ছে মাদকের আগ্রাসন, পথশিশু ও কিশোর গ্যাং দৌরাত্ম্য * সড়ক ও ফুটপাত দখল করে বসানো হয়েছে স্থায়ী-অস্থায়ী দোকানপাট

Icon

ডেমরা ও সবুজবাগ (ঢাকা) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকায় সড়কের দুপাশ ও ফুটপাত দখল করে বসানো হয়েছে স্থায়ী-অস্থায়ী বিভিন্ন দোকানপাট। এতে প্রতিনিয়ত ব্যাহত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল, বাসিন্দারা শিকার হচ্ছেন নানা প্রতিবন্ধকতার। এদিকে প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় ওয়ার্ডটিতে ক্রমেই বাড়ছে মাদকের আগ্রাসনসহ পথশিশু ও কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় প্রতিনিয়ত চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও ইভটিজিংসহ নানা অপরাধ যেন বেড়েই চলেছে ওয়ার্ডটিতে। একইসঙ্গে স্থানীয় বাড়িওয়ালারা নীরব চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে ভুক্তভোগীদের। ওয়ার্ডটিতে গ্যাস ও ওয়াসার পানির সংকটসহ ক্রমেই বাড়ছে মশার উপদ্রব।

এদিকে ওয়ার্ডটিতে সরকারি বা ডিএসসিসির কোনো বাজার না থাকায় এলাকাবাসী পড়েছেন চরম বিপাকে। সরকারি বাজার না থাকায় অস্থায়ী বাজার থেকে চড়াদামে দ্রব্যমূল্য ক্রয় করতে হয় বাসিন্দাদের। এছাড়া অপরিকল্পিত অস্থায়ী ওইসব বাজারের নোংরা পরিবেশ ও সরু রাস্তা মানুষের চরম ভোগান্তির অন্যতম কারণ বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের। ওয়ার্ডটিতে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে অফিস ভাড়া নিয়ে নামে-বেনামে রিক্রুটিং এজেন্সি, এমএলএম ব্যবসায়ী, বিভিন্ন কোম্পানির নামে প্লট, ফ্ল্যাট ও জমি ক্রয়-বিক্রয়ের দালালরা। প্রতিনিয়ত সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছেন অনেকেই। আর প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় অফিস ভাড়া নিয়ে তারাও করছেন জমজমাট ওইসব ব্যবসা।

ওয়ার্ড পরিচিতি: ডিএসসিসির ১৩ নম্বর ওয়ার্ডটি ঢাকা মহানগরের চামেলীবাগ, আমিনবাগ, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পুরানা পল্টন, জিপিও, বায়তুল মোকাররম, স্টেডিয়াম, (সুইমিং পুল, স্পোর্টস কাউন্সিল), আউটার স্টেডিয়াম, বিজয়নগর, নয়াপল্টন, পুরানা পল্টন লেন, ট্রাফিক পুলিশ ব্যারাক, পুলিশ হসপিটাল ও সি এন্ড বি মাঠ এবং শান্তিনগর এলাকা নিয়ে গঠিত। ওয়ার্ডটিতে ভোটার সংখ্যা ৮০ হাজার হলেও প্রায় ৩ লাখ মানুষের বসবাস এখানে। এটি অঞ্চল-২ আঞ্চলিক কার্যালয় ও সংসদীয় ঢাকা-৮ আসন অন্তর্ভুক্ত। ওয়ার্ডটি ঢাকার শান্তিনগর ও পল্টন মডেল থানায় কিছু অংশ নিয়ে অবস্থিত। এখানে বসবাসরত নাগরিকদের মধ্যে অধিকাংশই ব্যবসায়ী ও সরকারি চাকরিজীবী। আর সেই সুবাদেই অত্র এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য আধুনিক বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন।

সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এ ওয়ার্ডটিতে রয়েছে সরকারি রাজারবাগ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বধির সরকারি স্কুল, নিধু সিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পরিবার পরিকল্পনা স্কুল, স্কাউট ভবন, জাতীয় স্টেডিয়াম, হকি স্টেডিয়াম, হ্যান্ডবল স্টেডিয়াম ও বিএনপি অফিসসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। পাশাপাশি এখানে গড়ে উঠেছে নামজাদা অনেক মার্কেট, শপিংমল, তিন ও পাঁচ তারকা মানের আবাসিক হোটেলসহ বহু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। অথচ ভিআইপি এ ওয়ার্ডের বায়তুল মোকাররম, নয়াপল্টন, আউটার স্টেডিয়াম, দৈনিক বাংলা মোড় আংশিক, পুরানা পল্টন জিপিও, বিজয়নগর অভ্যন্তরীণ সড়ক ও শান্তিনগর বাজার এলাকাসহ প্রায় প্রতিটি এলাকার প্রধান ও অভ্যন্তরীণ সড়ক-ফুটপাত দখল করে বসানো হয়েছে স্থায়ী-অস্থায়ী বিভিন্ন দোকানপাট। এতে ওইসব সড়কে প্রতিনিয়ত ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক চলাচল। একইসঙ্গে নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হন বাসিন্দারা। এদিকে অভিজাত এলাকা বলে বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে কতিপয় বিভিন্ন কোম্পানির নামে-বেনামে অফিস ভাড়া নিয়ে সেবাপ্রত্যাশীদের সঙ্গে নানা প্রতারণা করে আসছে বলে অনেক অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে নয়াপল্টনের এক বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এ এলাকায় প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় অসংখ্য রিক্রুটিং এজেন্সি ও এমএলএম অফিসসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে যেগুলোর কোনো লাইসেন্স নেই। বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সি ও কোম্পানির ভায়া হয়ে ওই এলাকায় অসাধুরা ব্যবসা করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের চাকচিক্যময় অফিসটিই কেবল পুঁজি। প্রতিনিয়ত শত শত লোক বিদেশ যাওয়ার নামে প্রতারিত হচ্ছেন এসব ব্যবসায়ীর দ্বারা। আর এদের আবার শেল্টার দিচ্ছেন কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা বা স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের কাছে বিচার চেয়েও কোনো সমাধান পায় না। সরেজমিন আরও দেখা গেছে, ওয়ার্ডটিতে ডিএসসিসির নির্ধারিত কোনো বাজার না থাকায় একটি সমিতিভিত্তিক শান্তিনগর ও চামেলীবাগ বউবাজার বাসিন্দাদের ভরসা।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির ১৩ নম্বর ওয়ার্ড সচিব মো. মোক্তার হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এ ওয়ার্ডটি বাণিজ্যিক এলাকা। এখানে আবাসিক এলাকা তুলনামূলক কম। ওয়ার্ডের অবস্থা ভালো। মানুষের কাজে যাতে দুর্ভোগে না পড়তে হয় সেদিকে খেয়াল রেখে আমি আমার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। অন্যান্য সমস্যা আমার এখতিয়ারের বাইরে।

এ বিষয়ে পল্টন মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী মো. নাসিরুল আমিন যুগান্তরকে বলেন, সব রাজনৈতিক দলের প্রধান কার্যালয় এ ওয়ার্ডে। আবার অনেক দলের প্রধান কার্যালয় এলাকায় না থাকলেও দলীয় কার্যক্রম, মিটিং-মিছিল এ এলাকায়ই করে। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর দলীয় কার্যক্রম এখানে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের ডিউটির অধিকাংশ সময়ই চলে যায় এসব রাজনৈতিক দলের পেছনে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম