ওয়ার্ড পরিক্রমা (উত্তর সিটি) : ১৭ নম্বর ওয়ার্ড
নাগরিক সুবিধা আজও অধরা
গ্যাস-পানির সংকট, মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ মানুষ * সড়ক-ফুটপাতে অবৈধ যানবাহন স্ট্যান্ড, চলাচলে প্রতিবন্ধকতা
নাজমুল হক, ভাটারা ও মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, ডেমরা (ঢাকা)
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৭নং ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ প্রধান সব সড়ক ও ফুটপাত দখল করে অবৈধ যানবাহন স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। একই সঙ্গে অধিকাংশ ফুটপাত ও রেললাইনের দু’পাশ দখল করে স্থাপন করা হয়েছে সারিবদ্ধ স্থায়ী-অস্থায়ী দোকানপাট। ব্যস্ততম সড়কের দু’পাশ দখল করে গড়ে উঠেছে বাস-ট্রাক, ছোট-মাঝারি পিকআপ, প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত নিষিদ্ধ অটোরিকশা-ইজিবাইক স্ট্যান্ড। আর এসব গড়ে তুলেছে এলাকার কিছু অসাধু প্রভাবশালী ও স্থানীয় চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট। এতে প্রতিদিন ওয়ার্ডটির ওইসব সড়কে চলাচলকারী লাখো পথচারীর ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
এদিকে ওয়ার্ডটিতে দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার কারণে মাঝারি বর্ষণেই তলিয়ে যায় নিচু সড়ক ও নিম্নাঞ্চল। ওয়ার্ডের আবাসিক খালি প্লটগুলোতে গৃহস্থালির আবর্জনা, চিপসের প্যাকেটসহ নানা প্যাকেটজাত বর্জ্য, ডাবের খোসা ও বিভিন্ন প্রকার বর্জ্য পড়ে থাকে বলে এখানে সহজেই মশা জন্মায়। মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এ ছাড়া গ্যাস ও ওয়াসার পানির চরম সংকট, মাদক-সন্ত্রাসের আগ্রাসন বৃদ্ধি, নীরব চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং ও বিপথগামী পথশিশুদের দৌরাত্ম্য এবং জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত জনজীবন। ওয়ার্ডটিতে আজও শতভাগ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়নি বলে নাগরিক সেবার মান বর্তমানে তলানিতে।
ওয়ার্ড পরিচিতি : ডিএনসিসির ১৭নং ওয়ার্ডটি মহানগরের খিলক্ষেত, নিকুঞ্জ ১ ও ২, কুড়িল, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, কুড়াতলী, জোয়ার সাহারা, জগন্নাথপুর ও লেকসিটি এলাকা নিয়ে গঠিত। এটি রাজধানীর ভাটারা ও খিলক্ষেত থানার আংশিক অন্তর্ভুক্ত এলাকা। সংসদীয় আসন ঢাকা-১১ ও ১৮ এবং ডিএনসিসি অঞ্চল-১ আঞ্চলিক কার্যালয়ের অধিভুক্ত এই ওয়ার্ড। ওয়ার্ডটিতে ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ১৮ হাজারের বেশি হলেও এখানে ৫ লাখ মানুষের বসবাস। এর আয়তন ৫.৪৭ বর্গকিলোমিটার। ওয়ার্ডটির একদিক যেমন ঢাকার অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হিসাবে পরিচিত, কিছু অংশ আবার সুশৃঙ্খল অভিজাত এলাকা হিসাবেও পরিচিত।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ওয়ার্ডটির সবচেয়ে ব্যস্ততম ৩০০ ফিট সড়ক সংলগ্ন কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচসহ পার্শ্ববর্তী সড়কগুলোতে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন যানবাহনের স্ট্যান্ড। পার্কিং করা রয়েছে প্রাইভেট কার, ছোট-মাঝারি পিকআপ, বাস-ট্রাক, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত নিষিদ্ধ অটোরিকশা-ইজিবাইকসহ ছোট-বড় বিভিন্ন যানবাহন। বিশেষ করে কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা ও সড়কের দু’পাশ দখল করে অবৈধ পিকআপ, বাস ও ট্রাক স্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন যানবাহন স্ট্যান্ড করায় এখানে চলাচলকারী লাখো মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে।
একই চিত্র দেখা গেছে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কাজিবাড়ী এলাকা পর্যন্ত। এদিকে ওয়ার্ডের অভ্যন্তরীণ কুড়াতলি, নামাপাড়া, খিলক্ষেত রেলগেটের পার্শ্ববর্তী এলাকায়ও অবৈধ পার্কিং ও বিভিন্ন স্থায়ী-অস্থায়ী দোকানপাট গড়ে তোলা হয়েছে। ৩০০ ফিট রাস্তার কাছে ফুটপাতের ওপরেই গাড়ির সার্ভিসিংয়ের কাজ করা হয়। শুধু তা-ই নয়, রাস্তার ওপরই গড়ে তোলা হয়েছে গাড়ি মেরামতের গ্যারেজ। এতে ফুটপাত ধরে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পথচারীসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের। ৫ আগস্ট-পরবর্তী প্রশাসন ও ট্রাফিক বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় এখানকার কিছু অসাধু ব্যক্তি ওয়ার্ডটিতে স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করেছে।
কুড়াতলির স্থানীয় বাসিন্দা সজীব পারভেজ যুগান্তরকে বলেন, গত ৫ আগস্টের পর পুলিশি কার্যক্রম কিছুটা ঢিলেঢালা থাকার কারণে ওয়ার্ডটিতে মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। চিহ্নিত কিছু কিছু জায়গায় ছিনতাই এবং কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। এলাকায় ভাসমান ভ্যান বসিয়ে ও ফুটপাতে দোকান বসিয়ে রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি শুরু করেছে দুর্বৃত্তরা।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, ডিএনসিসির ১৭নং ওয়ার্ডবাসী নানা সমস্যায় জর্জরিত। এখানকার অভিজাত এলাকায়ও রয়েছে নানা সংকট-সমস্যা। প্রতিটি এলাকায় গ্যাস ও ওয়াসার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বর্ষাকালে ওয়ার্ডের নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। খিলক্ষেতের নামাপাড়া, কুড়িল, কাজিবাড়ী, বসুন্ধরার জি ব্লক এবং কুড়াতলায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। অভ্যন্তরীণ এলাকাগুলোতে গ্যাস সংকট, বিশুদ্ধ পানির সমস্যা, যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ, মশা-মাছির উপদ্রব, বেওয়ারিশ কুকুর, অকেজো সড়কবাতি, যানজট ও অবৈধ দখলে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন বাসিন্দারা।
ওয়ার্ডটির অভিজাত এলাকার বাসিন্দা ইসরাত জাহান উর্মি যুগান্তরকে বলেন, বর্তমানে তিতাস গ্যাসের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। সকাল ৬টায় গ্যাস চলে যায়, আসে রাত ১২টা বা ১টায়। পাশাপাশি মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা।
ডিএনসিসির ১৭ নম্বর ওয়ার্ড সচিব নূর ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের এই ওয়ার্ডে সিটি করপোরেশনের স্বাভাবিক সব কার্যক্রম পরিচালনায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। পরিচ্ছন্ন কর্মসূচি, মশক নিধন ও সড়ক বাতি সচল রাখাসহ স্বাভাবিক সব কার্যক্রম সচল রয়েছে। সম্প্রতি ম্যানহোলের ঢাকনা চুরির বড় সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন প্রকার নাগরিক সনদ প্রদান অব্যাহত রয়েছে।
খিলক্ষেত থানার ওসি মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমি নিজেও দেখেছি কুড়িল ফ্লাইওভার ও আশপাশের রাস্তায় ট্রাক ও পিক-আপসহ বিভিন্ন যানবাহন পার্কিং করে রাখা হয়। এগুলোতে আমাদের কোনো অনুমোদন নেই। অনুমোদন দূরের কথা এসবের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
