Logo
Logo
×

রাজধানীর খবর

ওয়ার্ড পরিক্রমা (উত্তর সিটি): ২০ নম্বর ওয়ার্ড

গ্যাস ও পানির তীব্র সংকট

সড়ক দখল করে দূরপাল্লার বাসের পার্কিং * কড়াইল বস্তির নোংরা পরিবেশ মশার প্রজনন ক্ষেত্র * অভিজাত গুলশানে এখনো খেয়ায় মানুষের পারাপার * রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে অবৈধ দোকানপাট বসিয়ে চাঁদাবাজি

Icon

মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, ডেমরা ও নাজমুল হক, ভাটারা

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২০ নম্বর ওয়ার্ডে গুলশান লেকের এপারে অভিজাত এলাকা হলেও ওপারেই কড়াইল বস্তি। ওই লেক দিয়ে এখনো বস্তির হাজারও মানুষসহ বাসিন্দারা প্রতিদিন খেয়ায় পারাপার হন। তাইতো নানা সমস্যায় জর্জরিত এ ওয়ার্ডের জনমনে স্বস্তি নেই। বিশেষ করে রাজধানীর অন্যসব বড় বড় বস্তির মতো গুলশান ও বনানী থানার এই বস্তিটির নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সন্ত্রাস, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও দখলবাজির বদনামসহ নানা অপরাধ। তাই অভিজাত এলাকার বাসিন্দারা সবসময় থাকেন আতঙ্কে। একই সঙ্গে কড়াইল বস্তি ও গুলশান লেকসহ অভ্যন্তরীণ খাল যেন ওয়ার্ডের মশা-মাছির প্রজনন ক্ষেত্র। এছাড়া নজরদারি না থাকায় এখানকার গুরুত্বপূর্ণ অধিকাংশ সড়ক দখল করে দূরপাল্লার বাসের পার্কিংস্থল করা হয়েছে। একই সঙ্গে সড়ক ও ফুটপাত এখনো হকারদের দখলে। এক্ষেত্রে ভিআইপি এলাকাটির অধিকাংশ সড়কের দুপাশ দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন স্থায়ী-অস্থায়ী দোকান। এতে বাসিন্দা ও পথচারীদের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহতের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন তারা। এখানে গ্যাস ও ওয়াসার পানির চরম সংকট থাকলেও দেখার যেন কেউ নেই।

সরেজমিন দেখা গেছে, গুলশান লেকের পানিতে ভাসছে নির্বিচারে ফেলা কড়াইল বস্তির গৃহস্থালির ময়লা-আবর্জনা। পাশপাশি ওই বস্তিসহ এলাকার অভ্যন্তরীণ পানি নিষ্কাশন খালেরও একই চিত্র। এতে খাল ও লেকের পঁচা পানির কারণে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। আর নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত অপরিচ্ছন্ন কড়াইল বস্তিবাসীর জীবনমান যেন আস্তাকুড়ের মতো। ঘিঞ্জি ও নোংরা পরিবেশে এখানকার অপ্রশস্থ সড়কগুলো যেন ভোগান্তির অন্যতম কারণ। এখানে এখনো অধিবাসীরা মাটির চুলায় লাকড়ি দিয়ে রান্না-বান্না করেন। তবে বস্তিটি নগরীর শ্রমজীবী বহু মানুষকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিলেও নানা অপরাধী ও সন্ত্রাসীরা সক্রিয় এখানে। আর কড়াইল বস্তিবাসী নানাভাবে গুলশান লেক ও অভ্যন্তরীণ খালের দূষণ ঘটাচ্ছে। তার ওপর হাজারও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইকের দৌড়াত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন অভিজাত বাসিন্দারা। সরেজমিন আরও দেখা গেছে, ওয়ার্ডের ব্যস্ততম সড়ক আমতলী থেকে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড সড়কের দুপাশ দখল করে গড়ে উঠেছে সারিবদ্ধ শতাধিক অবৈধ বিভিন্ন পণ্যের দোকানপাট। আর এ মহাসড়কের বেশিরভাগ অংশ দূরপাল্লার বাস পার্কিংস্থল হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সড়কে অবৈধভাবে প্রাইভেটকার পার্কিং লক্ষ্য করা গেছে। তবে অভিজাত এলাকা হলেও এখানে সব ধরনের নাগরিক সুবিধা এখনো নিশ্চিত করা হয়নি। সর্বক্ষণই এখানে ভিক্ষুক ও হিজড়াদের উপস্থিতি দেখা যায়। যারা যাত্রীবাহী বাসে উঠেও ভিক্ষা করে। অথচ গুলশান-বনানীতে বিশ্বমানের প্রায় সব সুযোগ-সুবিধা মিলে। ওয়ার্ডটিতে গড়ে উঠেছে ঢাকার সবচেয়ে বেশি পাঁচ তারকা হোটেল, উন্নত ও আধুনিক মানের রেস্তোরাঁ, সর্বাধুনিক শপিং মল, বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট, প্রসিদ্ধ বেসরকারি ইংরেজি-মাধ্যম ও আন্তর্জাতিক মানের স্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক ও দেশি-বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির কার্যালয় রয়েছে এই এলাকায়। অথচ ওয়ার্ডটিতে গ্যাস ও ওয়াসার বিশুদ্ধ পানির সংকট, যত্রতত্র আবর্জনার স্তূপ, মশা-মাছির উপদ্রব, খালের দুর্গন্ধযুক্ত পচা পানি ও বেওয়ারিশ কুকুরের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। তাছাড়া অভিজাত এলাকার নাগরিক হিসাবে তারা পাচ্ছেন না সিটি করপোরেশনের অনেক সুযোগ-সুবিধা।

সেবার মান নিয়ে ডিএনসিসির ২০ নম্বর ওয়ার্ড সচিব মো. মকবুল বলেন, কাউন্সিলর না থাকায় নাগরিক সেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। কাউন্সিলররা যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যা সচিবদের অনেক যাচাই-বাছাই করতে হয়। তবে আমার দায়িত্ব অনুযায়ী সব ধরনের সনদ প্রদানসহ নাগরিক সুযোগ-সুবিধাগুলো বহাল রাখার চেষ্টা করি।

এ বিষয়ে আব্দুর রশিদ নামে গুলশানের এক বাসিন্দা বলেন, এলাকায় পুলিশের কার্যক্রম তেমন চোখে পড়ে না। এদিকে কড়াইল বস্তি সন্ত্রাস-চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী ও মাদক কারবারিদের অভয়ারণ্য হলেও পুলিশের নজরদারি এখানে অনেক কম। গুলশান, বাড্ডা ও বনানী এলাকার সব ছিনতাইকারীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল এ জায়গা।

এদিকে দখলযজ্ঞ ও আইন-শৃঙ্খলার বিষয়ে গুলশান থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও থানা এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো আছে। তারপরও অবৈধ দখলযজ্ঞ ও পাকিংসহ চলমান নানা অপরাধ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এক্ষেত্রে সমন্বয়ভিত্তিক জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম