Logo
Logo
×

নগর-মহানগর

স্টেশনগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি

মৃত্যুঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের

মারা গেলেন টঙ্গীতে অগ্নিদগ্ধ শামীম * ১১ বছরে আগুন নেভানোর সময় প্রাণ হারান ২৪ কর্মী

ইমন রহমান

ইমন রহমান

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

মৃত্যুঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের

দেশের যে কোনো প্রান্তে অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ শোনা মাত্র ছুটে যান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েন আগুন নেভাতে। চেষ্টা করেন জানমাল রক্ষার। কিন্তু স্টেশনগুলোতে অগ্নিনির্বাপণে আধুনিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি থাকায় মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে তাদের কাজ করতে হয়। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের জন্য কেনা পিপি মানসম্মত না হওয়ায় তা জীবন রক্ষায় খুব একটা কাজে আসছে না। এহেন পরিস্থিতি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার নামান্তর। কিসের আগুন, তীব্রতা কতটুকু-বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা নির্ণয়ও করা হচ্ছে না। ফলে মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রাণ দিচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। অনেকে আহত বা দগ্ধ হয়ে ধুঁকে ধুঁকে জীবন পার করছেন। যার সর্বশেষ শিকার হলেন ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদ।

সোমবার গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক সাহারা মার্কেটে কেমিক্যাল গুদামে আগুন নেভাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন তিনি। এ ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক জান্নাতুল নাইম, ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদ, নূরুল হুদা ও জয় হাসান। এদের মধ্যে নূরুল হুদার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর সূত্র জানায়, গত ১১ বছরে (২০১৫ থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) আগুন নেভানোর সময় ফায়ার সার্ভিসের ২৪ জন কর্মী নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয় অগ্নিকাণ্ড স্থলের বিস্ফোরণ থেকে। এ সময়ে বিস্ফোরণে আহত হন ৩৮৬ কর্মী। বিস্ফোরণে নিহতরা হলেন-মিঠু দেওয়ান, এমরান হোসেন, রানা মিয়া, আলাউদ্দিন, মনিরুজ্জামান, শফিউল ইসলাম, শাকিল তরফদার, গাউসুল আজম, নিপন চাকমা, রমজানুল ইসলাম, সালাউদ্দিন কাদের চৌ, রবিউল ইসলাম, ফরিদুজ্জামান ও শামীম আহমেদ।

সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয় ২০২২ সালের ৫ জুন। এদিন চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ডিপোতে ‘হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড’ নামের বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক ছিল। ওই বিস্ফোরণের আগুন নেভাতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৩ কর্মী নিহত হন।

ফায়ার সার্ভিসে এ মুহূর্তে কাজ করছেন ১৪ হাজার ৫৭০ জন। আর সারা দেশে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন রয়েছে ৫৩৭টি। ঝুঁকিপূর্ণ আগুন বিশেষ করে কেমিক্যাল গুদামের আগুন নেভাতে এসব স্টেশনে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম নেই। কেমিক্যালের মতো ঝুঁকিপূর্ণ আগুন নেভাতে বেশি প্রয়োজন অটোমেটিক ফায়ার ফাইটিং রোবট। কিন্তু দেশে বিগত সময়ে মাত্র দুটি রোবট ছিল। দুই মাস আগে আরও পাঁচটি কেনা হয়েছে। তবে এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। ফায়ার ফাইটার কর্মীরা বলছেন, উন্নত বিশ্বে অগ্নিকাণ্ডের স্থলে গিয়ে প্রথমেই গ্যাস ডিটেক্টর, কেমিক্যাল ডিটেক্টর ব্যহার করে নিশ্চিত হয় আগুনটি কোন ধরনের। কিন্তু আমাদের দেশে মাত্র ১৫ থেকে ২০টি স্টেশনে এসব ডিটেক্টর রয়েছে।

তারা আরও বলেন, কেমিক্যালের আগুনের ক্ষেত্রে সংকট হলো-কেমিক্যাল যেভাবে স্টোর করা দরকার সেভাবে করা হয় না। ফলে সহজেই দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া ফায়ার ফাইটারদের পিপি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক কর্মী। তারা বলেন, কর্মীদের ব্যবহৃত একটি পিপি ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ ডিগ্রি তাপমাত্রা সহ্য করার ক্ষমতা থাকার কথা। কিন্তু গাজীপুরের অগ্নিকাণ্ডে সেই পিপি ১০০ ভাগ পুড়ে গেছে। এর অর্থ পিপিতে ভেজাল আছে। সঠিক মানের পিপি কেনা হয়নি।

এসব বিষয়ে জানতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

সংস্থাটির মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার যুগান্তরকে বলেন, কেমিক্যালের মতো বিশেষ ধরনের আগুন আগে কম ছিল। তবে এখন বাড়ছে। তাই ইকুইপমেন্ট (যন্ত্রপাতি) বাড়ানোর চেষ্টা করছি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম