Logo
Logo
×

রাজধানীর খবর

ওয়ার্ড পরিক্রমা (দক্ষিণ সিটি) : ১৬ নম্বর ওয়ার্ড

বিপজ্জনক খোলা ম্যানহোল

সড়কে অবৈধ পার্কিংয়ে বাড়ছে যানজট

Icon

মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া ডেমরা ও মো. মারুফ শাহ, ধানমন্ডি (ঢাকা)

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিনিয়ত গায়েব হচ্ছে ম্যানহোলের ঢাকনা। এলাকার অধিকাংশ সড়কবাতি নষ্ট থাকায় অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশেই স্থানীয় বাসিন্দাদের পথ চলতে হচ্ছে। এ সুযোগে অন্ধকার এলাকায় বাড়ছে চুরি-ছিনতাইসহ মাদক আগ্রাসন ও কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। এ ছাড়াও ওয়ার্ডের ফুটপাতগুলো বর্তমানে অবৈধ দখলে। এক্ষেত্রে ওইসব সড়কের দুই পাশ দখল করে ভাসমান স্থায়ী-অস্থায়ী দোকানপাট গড়ে তোলা হয়েছে। এসব ঘিরে রাজনৈতিক দলের নেতাদের নীরব চাঁদাবাজি চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর অভিজাত এ ওয়ার্ডে যত্রতত্র পার্কিং করা হচ্ছে বলে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে।

এদিকে ওয়ার্ডের প্রতিটি সড়কে অনুমোদনহীন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা-ইজিবাইক ও মিশুক নিয়মিত চলাচল করছে। আর এসব নিষিদ্ধ যানবাহনেরর অদক্ষ চালকদের কারণে যাত্রী ও পথচারীরা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। বর্তমানে সড়কের দুই পাশে প্রাইভেটকার ও পিকআপের অবৈধ পার্কিংয়ের কারণ ও ইজিবাইকের দৌরাত্ম্যে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। অধিকাংশ এলাকায় গ্যাস সংকট ও ওয়াসার পানির সমস্যায় ভুগছেন বাসিন্দারা। ওয়ার্ডের যত্রতত্র ও অভ্যন্তরীণ খালে ময়লা-আবর্জনার কারণে মশার প্রজননক্ষেত্র বাড়ছেই। অভ্যন্তরীণ খালগুলো যেন মশার প্রজননক্ষেত্র। সামান্য বৃষ্টি হলেই নিচু রাস্তায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

ওয়ার্ড পরিচিতি : ডিএসসিসির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডটি ঢাকার কলাবাগান থানাধীন আবাসিক এলাকা, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, কাঁঠালবাগান, নর্থরোড, সার্কুলার রোড, গ্রিন কর্নার, গ্রিন স্কয়ার, (গ্রিন রোড), গ্রিন রোড পূর্ব, ওয়েস্ট অ্যান্ড স্ট্রিট (ওয়েট স্ট্রিট), আল আমিন রোড, নর্থ সার্কুলার রোড, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (হাতিরপুল), ক্রিসেন্ট রোড নিয়ে গঠিত। এটি ডিএসসিসির অঞ্চল-১ আঞ্চলিক কার্যালয় ও সংসদীয় ঢাকা-১০ আসনের অন্তর্ভুক্ত। এটি সাবেক ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৫০নং ওয়ার্ড ছিল।

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এ ওয়ার্ডটিতে রয়েছে গ্রিন লাইফ হাসপাতাল, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, পদ্মা জেনারেল হাসপাতাল, বাংলাভিশন, তিলোত্তমা, সুন্দরবন হোটেল, নুর টাওয়ার, বিকেএমই ভবন, মোতালেব প্লাজা, ইস্টার্ন প্লাজা, ব্রাইটন হাসপাতালসহ বিভিন্ন সংস্থা।

সরেজমিন দেখা গেছে, ডিএসসিসির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের অধিকাংশ সড়ক ও ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ দোকানপাট। এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী মহল, রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন ধরে সড়ক ও ফুটপাতগুলো দখল করে অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে কাওরান বাজার মেট্রোরেল স্টেশন থেকে কলাবাগান থানার পাশ দিয়ে পান্থপথ সিগনাল পর্যন্ত ফুটপাত দিয়ে যত্রতত্র পুরাতন ফার্নিচারের দোকান গড়ে উঠেছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল। প্রতিদিনই পথচারীরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন। ফুটপাত দখল করে অসংখ্য ফার্নিচার দোকান, জুতা ও স্যান্ডেলের দোকান গড়ে উঠেছে। পান্থপথ সিগনাল, বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডার, আবাসিক হোটেল, জমজম ইন্টারন্যাশনাল, গ্রিন লাইফ হাসপাতাল (গ্রিন রোড) হয়ে সেন্ট্রাল হাসপাতালের বিপরীত দিক পর্যন্ত ভ্যানগাড়ির দোকান বসানো হয়েছে।

সরেজমিন আরও দেখা যায়, ওয়ার্ডের অধিকাংশ সড়কে প্রাইভেটকার, ভ্যান ও নিষিদ্ধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা যত্রতত্র পার্কিং করে রাখায় জরুরি যানবাহন চলাচলের সমস্যা হয়। বক্সকালভার্ট ও সোনারগাঁও রোডসহ পান্থপুঞ্জ পার্কের ফুটপাতে অস্থায়ী ভাসমান বিভিন্ন দোকান বসানো হয়েছে। ফুটপাতগুলোতে কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন দোকানপাট থাকায়, যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলেন সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে সড়কে যত্রতত্র সুপারি, ডাব ও বাদামের খোসা, চা-কফির ওয়ানটাইম ব্যবহৃত গ্লাস, ময়লা-আবর্জনার স্তূপ করে রাখা হয়। এসব আবর্জনার স্তূপগুলো যেন মশার প্রজনন ক্ষেত্র। এ ছাড়াও সিটি করপোরেশনের বক্সগুলো ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়মিত এসব আবর্জনা পরিষ্কার না করার চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে আশপাশের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এদিকে নিচু সড়কগুলোতে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। বিশেষ করে সোনারগাঁও রোড থেকে কাঁঠালবাগানের দিকের শাখা সড়কগুলো নিচু হওয়ার কারণে রিকশাসহ অন্য যানবাহনগুলো ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে।

দেখা গেছে, ঢাকা মহানগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে এগুলোর ঢাকা ওয়াসা সিটি করপোরেশন বক্সকালভার্ট নির্মাণ করে। অথচ পান্থকুঞ্জ পার্কের পশ্চিম পাশে বক্সকালভার্টের ওপরে ঢাকনাও নেই। উন্মুক্ত থাকার কারণে ভেতরের পানি প্রবাহ একবারে ধীরগতির। আর কালভার্টে প্রবাহিত দুর্গন্ধযুক্ত কালচে পানিতে আশপাশে ভাসমান মানুষ যে যার মতো করে মলমূত্র ত্যাগ করে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ওয়ার্ডে কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি। পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকায় সংঘবদ্ধ বহিরাগত চোরচক্র ও এলাকার নেশাগ্রস্তরা এসব ঢাকনা চুরি করছে। ম্যানহোলের ঢাকনা না থাকায় প্রতিনিয়তই বিভিন্ন সড়কে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। চুরি যাওয়া ঢাকনাগুলো পুনঃস্থাপন করা হলেও আবার চুরি হয় যায় বলে জানান ওয়ার্ডবাসী। এতে পথচারীদের চলাচলে বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সড়ক বাতিগুলোও চুরি হচ্ছে বলে অনেক সময় রাতের বেলা পথচারীরা ছিনতাইয়ের কবলেও পড়েন। নারী ও শিশুরাও রাতের বেলা চলাচল করতে চরম আতঙ্কে থাকেন। এলাকাবাসী বলছেন, থানা পুলিশের তৎপরতা থাকলে চোরেরা কিছুতেই ম্যানহোলের ঢাকনা ও সড়কবাতিগুলো চুরি করতে পারত না। হাতিরপুর এলাকার বাসিন্দা শাহনেওয়াজ শারমিন যুগান্তরকে বলেন, আবাসিক এলাকায় অভ্যন্তরীণ প্রায় সব সড়কে পর্যাপ্ত সড়কবাতি না থাকায় অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে চলতে হয়।

ডিএসসিসির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সচিব মো. বদরুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ডিএসসিসির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ম্যানহোলের ঢাকনা ও সড়কবাতিগুলো প্রায় সময় চুরি হয়ে যায়। আর এসব চুরির বিষয়টি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। তবে ওয়ার্ডের নাগরিক সেবাগুলোর কার্যক্রম চলছে নির্বিঘ্নে। এক্ষেত্রে জন্মসনদ, মৃত্যুসনদ, বৈবাহিক সনদ, ওয়ারিশান সনদসহ সাধারণ নাগরিকসেবা কার্যক্রম চলছে ডিএসসিসির নিয়ম অনুযায়ী । কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলে আশিক যুগান্তরকে বলেন, ম্যানহোলের ঢাকনা ও সড়কবাতি চুরির সংবাদ এখন পর্যন্ত পাইনি। তবে কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে আমরা তৎপর আছি, কয়েকজন ছিনতাইকারীকেও ধরা হয়েছে। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম