ওয়ার্ড পরিক্রমা (উত্তর সিটি): ১৫ নম্বর ওয়ার্ড
সড়ক ফুটপাত অবৈধ দখলে
অধিকাংশ রাস্তা ভাঙাচোরা হওয়ায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অনেক জায়গায় নেই সড়কবাতি। চরম দুর্ভোগে পড়ছেন স্থানীয়রা
মিরপুর (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের অবৈধ অটোরিকশা, ইজিবাইক ও মিশুকের দৌরাত্ম্যে এলাকাবাসী জিম্মি হয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি মিরপুর ১৪ নম্বর থেকে ভাষানটেক বাজার পর্যন্ত প্রধান সড়কটির দুপাশে দখল করে অবৈধ দোকানপাট, বাসস্ট্যান্ড, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি, মাদক বিক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণহীন দৌরাত্ম্য ও সড়কে ভ্যানের মাধ্যমে দোকান বাসিয়ে প্রতিবন্ধতার সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ ছাড়া ওয়ার্ডের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম ইব্রাহিমপুর ও মাটিকাটা খাল দখল-দূষণে ভরে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে অভ্যন্তরীণ নিচু এলাকা জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত থাকে। এ ওয়ার্ডের অধিকাংশ রাস্তা ভাঙাচোরা হওয়ায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অনেক জায়গায় সড়কবাতি নেই। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন স্থানীয়রা।
যত্রতত্র আবর্জনার ছড়াছড়ি, অনুমোদনহীন বহুতল ভবন, ওয়াসার পানির সংকট, বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাত ও মাদক সমস্যায় বসবাসের উপযোগিতা হারাচ্ছে ডিএনসিসির এ ওয়ার্ড।
এ ওয়ার্ডে তিনটি বড় বস্তি রয়েছে। বস্তিগুলোর চার পাশের পরিবেশ নোংরা ও ময়লা আবর্জনায় ভরা। বস্তিসংলগ্ন সড়কগুলোতে ময়লা আবর্জনার স্তূপ জমে মশার প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এসব বস্তিতে অবৈধ বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগ রয়েছে। অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের কারলে কদিন পরপরই বস্তিগুলোতে আগুন লাগে। পাশাপাশি অপরাধীদের আখড়া এসব বস্তি। বস্তিকে কেন্দ্র করে ওয়ার্ডের আনাচে কানাচে মাদক বিক্রি হয়।
বস্তিকেন্দ্রিক কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপও রয়েছে। কয়েকজন বস্তিবাসী জানান, মাদক বিক্রির কারণে উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে ভাষানটেক, ধামালকোট ও লালারসরাই এলাকার বস্তিগুলো মাদক বিস্তারে বড় ভূমিকা পালন করছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, মিরপুর ১৪ নম্বর ডেন্টাল কলেজ থেকে ভাষানটেক বাজার পর্যন্ত সড়কটি অবৈধ দখলে চলে গেছে। সড়কটির দুপাশ দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন দোকানপাট। ফেলে রাখা হয়েছে বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী। ১২০ ফিটের সড়কটির কোথাও কোথাও ৮০ ভাগই দখল হয়ে গেছে। এতে অপ্রশস্ত সড়কে প্রতিনিয়ত যানজটসহ নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক ও মিশুকের দৌরাত্ম্যে ব্যাহত হয় মানুষের স্বাভাবিক চলাচল।
এখানকার গুটিকয়েক সড়কে দৃশ্যমান কিছু উন্নয়ন কাজ হলেও বেশির ভাগ সড়কের অবস্থা খুবই নাজুক। দেওয়ান পাড়া থেকে কুয়েতি মসজিদ হয়ে মাটিকাটা সড়ক, দেওয়ান পাড়া লিটল চাইল্ড স্কুল থেকে মোল্লা টাওয়ার, টোনারটেক থেকে মাটিকাটা খাল, ইসিবি চত্বর থেকে বালুঘাট বাজার হয়ে কালীবাড়ি সড়ক, দক্ষিণ মানিকদি নুরানী মসজিদ সড়ক, বাড়নটেক, বাইগারটেক ও দেওয়ান পাড়া দ্বীন মোহাম্মদ কলোনিসহ বেশ কয়েকটি সড়ক ভেঙেচুরে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, ইসিবি চত্বর থেকে বালুঘাট বাজার হয়ে কালীবাড়ি পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটারের সড়কটি বেশ কয়েক বছর ধরে বেহাল। ওয়ার্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটিতে অবৈধ দখলের পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক ও মিশুকের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। সড়কটি সংস্কার হলে ইসিবি থেকে উত্তরা ৩নং সেক্টর (জসীমউদ্দিন) যেতে কয়েক মিনিট সময় লাগবে।
ইব্রাহিমপুর খাল ও মাটিকাটা খাল সঠিক নজরদারির অভাবে দখল ও দূষণের কবলে পড়েছে। খালগুলোতে নেই পানির সঠিক প্রবাহ। খাল দখল করে প্লট বাণিজ্য ও বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে প্রভাবশালীরা। ডিএনসিসির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জহির বলেন, আমি কাউন্সিলর থাকা অবস্থায় বেশ কিছু রাস্তাঘাট মেরামত করেছি। জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে নানামুখী তৎপরতা চালানো হয়েছে। মানুষ এখনো তাদের সমস্যা নিয়ে আমাকে ফোন করে। তাদের উপকারে সাধ্যমতো চেষ্টা করছি । ডিএনসিসি অঞ্চল-২ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, ডেন্টাল কলেজের সড়কে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি। দরকার হলে খোঁজখবর নিয়ে আবারও অভিযানে যাব। এ ছাড়া রাস্তাঘাট ও জলাবদ্ধতাসহ অন্যান্য সমস্যা নিয়ে কারও অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।
