শহীদ আব্দুল আলিম ঈদগাহ
মাঠ ঘিরে অর্ধশতাধিক অবৈধ দোকান
মো. জহিরুল ইসলাম, হাজারীবাগ (ঢাকা)
প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
লালবাগ থানাধীন ঢাকেশ্বরী রোডে অবস্থিত শহীদ আব্দুল আলিম ঈদগাহ মাঠ একসময় ছিল খেলাধুলার প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু বর্তমানে এই মাঠ দখল, অব্যবস্থাপনা, অপরিচ্ছন্নতা এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডের আখড়া হয়ে উঠেছে। মাঠে নেই কোনো তদারকি বা নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ। অধিকাংশ লাইট নষ্ট, বাকি লাইটগুলোও আলো কম হওয়ায় মাঠের অনেক অংশ অন্ধকারে ঢাকা পড়ে থাকে। সন্ধ্যার পর মাঠজুড়ে শুরু হয় অপরাধীদের আড্ডা, মাদকসেবন, আর মাঠের ভেতরে ও বাইরে পাশের ফুটপাত বরাবর গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশতাধিক অবৈধ দোকানপাট। ফুটপাত ও আশপাশে গাড়ি পার্কিং, প্লাস্টিকের আবর্জনা, দুর্গন্ধ ও ধুলাবালি জমে থাকার কারণে এলাকাবাসী বলছেন, এটি আর কোনো খেলার মাঠ নয়; বরং এক অঘোষিত বস্তি কিংবা মেলার মতো জায়গায় পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যার পর মেলা আরও জমে ওঠে।
কয়েকদিনের সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকেশ্বরী রোডসংলগ্ন শহীদ আব্দুল আলিম ঈদগাহ মাঠ এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত অরিয়েন্ট স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠের অবস্থা খুবই বেহাল। মাঠে নিয়মিত খেলাধুলা বা ক্রীড়াচর্চা থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচ্ছন্নতার কোনো কার্যক্রম দেখা যায় না। স্থানীয়রা জানায়, পূর্বের সরকারের আমলে অরিয়েন্ট স্পোর্টিং ক্লাবের কার্যক্রম থাকলেও ৫ আগস্টের পর থেকে তাদের কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। মাঠটি এখন ছেঁড়া জালের বাউন্ডারি দিয়ে ঘেরা। মাঠের আনাচে-কানাচে ময়লা, পলিথিন, অজস্র ইটের টুকরা, কাচের গুঁড়া ও নানা ধরনের আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।
মাঠের ভেতরের পাশে সিটি কর্পোরেশনের একটি কফিশপ ‘গ্রিন ট্যারেস’ থাকলেও পুরো মাঠের পরিবেশ এখন বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। কফিশপের আশপাশে ময়লা জমে আছে, আর মাঠের চারপাশের ফুটপাত প্রায় অর্ধশত ফাস্টফুড, শরবত, চা, ফুচকাসহ নানা খাবারের দোকানে পূর্ণ, যা ফুটপাত দখল করে বসেছে। দোকানদারদের ফেলা আবর্জনায় মাঠ ও আশপাশে দুর্গন্ধ ও মশার উৎপাত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এছাড়া মাঠের কিছু অংশ এবং আশপাশের রাস্তাজুড়ে অবৈধ পার্কিং ও বিভিন্ন জিনিসপত্র ফেলা রয়েছে। আগে মাঠে যেটুকু ক্রিকেট প্রশিক্ষণ হতো, সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। রাতের বেলা মাঠ অন্ধকারে ডুবে থাকে। কারণ লাইটগুলো বেশিরভাগ নষ্ট রয়েছে। ফুটবল খেলার বালুর মাঠে ব্যবহৃত নিুমানের বালুতে কাচ, ইটের টুকরা ও তারকাঁটা মিশে আছে, যা শিশু ও কিশোরদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। শিশুদের জন্য রাখা রাইডগুলোও এখন ভাঙা ও অকার্যকর। চারপাশের গেট সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে এবং দড়ি দিয়ে বাঁধা রয়েছে। আশপাশের বসার স্ল্যাবগুলোতে ময়লা ও মানুষের জৈব বর্জ্য জমে রয়েছে। গাছপালার কোনো পরিচর্যা নেই। মাঠের চারপাশে থাকা কিছু ডাস্টবিন ভাঙা কিংবা উলটে পড়ে আছে।
পোস্তা এলাকার ১৮ বছরের যুবক মো. ইমরান বলেন, ‘সাত-আট বছর আগে আমরা এ মাঠে খেলতাম। তখন কোনো বাউন্ডারি ছিল না। পরে মাঠটি সংস্কার করা হয়েছিল, তবে মাঠে যে আধুনিকায়নের কথা ছিল তা হয়নি। এখন চারপাশে শুধু ময়লা, ছেঁড়া জাল আর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশই দেখা যায়।’
খাজেদেওয়ান এলাকার মো. নয়ন জানান, ‘আগে মাঝে মধ্যে এখানে ক্রিকেট প্রশিক্ষণ হতো। এরপর সব বন্ধ হয়ে গেছে। কোনো কোচ আসে না, কেউ খোঁজও নেয় না।’
শেখ সাহেব বাজারের বাসিন্দা শিপলু বলেন, ‘আগে মাঠে কিছুটা শৃঙ্খলা ছিল। এখন মাঠের পরিবেশ নোংরা আর অব্যবস্থাপনায় ভরা। সন্ধ্যার পরে ছেলেমেয়েরা এখানে বসে থাকে, অনেকেই গাঁজা সেবন করে। মনে হয় না এটা কোনো খেলার মাঠ, বরং যেন একটা কুৎসিত হাট বসে গেছে।’
লালবাগের স্থানীয় বাসিন্দা জোবায়ের জানান, প্রায় দুই মাস আগে মাঠে বসেছিলাম, তখন কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক আমার মোবাইল আর টাকা ছিনিয়ে নেয়। সেনাবাহিনীতে অভিযোগ করলে একজনকে ধরে নিয়ে গেলেও বাকিরা এখনও রয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, ঈদগাহ মাঠ ঘিরে সিটি কর্পোরেশনের কোনো কার্যকর তদারকি নেই। নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কর্মী নেই, মশার ওষুধ ছিটানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। ড্রেনগুলো বন্ধ থাকায় পানি জমে যায়। এতে মশাবাহিত রোগ, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় এলাকার অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। প্রশাসনের কাছে বারবার দাবি জানানো হলেও কোনো ফল মেলেনি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী কর্মকর্তা শফিউর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। একই অবস্থা দেখা যায় অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মিঠুন চন্দ্র শীলের ক্ষেত্রেও।
তবে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না এবং কোনো মন্তব্য করব না।’
এ বিষয়ে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) হাছিবা খান বলেন, ‘ওখানে যে খেলাধুলার অরিয়েন্ট স্পোর্টিং ক্লাবটি রয়েছে, সেটি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) দেখবে। এ ধরনের বিষয়গুলো বিভিন্ন বিভাগের আওতাভুক্ত। এছাড়া ময়লার অপসারণের দায়িত্ব পড়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ওপর।’
খেলার মাঠ সংলগ্ন এলাকায় গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানপাট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘সিটি কর্পোরেশনের কোনো সম্পত্তি যদি বেদখল হয় এবং এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করে, তাহলে সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা দখলমুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
