Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

পরিসংখ্যান সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের খসড়া প্রতিবেদন

তথ্যের গরমিল, হস্তক্ষেপ বন্ধের সুপারিশ

পরিসংখ্যান ব্যুরোর নাম ও ডিজির পদবি পরিবর্তন করতে হবে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ মেনে ‘স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন’ গঠনের সুপারিশ দেয়নি পরিসংখ্যান সংক্রান্ত টাস্কফোর্স। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর নাম বদলে ‘স্ট্যাটিস্টিকস বাংলাদেশ (স্ট্যাটবিডি)’ এবং প্রতিষ্ঠানপ্রধানের (বর্তমান ডিজি) পদ পরিবর্তন করে চিফ স্ট্যাটিসটিশিয়ান করাসহ অনেক সুপারিশ করা হয়। এতে একটি উপদেষ্টা কাউন্সিল গঠনের কথাও বলা হয়।

সোমবার পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের কাছে জমা দেওয়া খসড়া প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করে টাস্কফোর্স। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা উপদেষ্টার সম্মেলন কক্ষে আলোচনার পর খসড়াটি জমা দেন টাস্কফোর্সের প্রধান ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে অন্য সদস্যরা।

প্রতিবেদন পাওয়ার পর ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা পরিসংখ্যার ব্যুরোকে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করতে কাজ করছি। সব তথ্য মুক্ত করে দেওয়া হবে। জিডিপি, মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন তথ্য সরকারি অনুমোদন ছাড়াই পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশ করতে পারবে। সেই সঙ্গে মাঝে মাঝে স্টেকহোল্ডারদের ডেকে এসব তথ্য কীভাবে তৈরি করা হয়, তা জানানো হবে। তিনি বলেন, স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন আছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনও আছে। কিন্তু সেগুলো কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন গঠনের চেয়ে এর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করা জরুরি।

প্রতিবেদনে একটি কাউন্সিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। এর সদস্য সংখ্যা হবে ৭ জন। এই কাউন্সিল পরিসংখ্যানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। ব্যয় নিরীক্ষা তদারকি করবে। পাশাপাশি পরিসংখ্যান ব্যুরোতে চিফ স্ট্যাটিসটিশিয়ানের নিয়োগসহ ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়োগের বিষয়টি দেখবে। এটির নেতৃত্বে থাকবেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা। প্রতিবেদনের খসড়ায় বলা হয়েছে, তথ্যের গরমিল এবং যে কোনো তথ্য প্রকাশে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হবে। এজন্য পরিসংখ্যান আইন-২০১৩ সংশোধন করতে হবে। সুপারিশে দীর্ঘস্থায়ী কর্মী নিয়োগের অপব্যবহার ও দুর্বলতা দূর করতে সাংগঠনিক কর্তৃপক্ষকে ১৬টি শাখায় সম্প্রসারণ এবং ৪৩৭টি নতুন উপজেলা স্তরের পদ তৈরির সুপারিশ করা হয়। যাতে কার্যক্রমে স্থানীয় উপস্থিতি বৃদ্ধি পায় এবং ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিভাজন এবং দীর্ঘদিনের অসন্তোষ দূর করতে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের ক্যাডারভুক্ত করা যায়। এছাড়া পরিসংখ্যানবিদদের জন্য একক ও পেশাদার ক্যারিয়ারের পুল তৈরি করা হবে। বিবিএস-এর স্বায়ত্তশাসনের জন্য বাজেটে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এছাড়া চলমান কার্যক্রম সচল রাখতে এখনই ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রকল্প সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে গুরুত্বপূর্ণ জরিপগুলো রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের লক্ষ্যে একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে।

টাস্কফোর্সের প্রধান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, আপনারা একমাত্রিক প্রশ্ন করছেন যে, স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন হবে কি না? আমরা বিবিএসকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করার সুপারিশ করেছি। প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ দেওয়া হয়েছে, এগুলো বাস্তবায়ন করা হলে প্রাতিষ্ঠানিক অনেক সংস্কার হবে। পরিসংখ্যানের জন্য একটি ট্রেনিং একাডেমি করার সুপারিশ করা হয়েছে। এটির প্রধানের নিয়োগ কী প্রক্রিয়ায় হবে, তারও সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। একটি উপদেষ্টা কাউন্সিল গঠনের সুপারিশ রয়েছে। স্বাধীনভাবে পরিসংখ্যান তৈরি, বিশ্লেষণ ও প্রকাশের বিষয়ে অনেক সুপারিশ রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে পরিসংখ্যান ব্যুরোতে ব্যাপক সংস্কার সম্ভব।

এর আগে সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রশাসনিক সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসাবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) একটি স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশনে রূপান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

গত ১৬ জুন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সহজে ও আশু বাস্তবায়নযোগ্য হিসাবে ৮টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার উদ্যোগের মধ্যে স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশনকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে কমিশন বাস্তবায়নের নির্দেশনা সংক্রান্ত চিঠি দেওয়া হয় পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে। সেই চিঠি পাওয়ার প্রায় এক মাস পর এ সংস্কারের আইনি কাঠামো তৈরির দায়িত্ব দিয়ে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) একটি চিঠি দেয়।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম