Logo
Logo
×

রাজধানীর খবর

নগরের স্বাস্থ্যসেবা

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসাসেবা

বাড্ডা নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র-১

Icon

মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, ডেমরা ও নাজমুল হক, ভাটারা (ঢাকা)

প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অবহেলিত জনগোষ্ঠীর আস্থার চিকিৎসাস্থল হওয়ার কথা থাকলেও বাড্ডা নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র-১ এ প্রবেশের চারপাশেই দুর্গন্ধযুক্ত অসাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে। ভাড়ায় চালিত ৮ তলা ভবনের দোতলায় অবস্থিত ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির সিঁড়ি পর্যন্ত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে ময়লা-আবর্জনা। আর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে মধ্যম আয়ের চিকিৎসাসেবা প্রত্যাশীরা ক্রমেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসার আগ্রহ হারাচ্ছেন। বর্তমানে নিু আয়ের মানুষরাই বেশি সেবা নিতে আসছেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে। এদিকে নজরদারি না থাকায় অপরিচ্ছন্ন পরিবেশেই দেওয়া হচ্ছে বাড্ডা নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র-১ সংশ্লিষ্ট নগরবাসীদের বিভিন্ন চিকিৎসাসেবা।

এদিকে বাড্ডার ওই নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের পপুলেশন সার্ভিসসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের (পিএসটিসি) পরিচালনায় নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা শুরু করা হয়েছে। একই সঙ্গে চলছে শিশুদের টিকাদান কর্মসূচিও। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রকল্প-দ্বিতীয় পর্যায়ের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে এ নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। এটি মূলত বাস্তবায়ন করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পার্টনারশিপ এরিয়া-৬।

সরেজমিন দেখা গেছে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির প্রবেশমুখে সাইনবোর্ডে একটি সুন্দর ভবনের ছবি দিলেও ভেতরের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। এটির চারপাশের নোংরা পরিবেশে দুর্গন্ধ ছড়ায়। ঘণবসতিপূর্ণ মধ্য বাড্ডার পোস্ট অফিস গলির প্রথম ৮ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলার ভাড়া ফ্ল্যাটে চলছে বাড্ডা স্বাস্থ্যকেন্দ্র-১ এর কার্যক্রম। বাইরে থেকে বিল্ডিংটি খুব পরিপাটি মনে হলেও ভেতরে চিত্র যেন পুরোপুরি ভিন্ন। ভবনে প্রবেশে শুরুতেই দিকনির্দেশনা বোর্ডের নিচে আবর্জনার বড় স্তূপ। চারদিকেও আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির সিঁড়িতেও পরে আছে ময়লা। আর লিফটের খালি জায়গায় কাঠ দিয়ে ঢেকে রাখলেও নিচেই ময়লার স্তূপ। আর ওই স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ সরাসরি দোতলায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ছড়ায়। এ ছাড়া পার্কিংয়ের জায়গায় ময়লার স্তূপ, কোথাও কোথাও জমে আছে ময়লা পানি। আর লিফটের জায়গাটি অরক্ষিত অবস্থায় আছে যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

সরেজমিন আরও দেখা গেছে, দোতলার চার রুমের ওই ফ্ল্যাটটিতে এক রুমে চিকিৎসক, এক রুমে প্যারামেডিকস ও অন্য সহকর্মীরা বসছেন। পরীক্ষাগার ও টিকার জন্য আলাদা একটি করে রুমের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মাঝে একটা ওয়েটিং রুম লক্ষ করা গেছে, যেখানে কয়েকজন নারী বাচ্চাসহ অপেক্ষা করছেন। আর রিসিপশনে থাকা একজন সিরিয়াল অনুসারে ডেকে চিকিৎসকের রুমে পাঠাচ্ছেন চিকিৎসাসেবা প্রত্যাশীদের। এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য প্রতি মাসে ৪৬ হাজার টাকা ভাড়া পরিশোধ করতে হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে এমআইএস ও আইটি অফিসার মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, এখানে একজন মেডিকেল অফিসার, ৩ জন প্যারামেডিকস, ৩ জন পরিবার কল্যাণ কর্মী, ২ জন সার্ভিস প্রমোটার, ১ জন করে কাউন্সিলর, ল্যাব টেকনিশিয়ান, ফিল্ড সুপারভাইজার, ভর্তি সহায়তাকারী, রিসিপশনিস্ট, পিয়ন ও আয়াসহ ১৬ জনের একটি সার্ভিস টিম রয়েছে। এভাবে প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই টিম আকারে কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

জানা যায়, মধ্য বাড্ডা নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র-১ এ প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছে যা মোট জনসংখ্যা হিসাবে খুবই কম। এটির মতো আরও কয়েকটি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য রয়েছে ১টি ডেলিভারি সেন্টার। সেখানে প্রতিদিন সেবা গ্রহণ করছে ১২০ থেকে ১৩০ জন গর্ভবতী নারী। ওই সেন্টারে প্রতি মাসে গড়ে ১৩০ জনের বেশি ডেলিভারি করানো হয়। এখানে ১ হাজার টাকায় থাকার মোটামুটি সুব্যবস্থাসহ চিকিৎসকের মাধ্যমে নরমাল ডেলিভারি করানো হয়। সিজারিয়ান সেকশন করানো হয় সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকায়। এ ছাড়া নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বাজারমূল্যের চেয়ে শতকরা ১০ থেকে ২০ টাকা কম মূল্যে ওষুধ ক্রয়ের সুযোগ রয়েছে। আছে সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স সুবিধাও। চিকিৎসাসেবা প্রত্যাশী নারীদের অভিযোগ, আবর্জনাময় পরিবেশে এখানে মধ্যম আয়ের কেউ আসতে পারে না বলে রোগী বরাবরই কম। আর এ সুযোগে কিছু অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা রয়েছে। কারণ দুর্গন্ধযুক্ত অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসাই দায়। এদিকে লাল কার্ডধারী না হলে এখানে প্রদেয় সব ধরনের চিকিৎসা সুবিধা শতভাগ মেলে না বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রতিবছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত লাল কার্ড দেওয়া হয় বলে তার পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভাড়ায় আসা সাধারণ মানুষ লাল কার্ড পায় না। নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র-১ এ সেবা নিতে আসা বিলকিস আক্তার যুগান্তরকে বলেন, আমার স্বামী নেই।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম