Logo
Logo
×

রাজধানীর খবর

কথা রাখেনি ডিএসসিসি

উন্নয়নবঞ্চিত বাইদ্যার মাঠ

আল হেলাল মাঠের কার্যাদেশ থাকলেও কাজ শুরু হয়নি * ক্রমেই বাড়ছে সন্ত্রাস ও মাদকের আগ্রাসন

Icon

মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, ডেমরা (ঢাকা)

প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক দুই মেয়র দুইবার ঘোষণা দেওয়ার পরও ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাইদ্যার মাঠের উন্নয়ন করা হচ্ছে না। এদিকে ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের মেন্দিপুর আল হেলাল মাঠের উন্নয়নের কার্যাদেশ দিয়েছে ডিএসসিসি। কিন্তু কতিপয় স্থানীয় বাসিন্দার বাধা ও অসহযোগিতায় উন্নয়ন কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। তাই সন্ত্রাস ও মাদকের নীল আগ্রাসনে ধ্বংসের পথে এ এলাকার যুব সমাজ।

আল হেলাল খেলার মাঠটি নিয়ে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। এ মাঠটি নিয়ে এলাকাবাসী বলছেন তারা নিজেরাই এ মাঠের উন্নয়ন করবেন। কারণ শুধু মেন্দিপুর এলাকাবাসীর জন্য এ মাঠসহ কবরস্থান ও মাদ্রাসার জায়গা দান করেছেন মল্লিকা সুন্দরি নামে এক নারী। এ ক্ষেত্রে ডিএসসিসি উন্নয়ন করলে মাঠটি চলে যাবে তাদের নিয়ন্ত্রণে, যা আল হেলাল ক্লাবের আওতায় থাকবে না। এ মাঠে এলাকাবাসীকে টাকা দিয়ে খেলতে হবে। তবে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ বলছে ওই মাঠের উন্নয়ন হলে এলাকাবাসীরাই উপকৃত হবে। মাঠ আল হেলাল ক্লাবের আওতায়ই থাকবে।

সরেজমিন দেখা গেছে, ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, মার্কেট শপিংমল ও অনেক ছোট-বড়-মাঝারি শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। এসবকে কেন্দ্র করে বাড়ছে মানুষের বসবাস, গড়ে উঠছে আবাসিক বহুতল ভবন। এখানকার দু-চারটি স্কুলে খেলার মাঠ থাকলেও অধিকাংশ স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় নেই খেলার মাঠ। এর মধ্যে ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও রুস্তম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বহিরাগতদের খেলা নিষেধ। এদিকে ৬৭ ও ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডের তিতাস গ্যাস আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও হাজী মোয়াজ্জেম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠেও বহিরাগতদের খেলা নিষেধ। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ থাকায় ওয়ার্ডের যুব ও তরুণ সমাজ মাঠগুলোতে খেলাধুলা করতে পারছে না। তাই তারা বর্তমানে এন্ড্রয়েড ফোনে আসক্তিসহ মাদকের দিকেই ঝুঁকছে বেশি। এলাকাবাসীর দাবি-ডেমরায় অনেক সরকারি জায়গা রয়েছে, যেগুলো উদ্ধার করে খেলার মাঠ বা স্টেডিয়াম নির্মাণ করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ডিএসসিসির ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাইদ্যার মাঠ খুব সহজেই খেলার উপযোগী করা সম্ভব।

অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে ডেমরায় অন্তত ২০০ পয়েন্টে ওপেন মাদক বেচাকেনা চলছে। বিশেষ করে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী ওয়াকওয়ে, বালু নদ তীরবর্তী নিরিবিলি এলাকাগুলো ও সব ওয়ার্ডের অভ্যন্তরীণ অধিকাংশ অলিগলিতেই বিক্রি হচ্ছে মাদক। বাইদ্যার মাঠ বা মেলার মাঠটি বছরে ৬-৭ মাসই থাকে পানিবন্দি। শত শত বছরের ঐতিহ্য এ মাঠটি শুধু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঐহিহ্য হারাচ্ছে। ঘাস-গুল্মলতায় ভরা এ মাঠটিতে শুধু শীতের দিনে বাৎসরিক মেলা অনুষ্ঠিত হয়। অথচ সরকারিভাবে এ মাঠটি পরিদর্শনে এসে উন্নয়নের জন্য ডিএসসিসির সাবেক দুই মেয়র সাঈদ খোকর ও ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ঘোষণা দিলেও কথা রাখেনি ডিএসসিসি। এদিকে, ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের মেন্দিপুর এলাকায় আল হেলাল খেলার মাঠ উন্নয়নের জন্য কার্যাদেশ থাকলেও তা আর হচ্ছে না। ইতোমধ্যে উন্নয়ন কাজ শুরু না হলে এ মাঠের উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয় বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছে ডিএসসিসি। তবে এ বিষয়ে আল হেলাল ক্লাবের সদস্যরা জানিয়েছেন ডেমরায় অনেক সরকারি জায়গা রয়েছে, যেখানে সরকারিভাবে ডিএসসিসির খেলার মাঠ করা যায়।

ডিএসসিসির ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল মতিন সাউদ যুগান্তরকে বলেন, আমাদের ডগাইর মধ্যপাড়া খেলা ও মেলার মাঠটি সাবেক দুই মেয়র পরিদর্শন করে উন্নয়নের ঘোষণা দিলেও তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। তবে নতুন করে আমি আবারও চেষ্টা চালাচ্ছি। ডিএসসিসির অঞ্চল-৮ আঞ্চলিক কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খলিলুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ডেমরায় খেলার মাঠের জন্য জায়গা নির্ধারিত ছিল, যা বর্তমানে আগের মতোই রয়েছে। আল হেলাল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুল হাসান রিয়াদ যুগান্তরকে বলেন, আল হেলাল ক্লাব কোনো সাধারণ ক্লাব নয়, এটি ১৯৭০ সালে রেজিস্ট্রেশন করা হয়। মাঠের উন্নয়ন কাজ আমরা এলাকাবাসী করব।

ডিএসসিসির অঞ্চল-৬ আঞ্চলিক কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. পারভেজ রানা যুগান্তরকে বলেন, ডিএসসিসির উদ্যোগে আল হেলাল মাঠটির কার্যাদেশ জারি হলেও কতিপয় এলাকাবাসীর বাধায় তা আর হচ্ছে না। অথচ মাঠটি খাস খতিয়ানের অন্তর্ভুক্ত, যা ঢাকা জেলা প্রশাসকের অধীনে। এ মাঠের উন্নয়ন কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি। ওই সময় বালু ভরাটের কাজ করে ডিএসসিসি। পরবর্তীতে মাঠের চারদিকে প্রাচীর, ওয়াকওয়ে, প্রধান ফটক, লাইটিং, মাঠের ঘাস লাগানো ও বাচ্চাদের খেলাধুলার রাইড, ক্রিক্রেট পিচ স্থাপনের জন্য গত বছর ১৮ জুলাই কার্যাদেশও দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে সরকারি খাস ১ নং খতিয়ানের জায়গা হিসাবে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে মৌখিক অনুমতি থাকলেও মানছে না এলাকাবাসী। ডিএসসিসির অঞ্চল ৬ ও ৭-আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মো. সুজা উদ্দৌলা যুগান্তরকে বলেন, কতিপয় বাসিন্দার বাধায় বন্ধ করা হয়েছে আল হেলাল মাঠের উন্নয়ন কাজ। এ বিষয়ে ডিএসসিসি কয়েক দফায় এলাকাবাসীর সঙ্গে বৈঠক করেও কোনো লাভ হয়নি। সর্বশেষ নগরভবনে এ বিষয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসকের মনোনীত প্রতিনিধি ও ডিএসসিসির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ এলাকাবাসীর বৈঠকেও বিষয়টি সমাধান করা যায়নি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম