Logo
Logo
×

রাজধানীর খবর

শাহবাগ কেন্দ্রীয় শিশু পার্ক

উন্নয়নের নামে ঢিলেমি

Icon

মো. খোরশেদ আলম সীমান্ত, শাহবাগ (ঢাকা)

প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকার প্রাণকেন্দ্র শাহবাগে ঐতিহ্যবাহী কেন্দ্রীয় শিশু পার্কটি (হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু পার্ক) আধুনিকায়নের উদ্দেশে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল ভূগর্ভস্থ পার্কিং, আধুনিক রাইড ও রাজধানীর শিশুদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে আন্তর্জাতিকমানের বিনোদন সুবিধা তৈরি করা। কিন্তু বাস্তব চিত্র এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন। পাঁচ বছরের অধিক সময় পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পের দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই বললেই চলে। এতে সন্তানের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটানোর স্বপ্ন হারাচ্ছেন রাজধানীর মানুষ। ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত শিশু পার্কটি প্রথম দিকে ‘শহীদ জিয়া শিশু পার্ক’ নামে পরিচিত ছিল। ১৯৮৩ সালে এটি ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে যায়। শিশুদের জন্য রাজধানীতে একমাত্র খেলার বিনোদন কেন্দ্র ছিল পার্কটি।

২০১৯ সালে এটি ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ’ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় আধুনিকায়নের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রকল্পের আওতায় ভূগর্ভস্থ পার্কিং, ওপরে আধুনিক রাইড, কৃত্রিম লেকসহ আরও নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও গণপূর্ত অধিদপ্তর। প্রথম পর্যায়ে প্রকল্পের বাজেট ধরা হয় প্রায় ৭৮ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নিজস্ব প্রকল্পে রূপান্তরিত হলে বাজেট দাঁড়ায় প্রায় ৬০৪ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের অক্টোবরে প্রকল্পটি পুনরায় অনুমোদন দেওয়া হয়।

জানা যায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দীর্ঘ বিলম্বের নেপথ্যে রয়েছে একাধিক জটিলতা। প্রথমত, প্রকল্পের রাইড ক্রয়ের বিষয়ে দামের পুনর্মূল্যায়ন নিয়ে বুয়েটের একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সময়ক্ষেপণ করা হয়। দ্বিতীয়ত, পার্কের একটি অংশ শাহবাগ থানার দখলে থাকায় জমি হস্তান্তরেও বাধার সৃষ্টি হয়। ভৌগোলিক জটিলতা ও প্রশাসনিক সমন্বয়ের অভাবও রয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, পার্কটি এখনো বেড়া দিয়ে ঘেরা। গেট বন্ধ, অবকাঠামো ভাঙা, ভেতরে পানি জমে আছে, রাইডের ভিত্তির চিহ্নগুলোই কেবল দৃশ্যমান। অপরিচ্ছন্ন নোংরা পরিবেশের মধ্যেই বিভিন্ন স্থানে পসরা জমিয়ে বসেছে নানা বয়সের মাদকসেবীরা। কিছুকাল পানি ও বাদাম বিক্রি করছে।

পার্কসংলগ্ন ফুটপাতের দোকানদাররা জানিয়েছেন, প্রতিদিন অনেক শিশু ও অভিভাবক পার্ক খোলার আশায় গেট পর্যন্ত এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো শিশু পার্কে ঢুকতে না পেরে কাঁদতে শুরু করে। তাদেরকে বুঝিয়ে বাসায় ফিরিয়ে নিতে অনেক অভিভাবকদের বেশ বেগ পেতে হয়। ইসমাইল হোসেন নামে এক অভিভাবক বলেন, আমার ছোট ছেলে বহুবার জেদ ধরেছে পার্কে যাওয়ার জন্য। এখানে এসে দেখি পার্ক এখনো বন্ধ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সূত্র মতে, ভূগর্ভস্থ পার্কিংয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখন ‘মেকানিক্যাল’ বিভাগ আধুনিক রাইড স্থাপন করবে। মোট চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে। কর্তৃপক্ষের আশাবাদ, ২০২৬ সালের মধ্যে পার্ক খুলে দেওয়া সম্ভব হবে। তবে প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ২০২৮ সাল পর্যন্ত গড়াতে পারে।

২০২৩ সালে পার্কটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু পার্ক’। যা ডিএসসিসি বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কার্যকর করা হয়। রাজধানীর অন্যতম জনপ্রিয় শিশু বিনোদন কেন্দ্রটি এভাবে বছরের পর বছর বন্ধ থাকায় রাজধানীর শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অভিভাবকরাও একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত বিনোদন স্থানের অভাবে ব্যাপকভাবে উদ্বিগ্ন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃক্ষের কাছে নাগরিকদের প্রত্যাশা, সঠিক পরিকল্পনা, সময়মতো বাস্তবায়ন এবং স্বচ্ছতার মাধ্যমে যেন প্রকল্পটি দ্রুত সমাপ্ত হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জয় যুগান্তরকে বলেন, ২০২৬ সালের ৩০ জুন এ প্রকল্প শেষ হবে। তবে সময় আরেকটু বেশি লাগতে পারে। কারণ, পুলিশ বিভাগের জব্দ গাড়িগুলো শাহবাগ থানার পেছনের অংশে যেখানে ডাম্পিং হতো সে জায়গাটি পার্কের জন্য আমরা গত মাসে বুঝে পেয়েছি। তাও এক বছর দেরিতে। যে কারণে কাজ শেষ করতে সময়টা বেশি লাগছে। আর ডিএসসিসি অঞ্চল-১ এই প্রকল্পের সিভিল কাজগুলো দেখে। এগুলোর বেশির ভাগেরই ফাউন্ডেশন হয়ে গেছে। এখন শুধু আমরা ওপরের দিকে উঠব। তা ছাড়া এখানে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের একটি কাজ চলছে, তা হলো আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিংয়ের কাজ। এটা করছে গণপূর্ত বিভাগ। তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় চলে গেছে। তবুও আমাদের ২০২৬ সালে ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর যুগান্তরকে বলেন, আমরা নিয়মিত মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাদকসেবীদের আমরা পুরোপুরি নির্মূল করেছি । শিশু পার্কের প্রকল্প এলাকায় অল্প কিছুদিনের মধ্যেই যৌথবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে। আশা করি এখান থেকেও মাদক পুরোপুরি নির্মূল করতে পারব।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম