Logo
Logo
×

রাজধানীর খবর

গুলশান লেকের পাড় দখল করে স্থাপনা

পানির দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ মানুষ

Icon

নাজমুল হক, ভাটারা (ঢাকা)

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান কার্যালয়ের অনেকটা গা-ঘেঁষেই গুলশান লেক। রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানের প্রাণ বলা হতো এই লেককে। বহু বছর ধরে লেকটি আশপাশের বাসিন্দাদের পাশাপাশি পথচারীদের জন্যও ছিল প্রশান্তির জায়গা। তবে বর্তমানে গুলশানের আভিজাত্যের ছিটেফোঁটাও নেই এই লেকে। সুউচ্চ অট্টালিকার পাশেই লেকের বেহাল দশা। যেন আলোর নিচে ঘুটঘুটে অন্ধকার। লেকের পানি দূষিত হয়ে পড়ায় আশপাশে ছড়িয়ে পড়ছে তীব্র দুর্গন্ধ, যার প্রভাবে লেকপাড়ের বাসিন্দা, সাধারণ পথচারী, অফিসগামী মানুষ ও হাঁটতে আসা মানুষজন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। লেকের পাড়ে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। বাতাসে পচা পানির দুর্গন্ধ। ওয়াক ওয়ের পাশ ঘেঁষে পড়ে থাকা ময়লা-আবর্জনা চলে যাচ্ছে লেকের ভেতর। পচা পানি ও ময়লা-আবর্জনায় গুলশান লেক এখন মশার প্রজননক্ষেত্র। পুরো এলাকা যেন ডেঙ্গুর হটস্পটে পরিণত হওয়ার পথে। নেই নিয়মিত ময়লা অপসারণের উদ্যোগ, ড্রেনেজ ব্যবস্থাও দুর্বল। নগরভবনে বারবার ধরনা দিয়েও প্রতিকার মিলছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তারা বলেন, লেকের এই অবস্থায় চলাচল করতে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। এক সময়ের সৌন্দর্যের প্রতীক গুলশান লেক এখন যেন বিষাক্ত জলাশয়, যার চার পাশে ছড়িয়ে রয়েছে পচা পানি, দুর্গন্ধ আর জমে থাকা আবর্জনার স্তূপ।

সরেজমিন দেখা গেছে, বাড্ডা লিংক রোড হয়ে গুলশান-১ এর দিকে যেতে গুদারাঘাটের পাশে লেকের একপাশে কচুরিপানা ও ময়লা জমে আছে। গুলশান-১ ও ২-এর মাঝামাঝি সংযোগ সড়ক ও মরিয়ম টাওয়ার-১ এর পাশেও একই চিত্র দেখা গেছে।

যেখান থেকে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। লেকের পাশ দিয়ে যাওয়া প্রায় প্রতিটি পথচারী নাক চেপে হাঁটছেন। লেকের পানিতে ভাসছে কচুরিপানা, গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, পরিত্যক্ত বাসাবাড়ির সরঞ্জাম, সোফাসেট, প্লাস্টিক বোতল, পলিথিন, খাবারের প্যাকেট, গাছের পচা ডালপালা, এমনকি মৃত প্রাণীর দেহও। কিছু জায়গায় পানির রং কালচে হয়ে উঠেছে।

বাড্ডা-গুলশান সংযোগ সড়কের গুলশান লেকের পাড়ে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া গুলশান-মানারাত সংযোগ সড়কেও অবৈধ স্থাপনা রয়েছে।

গুলশান সোসাইটির মহাসচিব সৈয়দ আহসান হাবিব যুগান্তরকে বলেন, গুলশান লেকের দুর্গন্ধের সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি ধ্বংস হচ্ছে। কারণ এখানে দেশের সব দূতাবাসের অবস্থানের পাশাপাশি সব রাষ্ট্রদূতের বসবাস। তাছাড়া দাতা সংস্থা ও বিদেশি অতিথিরা সবাই এই লেকের পাশ দিয়ে চলাচল করেন। লেকের এই দুর্গন্ধ দেশ সম্পর্কে তাদের ভুল বার্তা দেবে। গুলশান লেকের অবস্থা এখন ভয়াবহ, দুর্গন্ধে টিকে থাকাও মুশকিল। এ নিয়ে আমরা সোসাইটির পক্ষ থেকে অনেক উদ্যোগ নিয়েছি। সংক্ষেপে বললে, গুলশান ও বনানীর আনুমানিক অর্ধেক বাড়ি এখনো সরাসরি পয়ঃবর্জ্য এই লেকে ফেলছে। অনেকেই নিজের বাড়ির পয়ঃবর্জ্য সরাসরি লেকে ফেলছে। গত বছর আমরা বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হই। এস্কেভেটর নামিয়ে লেক পরিষ্কার করি, কয়েক মাস ধরে ময়লা তুলি। কিন্তু ফলাফল শূন্য। কারণ ২৪ ঘণ্টা ময়লা ফেলা হচ্ছে, আর আমরা দিনে ৮ ঘণ্টা পরিষ্কার করছি-এভাবে টেকা যায় না। করপোরেট হাউজগুলোর কাছ থেকে অনুদান নিয়ে প্রায় ৫০-৬০ লাখ টাকা খরচ করে লেক পরিষ্কার করা হয়েছিল। কিছু দিনের জন্য গন্ধ ও মশা কমেছিল, কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি। পরবর্তীতে আমরা যোগাযোগ করি ওয়াসার সঙ্গে। ওরা বলেছে, দাসেরকান্দিতে এক হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প করেছে, যেখানে বর্জ্য ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু গুলশান ও বনানী থেকে সেখানে সংযোগ দেওয়া হয়নি নানা জটিলতার কারণে। আমাদের জীবদ্দশায় এটা শেষ হবে কিনা সন্দেহ। এরপর আমরা বসি সিটি করপোরেশনের সঙ্গে। কিন্তু আপনি জানেন, সিটি করপোরেশন বড় বড় কথা বলতে জানে, কিন্তু বাস্তব ডেলিভারি দেয় না। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানান, প্রতিদিন সকাল ৮টার মধ্যে সিটি করপোরেশন এলাকা পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু দুপুর ১২টার মধ্যেই আবার ময়লা জমে যায়। শুধু পরিষ্কার করলেই চলবে না, নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম