Logo
Logo
×

রাজধানীর খবর

ওয়ার্ড পরিক্রমা (দক্ষিণ সিটি): ২৫ নম্বর ওয়ার্ড

ভাঙাচোরা রাস্তা যানজট গ্যাস পানি আলো সংকট

এলাকাবাসীর ভোগান্তি বছর বছর বেড়েই চলেছে * সড়কের দুই পাশে ছোট দোকানপাট ও অবৈধ স্থাপনা

Icon

মো. জহিরুল ইসলাম, হাজারীবাগ (ঢাকা)

প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভাঙাচোরা রাস্তা যানজট গ্যাস পানি আলো সংকট

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২৫ নম্বর ওয়ার্ড যেন রাজধানীর মধ্যেই এক চরম অবহেলিত জনপদ। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার সংকীর্ণ ও ভাঙাচোরা রাস্তা, জলাবদ্ধতা, গ্যাস ও বিশুদ্ধ পানির সংকট, ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুরবস্থা, সড়কবাতি অচল, মাদক, মশা আর পাগলা কুকুরের আতঙ্কে জর্জরিত এলাকাবাসী। এর সঙ্গে রয়েছে ফুটপাত দখল, যানজট, মাদকসেবীদের উৎপাত ও কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। সিটি করপোরেশনের তেমন নজরদারি না থাকায় এলাকাবাসীর ভোগান্তি বছর বছর কেবল বেড়েই চলেছে।

২৫ নম্বর ওয়ার্ড অঞ্চল-৩ এর অন্তর্গত একটি প্রশাসনিক এলাকা। এটি পূর্বে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৬১ নম্বর ওয়ার্ড ছিল। বর্তমানে ওয়ার্ডটি ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ থানায় এবং জাতীয় সংসদের ঢাকা-৭ আসনের অন্তর্গত। এ ওয়ার্ড জগন্নাথ সাহা রোড, কাজী রিয়াজুদ্দিন রোড, লালবাগ দুর্গ ও পুষ্পরাজ সাহা রোড, আতশ খান লেন, রাজশ্রী নাথ স্ট্রিট, হরমোহন শীল স্ট্রিট, গঙ্গারাম রাজার লেন, লালবাগ রোড, নগর বেলতলী লেন, শেখ সাহেব বাজার ও সুবল দাস রোডের সমন্বয়ে গঠিত।

সরেজমিন দেখা গেছে, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় প্রতিটি এলাকাই একই দুরবস্থায় জর্জরিত। জগন্নাথ সাহা রোড পুরো সড়ক সংকীর্ণ ও খানাখন্দে ভরা; অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে থাকে, ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ময়লায় আটকে যায়, আশপাশের অলিগলিতে রাজউকের অনুমোদনবিহীন ভবনের আধিক্য আর মশার উৎপাত চরম। কাজী রিয়াজুদ্দিন রোড ঘনবসতিপূর্ণ, বহু কারখানা রয়েছে, রাস্তায় খানাখন্দ, সড়কবাতির অর্ধেকের বেশি বাতি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় রাত হলেই অন্ধকার নেমে আসে। লালবাগ দুর্গ ও পুষ্পরাজ সাহা লেন এলাকাজুড়ে সারি সারি রেস্টুরেন্ট ও দোকানপাট, দিন-রাত গাড়ি পার্কিং ও ফুটপাত দখলে মানুষের ভোগান্তি; সন্ধ্যার পর লালবাগ কেল্লার পার্কিং এলাকায় উশৃঙ্খল যুবকদের আড্ডায় নারী পথচারীরা ইভটিজিংয়ের শিকার হন, অলিগলিতে ড্রেনেজ-সুয়ারেজ একসঙ্গে থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ হতে হয়। আতশ খান লেনে ফুটপাত তুলনামূলক খালি থাকলেও তীব্র গ্যাস সংকট, ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ ও সড়কবাতির নষ্ট অবস্থা স্পষ্ট। রাজশ্রী নাথ স্ট্রিট ও হরমোহন শীল স্ট্রিটে রাস্তা তুলনামূলক কম ভাঙা হলেও সড়ক সংকীর্ণ, দুর্বল ড্রেনেজে ময়লা জমে থাকে এবং বাতির অধিকাংশ অচল, ফলে এলাকাজুড়ে অন্ধকার ও তীব্র গ্যাস সংকট। গঙ্গারাম রাজার লেন এলাকায় মাত্র দুই-তিন ফুট প্রশস্ত রাস্তা, অনুমোদনহীন ভবনের আধিক্য, ঋষিপাড়া ও দুর্গা মন্দির এলাকায় অল্প বৃষ্টিতে হাঁটুজল জমে এবং ভোরে বাজার বসে চলাচল কার্যত অচল হয়ে পড়ে, ড্রেনেজ ব্যবস্থা অপরিকল্পিত হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতে পানি জমে যায়। লালবাগ রোড ওয়ার্ডের প্রধান সড়ক হলেও সারাদিন যানজট লেগে থাকে; অটোরিকশার যত্রতত্র পার্কিং, দোকানপাটের দখল, বাতি নষ্ট আর ড্রেনেজ দুরবস্থার কারণে দুর্গন্ধে পরিবেশ অসহনীয়, তার ওপর গ্যাস সংকট মারাত্মক ও ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধে মানুষ ভোগান্তিতে। নগর বেলতলী লেনের চৌধুরী বাজার মসজিদসংলগ্ন অলিগলি অত্যন্ত সংকীর্ণ, অনুমোদনবিহীন ভবন ও ভেতরে অবৈধ দোকানপাট গড়ে উঠেছে; সন্ধ্যার পর পুরো এলাকা অন্ধকারে ডুবে যায়। শেখ সাহেব বাজার রোডেও সারাদিন যানজট, সড়কের দুই পাশে ছোট দোকানপাট ও অবৈধ স্থাপনা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো না, বাতি নষ্ট, তীব্র গ্যাস সংকটে মানুষ অতিষ্ঠ। সুবল দাস রোডের অলিগলিও একইভাবে সংকীর্ণ, সড়কবাতি অচল এবং এলাকাজুড়ে তীব্র গ্যাস সংকট বিরাজ করছে।

শেখ সাহেব বাজারের বাসিন্দা মো. আরিফুর রহমান রনি বলেন, আমরা প্রায় ৮-১০ বছর ধরে গ্যাস সংকটে আছি। দুপুরের খাবার অনেক সময় রাতে খেতে হয়। ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ, রাস্তার বাতি জ্বলে না, চারপাশে ময়লা-আবর্জনা। সন্ধ্যার পর পাগলা কুকুর আর মশার ভয়ে বাইরে বের হওয়া দুঃসাধ্য। জগন্নাথ সাহা রোডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, নাজির হোসেন চেয়ারম্যানের গলিতে সন্ধ্যার পর মাদকসেবী ও কিশোর গ্যাংয়ের আড্ডা বসে। এরা মূলত কামরাঙ্গীরচর, শহীদনগর ও মোহাম্মদপুর থেকে এসে এখানে মাদক সেবন ও গলিতে গলিতে আড্ডা দেয় এবং মেয়েদের ইভটিজিং করে, অথচ কোনো নজরদারি নেই।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, ২৫নং ওয়ার্ডের সচিব পদটি বর্তমানে শূন্য রয়েছে। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুজাউদ্দৌলা সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ এবং হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি। লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তফা কামাল খান যুগান্তরকে বলেন, এলাকায় মাদকসেবী, ব্যবসায়ী ও কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান প্রতিদিনই চলছে। আগের মতোই আমরা নিয়মিত কাউকে শনাক্ত করলে ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান চলবে। এছাড়া কেউ অভিযোগ করলে আমরা তা যথাযথভাবে ব্যবস্থা নেব, যাতে এলাকাবাসী শান্তিতে থাকতে পারেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম